অশ্লীল ভিডিও’র ফাঁদে ব্যবসায়ী

অপরাধ আইন ও আদালত

পাপিয়ার পাপাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক : শামীমা নূর পাপিয়াকে আমি চিনতামও না। এক অনুষ্ঠানে সাইফুল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে পাপিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয়। অনুষ্ঠান শেষে পাপিয়া আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে কম বয়সী ক’জন সুন্দরী তরুণীকে আমার সামনে নিয়ে আসে। এরপর জোর করে তাদের সঙ্গে আমার অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে। সেই ছবি দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়। মান-সম্মানের ভয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা দেয়ার পরও রেহাই মেলেনি। এরপর আমাকে বাড়ির ছাদে তিনদিন আটকে রাখে। একপর্যায়ে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা দেয়ার পর আমাকে ছাড়ে পাপিয়া গং।
এই কাজ শুধু যে আমার সঙ্গেই হয়েছে এমন নয়। সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে ছবি দিয়ে ব্লাকমেইল ছিল পাপিয়ার ফাঁদ। এজন্য নরসিংদীতে একটি বাহিনীই চালায় পাপিয়া-সুমন দম্পতি। জোরপূর্বক ছবি তুলে ব্যবসায়ীদের ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় তাদের মূল উদ্দেশ্য। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর পাপিয়া-সুমন দম্পতির প্রতারণার শিকার মেয়েরাও অভিযোগ করেছেন। এরই মধ্যে এমনই অভিযোগ করেছেন ঢাকার এক ব্যবসায়ী।
ঢাকা সিকিউরিটি সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তপন তালুকদার টুকু পাপিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে ডিএমপি’র বিমানবন্দর থানায় গিয়ে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া প্রতারণার ঘটনা এভাবে তুলে ধরেন।
ওই ব্যবসায়ী জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে নরসিংদীতে একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করি। সেখানে সাইফুল নামের একজনের মাধ্যমে পাপিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয়। অনুষ্ঠান শেষে পাপিয়ার বাড়িতে যাই। ওই রাতে সুন্দরী ক’জন তরুণীর সঙ্গে আমার অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে পাপিয়া। আমি ফিরতে চাইলে পাপিয়ার স্বামী বাধা দেয়। আটকে দিয়ে ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে ব্লাকমেইল শুরু করে। ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে সম্মানহানি ও পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে নগদ ১০ লাখ টাকা দাবি করে। নগদে ২০ হাজার টাকা দিয়েই সে রাতে রেহাই মেলেনি। আমাকে আটকে রাখা হয় প্রায় তিনদিন। এরপর সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে দিলে আমাকে ছাড়ে ওরা।
তিনি বলেন, পাপিয়ার গ্রেফতারের খবর শুনে আমি বিমানবন্দর থানায় যাই, ওসিকে ঘটনা খুলে বলি। থানাতেই ওসি পাপিয়ার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ করান। ওসির রুমে আমাকে দেখে পাপিয়া হাত জোর করে ক্ষমা চান। অভিযোগ না করতে অনুরোধ জানান। টাকা ফেরত দেবার কথাও জানায়। বুধবার রাতে ফের থানায় গিয়ে ওসিকে বলি, আমার টাকা না দিলে আমি পাপিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করব। তখন ওসি বলেন, আপনি মামলা দিলে নরসিংদীতে দিতে হবে। কারণ আপনার সঙ্গে ঘটনাটি সেখানে ঘটেছে। পরে ওসির রুমে পাপিয়ার স্বামী সুমনকে ডাকা হলে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, আপনার টাকা দেব না, যা করার করেন। আমাদের নামে আপনি কী মামলা দেবেন? প্রতারণার মামলায় বড়জোর দুই মাসের জেল খাটমু।
টুকু আরও বলেন, পাপিয়া-সুমন দম্পতি শুধু যে আমার সঙ্গেই এমন করেছে তা নয়, খোঁজ করলে আরও অনেক ভুক্তভোগী মিলবে। প্রয়োজনে আমি আদালতে যাব। পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করব। ওদের শাস্তি চাই।
এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানার ওসি বি এম ফরমান আলী বলেন, একজন ব্যবসায়ী থানায় মামলা করতে এসেছিলেন পাপিয়া-সুমন দম্পতির বিরুদ্ধে। সময় ও স্থানসহ ঘটনার বিবরণ শুনে এবং পাপিয়া ও তার স্বামীকে মুখোমুখি করে বিষয়টি বুঝতে পারি ঘটনা সত্য। তবে তা ঢাকা নয় নরসিংদী থানার আওতায়। তাই ওই ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে নরসিংদীতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি অর্থপাচার, বিদেশি জাল মুদ্রা সংরক্ষণ ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে র‌্যাব-১ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে পাপিয়া, তার স্বামী ও দুই সহযোগীকে। পরে তাদের নিয়ে ফার্মগেটের বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ৫৮ লাখ টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও পিস্তল, গুলি, মদ উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি এবং শেরেবাংলা নগর থানায় দুটি মামলা করে র‌্যাব।
তিন মামলায় পাপিয়াসহ চারজন ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। মামলাটি এখন ডিবিতে রয়েছে। এছাড়া পাপিয়াসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে র‌্যাব।
গ্রেফতারের পর যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়ার সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, তার সম্পদের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি কাদের সহায়তায় এসব সম্পদ অর্জন করেছেন, তাও খতিয়ে দেখা হবে। তার সঙ্গে যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেছেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে যেকেনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগ পেলে সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখে জড়িত প্রমাণ পেলে পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সর্বশেষ শুক্রবার আশুলিয়ায় একটি মাদরাসার ভবন উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পাপিয়ার সঙ্গে যারা অপরাধ করেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। যারাই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *