নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্রামীণফোনের ফ্রি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, গ্রামীণফোন একাডেমি এর মাধ্যমে ‘ফ্রিল্যান্সিং ফ্যাক্টরি’ চালু করেছে অপারেটরটি। এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং-এ ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। চাকরির বাজারের ঘাটতি পূরণ, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উন্মোচনসহ নতুন প্রজন্মকে দক্ষ করে তোলাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা হবে।
ঢাকার জিপি হাউজে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘ফ্রিল্যান্সিং ফ্যাক্টরি’ উদ্যোগের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বেধনী অনুষ্ঠানে একটি ওয়ার্কশপের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের প্রকল্পের কাঠামোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন মেন্টররা। তারা এই উদ্যোগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতার জন্য এই প্রকল্প কীভাবে সহায়ক হবে তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করেন প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা মেন্টররা।এই প্রোগ্রামে দুটি আলাদা ব্যাচে মোট ৬৪টি ইন্টার্যাক্টিভ অনলাইন ক্লাস অন্তর্ভুক্ত; যা ইউএক্স/ইউআই ডিজাইন ও ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তিন মাসের মধ্যে ১০০ ডলার আয় এবং আট মাসের মধ্যে ১০০০ ডলার আয় করতে সক্ষম করে তোলাই মেন্টর-নেতৃত্বাধীন এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য।
প্রতি বছর বাংলাদেশের চাকরির বাজারে বিপুল সংখ্যক তরুণ প্রবেশ করে, যার ফলে কর্মসংস্থানের চাহিদা প্রচুর বেড়ে যায়; কিন্তু সেই তুলনায় সুযোগ খুবই সীমিত। অন্যদিকে, বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে লক্ষ লক্ষ কাজের সুযোগ রয়েছে যা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বরাদ্দ। আর এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতেই গ্রামীণফোন একাডেমি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা শেখাচ্ছে। এর ফলে তারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে পারবে এবং আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে তার ব্যক্তিগত প্রত্যাশার কথা জানান। তিনি মনোযোগ সহকারে অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলো শোনেন, যেখানে বরগুনার আমতলী থেকে আসা একজন অংশগ্রহণকারী এবং শ্রবণ সমস্যায় ভোগা বি.এসসি ইঞ্জিনিয়ারের মতো অংশগ্রহণকারীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশার কথা উঠে আসে। তাদের এই গল্পগুলো আজমানকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। গল্পগুলো তরুণ প্রজন্মের দৃঢ়তা এবং নতুন সুযোগের প্রতি তাদের সংকল্পকে তুলে ধরে। আজমান ‘ফ্রিল্যান্সিং ফ্যাক্টরি’-এর মতো উদ্যোগের গভীর প্রভাব তুলে ধরেন, যা তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং দেশের ফ্রিল্যান্সিং সম্প্রদায়কে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।
গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হ্যান্স মার্টিন হেনরিক্সন (সিসিএও) শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিদ্যমান অসংখ্য সুযোগের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের ৪০ শতাংশই নারী এবং ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ঢাকার বাইরের, যা একে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। এই বৈচিত্র্য শুধু শিক্ষার পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে না, বরং অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে। এটি ফ্রিল্যান্সিং জগতে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রামীণফোনের চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার (সিএইচআরও) সৈয়দা তাহিয়া হোসেন অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য দেন। তিনি তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের সুযোগগুলো খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি উল্লেখ করেন, যে প্রতিটি নতুন দক্ষতা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে অর্থবহ অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করতে পারে।
প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী জিপি একাডেমির ফেসবুক গ্রুপ ও লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে যুক্ত হয়। এর মধ্য থেকে ৬০০ জনেরে বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেন এবং মেন্টরদের নেওয়া যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকারের পর ১০৬ জন শিক্ষার্থীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়।