নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ডিজি কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম।
নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি বিলাস নতুন কিছু নয়। সরকারি খরচে তথা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা গাড়ি কর্মক্ষেত্রের চেয়ে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কাজে বেশি ব্যবহার করার অপসংস্কৃতি বহুবছর ধরেই চলছে। একে সরকারি কর্মকর্তাদের ‘গাড়ি বিলাস’ বলে অভিহিত করেছেন পর্যবেক্ষকরা। দেশে এখন চরম অর্থনৈতিক সংকট চলছে।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। দুবেলা খাবার সংস্থান করতে তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। অন্যদিকে, জনগণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহার করে সরকারি কর্মকর্তারা রাজার হালে চলছে। এক সমীক্ষায় জানা যায়, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পে যেসব গাড়ি কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেলেও সেগুলোর বেশিরভাগই ফেরত দেয় না।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে সরকারি পরিবহন পুলে গাড়ি জমা দিতে হয়। গত চার অর্থবছরে ১২২৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এসব প্রকল্পে কমপক্ষে ২০ হাজার গাড়ি ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ জমা পড়েছে মাত্র ১৩৮টি। বাকি গাড়িগুলো এখন অবৈধভাবে চলছে।
এতে রাষ্ট্রীয় অর্থে জ্বালানি ও চালকসহ মেইনটেনেন্স খরচে ব্যয় হচ্ছে কয়েকশ’ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই এসব গাড়ি ব্যবহার করছেন। প্রকল্পের গাড়ি জমা না দেয়ায় গাড়ি সংকটে নতুন গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যা সংশ্লিষ্ট খাতে আর্থিক সংকট সৃষ্টি করছে।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকার বহু আগে থেকেই কৃচ্ছ্রসাধন প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে। বিশেষ করে সরকারি অফিস-আদালতে বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয়সংকোচন নীতি অবলম্বন করছে। অথচ সরকারি কর্মকর্তারা এসবের তেমন তোয়াক্কা করছে না। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তারা যেমন খুশি তেমন আচরণ করছেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি ব্যবহার সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা:
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং আওতাধীন দফতর ও সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রাধিকার বহির্ভূত গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করার অনুরোধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে আজ সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) এ অনুরোধ করা হয়। পত্রে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের বেশ কিছু কর্মচরী প্রচলিত বিধি ও প্রাধিকার বহির্ভূতভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন।
এমনকি কোনও কোনও মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যৌক্তিক কোনও কারণ ছাড়াই বিভিন্ন দফতর, অধিদফতর, সংস্থা, ব্যাংক-বীমা, কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান থেকে অধিযাচন করে (চেয়ে) গাড়ি আনা হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা- ২০২০-এর আওতায় গাড়ির ঋণ সুবিধাপ্রাপ্ত কোনও কোনও কর্মকর্তা গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ সমুদয় অর্থ (৫০ হাজার টাকা) গ্রহণ করার পরও অনৈতিক ও বিধি বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ব্যবহার করছেন। অথচ ওই নীতিমালার ১৭ অনুচ্ছেদে এ ধরনের অনিয়মের বিষয়টি বন্ধ করার পাশাপাশি সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মচারীর প্রাধিকার বহির্ভূত গাড়ি ব্যবহারের এ ধরনের প্রবণতার ফলে একদিকে জনপ্রশাসনে বিশঙ্খলা ও আর্থিক অপচয়ের কারণ ঘটছে। অন্যদিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নৈতিকতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং সমাজে তাদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এতে সরকারের দায়িত্ব সচেতনতা সম্পর্কেও জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ ধারণা তৈরি হচ্ছে। এসব কারণে সরকার এ বিষয়ে অনমনীয় নীতি গ্রহণ করেছে। এ অবস্থায়, সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং আওতাধীন দফতর ও সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের প্রাধিকার বহির্ভূত গাড়ি ব্যবহার কঠোরভাবে বারিত করার (বন্ধ করার) অনুরোধ করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই নির্দেশনা মানছেন না নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ডিজি কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম।
তিনি একাই ৩/৪ টি সরকারী গাড়ি ব্যবহার করছেন বিধিবহির্ভূতভাবে। যে গাড়িগুলো অপব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো হলো: ১. প্রাইভেট কার নং ঢাকা মেট্রো গ-৪৩-১৭৮৫ (মহাপরিচালকের ফ্লাগ কার)। ঢাকা মেট্রো গ-৩৫-৪৭৫৭, সেডান কার, মিৎসুবিসি লেন্সার। ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-০৪১১,পাজেরো স্পোর্টস, প্রকল্প পরিচালকের গাড়ি। ঢাকা মেট্রো চ-৫৬-৬১১৮, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মাইক্রোবাস। ঢাকা মেট্রো হ -৬২-৮৮০৬, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মোটর সাইকেল।
এসব সরকারী গাড়ি বছরের পর বছর অপব্যবহার করে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার জ¦ালানী তেল পোড়ানো হচ্ছে। অধিদপ্তরের ড্রাইভার ব্যবহার করা হচ্ছে। গাড়িগুলোর লগ বই পরীক্ষা করলেই এই অপরাধ প্রমাণিত হবে।
এ ছাড়া নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মোটরসাইকেল ও ড্রাইভার ডিজির জলসিড়ি ও ৬০ ফিট এলাকায় নিজস্ব ভবন নির্মাণে অবৈধ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়ি নির্মাণ চলমান-জলসিড়ি ও ৬০ফিট রোড, শেওড়াপাড়া,ঢাকা। এ ছাড়া কাওলায় ৫ কাঠা জমি এবং গাজীপুর অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরীর পাশে ২০ কাঠা জমির সন্ধান পাওয়াগেছে।
এ বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান চলছে। ডিজি কর্তৃক সরকারী গাড়ির অপব্যবহার করার বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবী জানিয়েছেন নৌপারবহন অধিদপ্তরের দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দ।