পুরনো রূপে ফিরেছে রাজধানীর সদরঘাট
নিজস্ব প্রতিবেদক : চারিদিকে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট। সেই পুরনো রূপে ফিরেছে ঢাকা নদীবন্দর। বেড়েছে অজ্ঞান, মলম পার্টির দৌরাত্ম্য এবং চুরি-ছিনতাই। চলছে হকারদের অত্যাচার। ঘাটে টোলের নামে অর্থ আদায়। এসব ঘটনা আতঙ্কে রয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী সাধারণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাট এলাকায় যাত্রীদের মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে টানাহেঁচড়া করা হয়। ঘাটের টোলের নামে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় ও প্রবাসী যাত্রী হয়রানি ছাড়াও ঘাট পুলিশের বিরুদ্ধে লঞ্চের কেবিনের যাত্রীদের হয়রানি করারও অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কোনো নবদম্পতি লঞ্চে উঠলেই প্রেমিক যুগল সন্দেহে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত রাস্তার অনেকাংশ দখল করে গাড়ির স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসানো হয়েছে। এতে বন্দরমুখী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছে।
ভুক্তভোগীরা বলেন, কয়েক মাস আগেও ঢাকা নদীবন্দরে প্রবেশের প্রধান সড়ক চিত্তরঞ্জন এভিনিউকে হকারমুক্ত করা ও কুলিদের দৌরাত্ম্য কমানো হয়েছিল।
এছাড়া যাত্রীদের ব্যাগ ও মালামালের জন্য টোল আদায় বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হলেও কয়েক মাস না যেতেই ভয়ঙ্করভাবে নতুন আতঙ্ক নিয়ে যাত্রীদের কাছে আবির্ভূত হয়েছে সদরঘাটের ঢাকা নদীবন্দর ব্যবহারকারী লঞ্চযাত্রীদের। আগের তুলনায় অবৈধ টোল আদায়ের হার বেড়েছে কয়েকগুণ।
ঘাট এলাকায় পুলিশি ধরপাকড় আতঙ্কে যাত্রী নিয়ে অনেক সিএনজি অটোরিকশার চালক যেতে চাচ্ছে না। তাদের দাবি, ঘাট এলাকায় গেলেই পুলিশ গাড়ি আটক করে ডিএমপি অধ্যাদেশে মামলা দিয়ে দিচ্ছে।
চলতি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বরিশালগামী পারাবত ১১ লঞ্চের কেবিন থেকে এক প্রবাসী নবদম্পতিকে প্রেমিক যুগল আখ্যা দিয়ে ভয় দেখিয়ে ৩ লাখ টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ঘাট এলাকা ঘিরে অন্তত ১০টি ছিনতাইকারী ও মলম পার্টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের সংখ্যাও বাড়ে। পার্কিং ইয়ার্ডে আসা প্রতিটি যানবাহন থেকেই টোল আদায় করছে ঘাট মলিকের লোকজন।
এছাড়া যাত্রীদের কাছে একটু বড় ব্যাগ দেখলেই চার-পাঁচজন নিজেদের ঘাটের কুলি পরিচয় দিয়ে টোলের নামে ১শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত দাবি করছে।
প্রতিটি মোটরসাইকেল লঞ্চে উঠানো ও নামানোর জন্য ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সামনেই যাত্রীদের এমন হয়রানি করা হয়।
রাস্তার পাশের ফুটপাত ও রাস্তার বেশকিছু অংশে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে হকাররা। এতে মানুষ চলাচল করতে না পেরে রিকশা ও গাড়ির ফাঁক গলে রাস্তা পার হচ্ছে।
সদরঘাট ফাঁড়ির এসআই পাবেল মিয়া বলেন, কোনো লঞ্চে দম্পতিকে আটকিয়ে অর্থ আদায় করা হয়নি। এছাড়া সিএনজি অটোরিকশা থেকে বিআইডব্লিউটিএ রিসিট দিয়ে টোল নেয়া হচ্ছে।
যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া এবং বিভিন্ন আইন অমান্য করায় প্রসিকিউশন মামলা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া হকার উচ্ছেদে আমরা প্রতিদিনই প্রসিকিউশন মামলা দিচ্ছি। তারপরও তারা বসছে। আমি আসার পর মলম পার্টির হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভার ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, সদরঘাট এলাকায় গেলেই থানা পুলিশ গাড়ি আটক করে ডিএমপি অধ্যাদেশে মামলা দিয়ে দিচ্ছে।
ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, টার্মিনাল অভ্যন্তরে হকার উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অফিসের রসিদ দিয়ে সিএনজি অটোরিকশাপ্রতি ১০ টাকা নেয়ার নির্দেশ রয়েছে। ২০-৩০ টাকা আদায় করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যাত্রী হয়রানি কমে আসছে। তবে গভীর রাতে আমাদের তদারকি কম থাকায় হয়রানি হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
