ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে জাল দলিল সম্পাদন করায় সাব-রেজিস্ট্রারসহ ৯ জনের নামে মামলা

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

আলফাডাঙ্গার তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার তনু রায়।


বিজ্ঞাপন

 

ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে জাল বিআরএস পর্চা দেখিয়ে ২০১৫ সালে দলিল সম্পাদন করায় ওই কার্যালয়ের তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার, দলিল লেখক, দাতা-গ্রহীতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।


বিজ্ঞাপন

গতকাল সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরে ওই কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার ৯ জনকে আসামি হলেন, আলফাডাঙ্গার তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার তনু রায় (৩৮), দলিল দাতা শুকুরন নেসা (৮৫), দলিল গ্রহীতা তিন বোন রাশিদা বেগম (৪৪), নুরজাহান বেগম (৫২) ও হাসি বেগম (৪২), দলিলের সাক্ষী মোহাম্মদ নূর ইসলাম (৪৮), বাচ্চু মিয়া (৪৫), শনাক্তকারী আবুল কালাম (৬৫) ও দলিল লেখক আলী হায়দার মিয়া (৫৫)।

তবে মারা যাওয়ায় এ মামলার আরেক আসামি দলিল দাতা শুকুরন নেসার স্বামী মোক্তার হোসেনকে আসামি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

দুদক সমন্বিত ফরিদপুর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিলজোয়ারিয়া গ্রামের টিওরপাড়া মৌজায় ডোবা শ্রেণির ৩৯ শতাংশ, বাড়ির ৩২ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং নাল জমির ২ দশমিক ৭১ শতাংশসহ মোট ৭৪ শতাংশ জমির মালিক ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. পান্নু বিশ্বাস ও তার চার ভাই। তবে জমি নিজের পৈত্রিক দাবি করেন ওই এলাকার বাসিন্দা মোক্তার হোসেন। এ নিয়ে পান্নু বিশ্বাস ও মোক্তার হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।

২০১৫ সালের চার অক্টোবর আলফাডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ওই ৭৪ শতাংশ জমি জাল বি.আর.এস. পর্চার মাধ্যমে স্ত্রী শুকুরন নেসা ও মোক্তারের তিন মেয়ে রাশিদা বেগম, নুর জাহান বেগম এবং হাসি বেগমের নামে দলিল করে দেন সাব-রেজিস্ট্রার তনু রায়। এ কাজে তাদের সাহায্য করেন, দলিল লেখক আবুল কালাম, দলিল শনাক্তকারী মো. বাচ্চু মিয়াসহ অন্যান্য আসামিরা।

দুদক জানায়, নিজের জমি বেহাত ও জাল কাগজে দলিল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন পর জানতে পারেন জমির মূল মালিক পান্নু বিশ্বাস ও তার চার ভাই।

পরে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে নালিশী দরখাস্ত করেন পান্নু বিশ্বাস। অভিযোগটি আমলে নিয়ে দুদককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরে দুদক ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য দুদক ঢাকা কার্যালয়ের অনুমতি চায়। গত ৮ অক্টোবর দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি দিলে সোমবার মামলা করা হয়।

এ মামলার আসামি ২০১৫ সালে আলফাডাঙ্গার সাব-রেজিস্টার তনু রায়। তনু রায় বর্তমানে রাজবাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কর্মরত রয়েছেন।

তনু রায় বলেন, এটি ছিল একটি হেবা দলিল। আমি দলিল করার যাবতীয় কাগজপত্র দেখে দলিল করে দিয়েছি। বিআরএস পর্চা জাল কিনা তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে দুদক আমাকে তলব করলে গত এপ্রিলে আমি দুদক ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এসে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। এর পর তো আমার নামে মামলা হওয়ার কথা নয়। এ মামলার খবর শুনে আমি বিস্মিত হয়েছি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দুদক ফরিদপুরের উপ-পরিচালক রতন কুমার দাস বলেন, আলফাডাঙ্গার সাব-রেজিস্টারসহ আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনিত অসদাচরণের অভিযোগসহ দণ্ডবিধির আরও পাঁচটি ধারায় মামলা হয়েছে। এ মামলার তদন্ত করে দুদক ফরিদপুরের বিশেষ জজ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *