সক্রিয় নব্য জেএমবি

অপরাধ আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাময়িক বিরতির পর আবারও সক্রিয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী নব্য জেএমবি। আবারও টার্গেট করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রামের দুই নম্বর গেট এলাকার একটি পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নব্য জেএমবির সদস্যরা এই বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। বিস্ফোরণে এক শিশু ও পুলিশ সদস্যসহ পাঁচ জন আহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের বিভিন্ন সময় ঢাকার পাঁচটি জায়গায় পুলিশ ভ্যান ও পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণ ও খুলনার একটি থানা প্রাঙ্গণে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে চট্টগ্রামের বোমা বিস্ফোরণের মিল রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা আলামতেরও মিল রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে হামলার সঙ্গে নব্য জেএমবির সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি ঢাকার জঙ্গিবিরোধী বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) কাজ করছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে এই ঘটনার নেপথ্যে কারা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থল থেকে একাধিক আলামত উদ্ধার করে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। নব্য জেএমবি সদস্যরাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নই। তবে বিস্ফোরণের ধরন দেখে আগের ঘটনার সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে।
গত বছরের ২৯ এপ্রিল ঢাকার গুলিস্তানের একটি ট্রাফিক বক্সের পাশে হাতে তৈরি বোমা বা আইইডি’র বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্য ও একজন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনার ঠিক ২৮ দিন পর ২৬ মে রাত পৌনে ৯টার দিকে মালিবাগের পলওয়েল ফিলিং স্টেশনের বিপরীতে ফ্লাইওভারের নিচে রাখা পুলিশের বিশেষ শাখার একটি পিক-আপ ভ্যানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। এতেও ট্রাফিক পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ ৩ জন আহত হন। এছাড়া ২৩ জুলাই রাতে রাজধানীর পল্টন ও খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের কাছে প্রায় একই সময়ে ফেলে রাখা বোমা উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি ঘটনার পরপরই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকায় পাঁচটি ঘটনায় পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত মূল হোতাসহ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অভিযান চালিয়ে একাধিক সহযোগীসহ ফরিদ উদ্দিন রুমি নামে নব্য জেএমবির মধ্যম সারির এক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের সময় রুমির ভাই জামাল উদ্দিন রফিক পালিয়ে যায়। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর শনির আখড়া থেকে এক সহযোগীসহ জামালকেও গ্রেফতার করা হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করা জামাল উদ্দিন রফিকের মাধ্যমে নব্য জেএমবির নতুন একটি সেল সংগঠিত হয়েছিল। জামাল নিজেই ফতুল্লার আস্তানায় বোমা তৈরি করে পুলিশকে টার্গেট করে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এমনকি সে নিজের অভিজ্ঞতা ও নানা জায়গা থেকে উপাদান নিয়ে বোমা তৈরির একটি ম্যানুয়ালও তৈরি করেছিল। এটিই অন্যান্য জঙ্গির কাছে সে ছড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে আইএসপন্থী নব্য জেএমবি কিছুটা কোণঠাসা হলেও একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। ছোট ছোট সেলের মাধ্যমে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি তাদের সঙ্গে সিরিয়ায় অবস্থানকারী কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগের কিছু তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই সেলগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে আবু মোহাম্মদ আল বাঙ্গালী। সে বর্তমানে নব্য জেএমবির আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। প্রাথমিকভাবে এটি জঙ্গিদের কাজ বলে মনে হলেও এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত থাকা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলছেন, এখন সদস্য সংগ্রহে জঙ্গিরা অনলাইনে ব্যাপক কার্যক্রম চালাচ্ছে। সিরিয়া থেকে আইএসের পতনের পর এই ধারা কমে এসেছিল। কিন্তু আইএস আবারও ফেরার সঙ্গে সঙ্গে দেশেও জঙ্গিরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্যই মাঝে মধ্যে বোমা হামলা বা বিস্ফোরণের মাধ্যমে তাদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। একটু সুযোগ পেলেই জঙ্গিরা বড় ধরনের হামলা করে বসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *