সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে দিনদিন বেড়েই চলেছে চোরাচালান। আর এই চোরাচালান করতে গিয়ে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। কয়লা ও পাথর পাচাঁর করতে গিয়ে গত ৪দিনে ২জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাচাঁরকৃত চিনি ও অটো রিক্সাসহ ২জনকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে অবৈধ মালামালসহ কাউকে আটক করার খবর পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- আজ বৃস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ভোর থেকে চাঁনপুর সীমান্তের নয়াছড়া, রাজাই, গারোছড়া ও রজনী লাইন এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী জহির মিয়া, জামাল মিয়া, হারুন মিয়া, নজরুল মিয়া, রুসমত, নজির মিয়াগং ১৭টি মোটর সাইকেলের করে প্রায় ২শ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে টেকেরঘাট সীমান্তের জয়বাংলা বাজার সংলগ্ন কাঠের ব্রিজ পাশে, তোতা মিয়ার বিল্ডিং এর পাশে, শাহ পরানের বাড়িতে, মিলন মিয়া, আক্কল আলী, ওসমান ও হাকিম এর জায়গায় নিয়ে মজুত করে।
একই সময়ে টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা, পুলিশ ক্যাম্পের পিছন দিয়ে ও নীলাদ্রী লেক পাড় দিয়ে চোরাকারবারী তিতু মিয়া, শরীফ মিয়া, রাশিদ মিয়া, সাদ্দাম, আসাদুল, আতিক, রবিউলগং প্রায় ১শ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে নিলাদ্রী লেকপাড়ের পাশে অব¯ি’ত বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে মজুত করাসহ এই সীমান্তের বুরুঙ্গাছড়া এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী আমীর আলী, মহিবুর, তাজুল ইসলাম, সাইদুলগং ও নিলাদ্রী লেকপাড় এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী নাঈম, রাসেল, জুনায়েদ, মকবুল, শাকিলগং পৃথক ভাবে প্রায় ১শ মেঃটন চুনাপাথর পাচাঁর করেছে।
এদিকে গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাত ১টায় বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট এলাকার ইয়াবা কালামের বাড়ির সামনে চোরাকারবারী সেলিম মিয়া, রুবেল মিয়া ও হাবিবুর মিয়াগং ভারত থেকে প্রায় ১শ মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে নৌকা বোঝাই করে নিয়ে যায়। এরপর রাত ৩টায় মৃত হাসান আলী পরী এর বাড়ির সামনে চোরাকারবারী মানিক মিয়া, দিলশাদ ও শফিকুলগং পাচাঁরকৃত ২০হাজার পিছ বাঁশের ছিপ নৌকা বোঝাই করে।
তারপর আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ভোর ৫টায় পাশের চারাগাঁও সীমান্তের চুনখলার ব্রিজের কাছ দিয়ে বৈঠাখালী বেরী বাঁধ হয়ে মধ্যনগর নিয়ে যায়। আর পাচাঁরকৃত কয়লা বালিয়াঘাট ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত দুধেরআউটা গ্রামসহ পাশের তেলিগাঁও, বানিয়াগাঁও, জামালপুর ও বোড়াঘাট গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে নিয়ে মজুত করে। কিš‘ এসব অবৈধ মালামালসহ চোরাকারবারীদের আটকের জন্য পাচাঁরের সময় টহলে থাকা বিজিবির হাবিলদার নবী হোসেন কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে খবর পাওয়া যায়নি।
তবে গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকালে বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পাড়ে সাইফুল ইসলাম (৩০) নামের এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এই সীমান্তে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে এপর্যন্ত অর্ধশতাধিক লোক প্রাণ হারিয়েছে। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে চাঁনপুর সীমান্তের পাচাঁরকৃত ১হাজার কেজি পাচাঁরকৃত চিনি বোঝাই ২টি অটোরিক্সাসহ আলমগীর (২০) ও সুমন মিয়া (২২) নামের চোরাকাবারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে লাউড়গড় সীমান্তে ৭দিন পেরিয়ে গেলেও মৃত শ্রমিক শেখ ফরিদ (৩৫) এর লাশ ভারত থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই মৃত স্বামীর জন্য ৪ সন্তান নিয়ে দিনরাত হাকাকার করছে স্ত্রী তাসলিমা বেগম। গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত ২টায় লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদীর বারেকটিলা সংলগ্ন কৃষ্ণবাগানের কাছ দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারী ইব্রহিম মিয়া প্রতি বারকি নৌকা থেকে ৫শ কাটা করে চাঁদা নিয়ে প্রায় শতাধিক লোকজনকে ভারতের ভিতরে পাঠায় কয়লা ও পাথর আনার জন্য।
পরে ভারতীয় খাসিয়ারা অস্ত্র-সস্ত্র ও লাটিসুটা নিয়ে বারকি শ্রমিকদের তাড়া করলে বেশি ভাগ শ্রমিকরা সাতার কেটে ও যে যার মতো করে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও শেখ ফরিদ (৩৫) নামের এক শ্রমিককে খাসিয়ারা আটক করে ফেলে। পরে তারা শ্রমিক ফরিদকে কুপিয়ে হত্যা করে ভারতের ভিতরে নদীর তীরে ফেলে রাখে। তারপরও থেমে নেই সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারীরা।
বর্তমানে যাদুকাটা নদীতে লিটন মিয়া, তার শ্যালক মিজান মিয়া ও ইব্রাহিম মিয়া বিজিবির নাম ভাংগিয়ে নদীতে চাঁদাবাজি করছে। এছাড়া রফিকুল মিয়াগং সীমান্তের মনাইপাড় থেকে ঠেলা,ট্রলি ও পিকআপ দিয়ে বালি পাচাঁর করাসহ চোরাচালান মামলার আসামী জাহাঙ্গীর, নুরু মিয়া, সাবুল মিয়া, নজির মিয়াগং বিজিবিকে চেক দিয়ে ভারতে রসুন ও পানীয় লিচু ভারতে পাচাঁর করাসহ ভারত থেকে পাচাঁরকৃত মাদকদ্রব্য, ফুছকা, চিনি ও আপেলসহ বিভিন্ন মালামাল মোটর সাইকেল দিয়ে পরিবহণ করছে। তবে সোর্স পরিচয়ধারী চোরাকারবারীদেরকে গ্রেফতারেরজন্য চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
এব্যাপারে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার তাজুল ইসলাম বলেন- আমি এই সীমান্তে নতুন এসেছি,তবে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে এক শ্রমিক মারা যাওয়াসহ নানান তথ্য জানতে পেরেছি। এছাড়া রাতে কয়লা ও বাঁশ পাচাঁরের সময় হাবিলদার নবী হোসেন টহলে থাকার পরও কেন পদক্ষেপ নেয়নি তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চাঁনপুর ক্যাম্প কমান্ডার জাফর আহমেদ বলেন- সীমান্ত চোরাচালান বন্ধ করার জন্যই আমি এই ক্যাম্পে এসেছি। এব্যাপারে ক্যাম্পের সৈনিকদের সর্তক করা হয়েছে। শীগ্রই চোরাচালানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।