!! দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানায়, ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ঠিকাদার জি কে শামীম। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শামীম ও তার সহযোগীদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। দুদকের তৎকালীন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল কাজ শুরু করে। দলটির কাছে দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ-সংক্রান্ত নথিপত্র জমা পড়ে। জানা গেছে, অনুসন্ধান চলাকালে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঠিকাদার জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মামলা করেন। পরে ২৭ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শামীমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩ নভেম্বর থেকে জি কে শামীমকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দুদক। তার কী কী সম্পদ রয়েছে, ব্যবসা করতে গিয়ে কাদের আনুকূল্য পেয়েছেন, কারা তাকে বড় বড় কাজগুলো পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন, তা উদঘাটনের চেষ্টা শুরু হয়। জিজ্ঞাসাবাদে শামীমের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি যাদের নাম বলেছেন তাদের মধ্যে প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের নাম ছিল। এ ছাড়া এ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগও জমা পড়েছিল। এরপরই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়। দুদকের তথ্যমতে, ২০২০ সালে প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের স্বার্থে একই বছরের ১৩ জানুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবি নোটিস পাঠানো হয়। সংস্থাটির তৎকালীন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিসে বলা হয়, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদার জি কে শামীমসহ অন্য ব্যক্তিরা। এর মধ্য দিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ক্যাসিনোকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে শত শত কোটি টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আপনার (মোসলেহ উদ্দিন) বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা জরুরি। তাই আপনাকে ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য উপস্থানের জন্য বলা হলো।’ নোটিস পেয়ে মোসলেহ উদ্দিন দুদকে হাজির হন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় !!
নিজস্ব প্রতিবেদক : গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে দুর্নীতিবাজ এক প্রকৌশলীকে নিয়োগের জন্য জোর চেষ্টা-তদবির চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর মিরপুর, আজিমপুর এবং মতিঝিলের ফ্ল্যাট প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ থাকা মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে প্রধান প্রকৌশলী পদে বসাতে চেষ্টা করছে দুর্নীতিবাজ একটি চক্র। এ কাজ সমাধা করতে তারা ২০ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে নেমেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ চক্রটি তদবিরের মাধ্যমে গত ২৪ অক্টোবর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও সমন্বয়) পদ থেকে মোসলেহ উদ্দিনকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার কাজ সম্পন্ন করেছে। এখন তাকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার চেষ্টা চলছে। এ কাজে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিব সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ‘মিস্টার ফিফটিন পার্সেন্ট’ নামে পরিচিত। কারণ প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে তার বিরুদ্ধে এই হারে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকাকালে নিয়মবহির্ভূতভাবে সরকারি টাকা খরচ করে আলোচনায় আসেন তিনি। তার বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপের অভিযোগ ওঠে। সংসদীয় কমিটির তদন্তে মেলে অভিযোগের সত্যতাও। এরপর বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। কথিত যুবলীগ নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম চক্রের সদস্য হিসেবেও পরিচিতি আছে তার।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানায়, ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ঠিকাদার জি কে শামীম। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শামীম ও তার সহযোগীদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। দুদকের তৎকালীন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল কাজ শুরু করে। দলটির কাছে দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ-সংক্রান্ত নথিপত্র জমা পড়ে। জানা গেছে, অনুসন্ধান চলাকালে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর ঠিকাদার জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মামলা করেন। পরে ২৭ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শামীমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৩ নভেম্বর থেকে জি কে শামীমকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দুদক। তার কী কী সম্পদ রয়েছে, ব্যবসা করতে গিয়ে কাদের আনুকূল্য পেয়েছেন, কারা তাকে বড় বড় কাজগুলো পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন, তা উদঘাটনের চেষ্টা শুরু হয়। জিজ্ঞাসাবাদে শামীমের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি যাদের নাম বলেছেন তাদের মধ্যে প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের নাম ছিল। এ ছাড়া এ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগও জমা পড়েছিল। এরপরই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়।
দুদকের তথ্যমতে, ২০২০ সালে প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের স্বার্থে একই বছরের ১৩ জানুয়ারি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবি নোটিস পাঠানো হয়। সংস্থাটির তৎকালীন পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত নোটিসে বলা হয়, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদার জি কে শামীমসহ অন্য ব্যক্তিরা। এর মধ্য দিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া ক্যাসিনোকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে শত শত কোটি টাকা আয় করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আপনার (মোসলেহ উদ্দিন) বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা জরুরি। তাই আপনাকে ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য উপস্থানের জন্য বলা হলো।’ নোটিস পেয়ে মোসলেহ উদ্দিন দুদকে হাজির হন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়
সূত্র জানায়, ছাত্রজীবনে খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন। তার ভাই নাদিম আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২৫তম বিসিএসে যোগ দিয়ে পুলিশের এসপি হিসেবে র্যাব-৮ ও এসবিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা গেছে, বিসিএস ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ১৯৯৫ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন। উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে ফেনী ও ঢাকার শেরেবাংলা নগরে দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর শেরেবাংলা নগর ও দীর্ঘ সময় প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে সমন্বয় বিভাগে ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে চট্টগ্রাম জোনেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সব জায়গাতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর গণপূর্ত ঠিকাদার সমিতির পক্ষে সোহেল রানা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুদক প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন।একই দিন অভিযোগ দেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের পক্ষে মো. বদরুদ্দীন ওমর। অভিযোগে মোসলেহ উদ্দিনের ছাত্রজীবন, রাজনৈতিক পরিচয়, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সম্পদ অর্জনের তথ্য তুলে ধরা হয়। দুদক সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সংস্থাটি। অভিযোগসংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করছে সংস্থাটি।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, ঠিকাদার জি কে শামীমকে সহযোগিতা, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিদেশে অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ২০২০ সালে গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও মোসলেহ উদ্দিনসহ ১১ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি।
১৮, ১৯ ও ২৩ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গণপূর্তের প্রকৌশলী ও ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন তারা। এসব অভিযোগের কারণে মোসলেহ উদ্দিনকে গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার পরিবর্তনের পর বঞ্চিত দেখিয়ে কিছু প্রকৌশলী নেতাকে ম্যানেজ করে মোসলেহ উদ্দিনকে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদে বসানোর মিশনে নেমেছে একটি চক্র।
যদিও বিসিএস ১৫তম ব্যাচের গ্রেডেশন তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনি। এক নম্বরে থাকা প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মইনুল ইসলামকে ডিঙিয়ে এ পদ বাগাতে চাইছেন মোসলেহ উদ্দিন।
যত অভিযোগ : মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির টাকায় অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা ও নোয়াখালীর চাটখিলের দৌলতখা গ্রামে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে তার। তার স্ত্রী-সন্তানের নামেও রয়েছে বিপুল সম্পদ। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এসব অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।