ডেস্ক রিপোর্ট : চীনের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাবা বিস্তার করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বিশ্ব জুড়ে এতে মারা গেছে ৩১২৫ জন। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের ৭৬টি দেশ ও অঞ্চলের ৯০৯২৫ জন। অন্যদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪৮ হাজার জন।
শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখ-েই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ১৫১ এবং মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯৪৩ জনের। অপরদিকে চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে ইরানে।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমস জানায়, সোমবার দেশটির আরও ১২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মাত্র একদিন আগে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০২ জন। ফলে দেশটিতে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০১৫১ জনে গিয়ে দাঁড়ালো।
সোমবার চীনে করোনায় আরও ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানেই মারা গেছে ২৪ জন। এ নিয়ে সেখানে করোনায় সবমিলিয়ে ২৯৪৩ জন মারা গেলেন। গত কয়েকদিন ধরেই দেশটিতে করোনার ভয়াবহতা অনেক কমে এসেছে। তবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮১২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২৯ জন। ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫০১ এবং মারা গেছে ৬৬ জন। অপরদিকে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৩৬ এবং মারা গেছে ৫২ জন।
জাপানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২৭৫ জন এবং ৬ জন মারা গেছেন। অপরদিকে, ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯১ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
জার্মানিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০, স্পেনে ১১৯, সিঙ্গাপুরে ১০৮, কুয়েতে ৫৬, বাহরাইনে ৪৭, যুক্তরাজ্যে ৪০, মালয়েশিয়ায় ২৯, কানাডায় ২৭, সুইজারল্যান্ডে ২৪, ইরাকে ২১, আরব আমিরাতে ২১, নরওয়েতে ১৯, নেদারল্যান্ডে ১৮, ভিয়েতনামে ১৬, সুইডেনে ১৫ এবং অস্ট্রিয়ায় ১৪ জন।
অপরদিকে হংকংয়ে ১০০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ২ জন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৯১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের, থাইল্যান্ডে আক্রান্ত ৪৩ এবং মৃত্যু ১, তাইওয়ানে ৪১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ এবং মৃত্যু ১।
এদিকে, ম্যাকাউতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০, ইসরায়েলে ১০, লেবাননে ১০, বেলজিয়ামে ৮, ক্রোয়েশিয়ায় ৮, গ্রিসে ৭, ইকুয়েডরে ৬, ফিনল্যান্ডে ৬, ভারতে ৬, ওমানে ৬, রাশিয়ায় ৬, আলজেরিয়ায় ৫, মেক্সিকোতে ৫, পাকিস্তানে ৫, ডেনমার্কে ৪।
ফিলিপাইনে ৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। অপরদিকে আজারবাইজানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩, চেক প্রজাতন্ত্রে ৩, জর্জিয়ায় ৩, আইসল্যান্ডে ৩, কাতারে ৩, রোমানিয়ায় ৩, বেলারুসে ২, ব্রাজিলে ২, মিসরে ২, ইন্দোনেশিয়ায় ২, পর্তুগালে ২, আফগানিস্তানে ১, আন্দোরায় ১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
এছাড়া আর্মেনিয়ায় ১, কম্বোডিয়ায় ১, ডোমিনিকান রিপাবলিকে ১, এস্তোনিয়ায় ১, আয়ারল্যান্ডে ১, জর্ডানে ১, লিথুয়ানিয়ায় ১, লুক্সেমবার্গে ১, মোনাকোতে ১, মরক্কোতে ১, নেপালে ১, নিউজিল্যান্ডে ১, নাইজেরিয়ায় ১, উত্তর মেসিডোনিয়ায় ১, সান মারিনোতে ১, সৌদি আরবে ১, সেনেগালে ১, শ্রীলঙ্কায় ১ এবং তিউনিসিয়ায় ১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যেই চীন থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়া এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ।
পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম দশা চীনা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। শুধু চীন নয়, বিশ্ব জুড়ে বড় বড় গবেষকরা নেমে পড়েছেন নোভেল করোনা রুখে দেওয়ার ওষুধ তৈরিতে। কিন্তু এখনও এই ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক বা ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।
ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসকে বিশ্ববাসীর জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার মহাপরিচালক ইথিওপিয়ার টেডরস আধানম গেব্রিয়াসেস বলেছেন, এ ভাইরাসটি ‘যেকোনো সন্ত্রাসবাদী পদক্ষেপের চেয়েও শক্তিশালী’হতে পারে।