নিজস্ব প্রতিবেদক : সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রধান দায়িত্ব দেশের উন্নয়ন ও জনগণের সেবা নিশ্চিতের জন্য কাজ করা। কিন্তু সেই দায়িত্ব ভুলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা ব্যস্ত থাকেন অনিয়ম-দুর্নীতি, লুটপাট ও ক্ষমতার দাপটে পদোন্নতি বাগিয়ে নেওয়ার অসম প্রতিযোগিতায়! এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক এক মন্ত্রীর মদদপুষ্ট একটি সিন্ডিকেট। প্রভাব খাটিয়ে তারা অধিদপ্তর, জেলা ও থানা পর্যায়ে দায়িত্ব নিজেদের কবজায় রাখা, চুক্তিতে সমিতির নির্বাচন, নিয়োগ-বাণিজ্য, নিয়মবহির্ভূতভাবে পদ সৃষ্টি, ঘুষের বিনিময়ে পদোন্নতি, উন্নয়নের নামে সমিতির কোষাগারশূন্য, জাল সনদে চাকরি নেওয়াসহ বহুবিধ অপকর্ম করেও আছেন বহাল তবিয়তে। সবকিছু জেনেও হেলদোল নেই অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শরিফুল ইসলামের। সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধেও। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও নেওয়া হয় না কোনো ব্যবস্থা।
বরং অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অনেককে বছরে দুই থেকে তিনবার বদলি করে হয়রানি করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্টরাই ঢাকার ভেতরে পোস্টিংসহ সব সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েও সুফল মেলেনি।
৫ আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শুরু থেকেই সমবায় অধিদপ্তরে চলছে সিন্ডিকেটের অঘোষিত রাম- রাজত্ব! শরিফুল ইসলাম ডিজি হয়ে আসার পর সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো হোতাদের সঙ্গে খাতির জমিয়ে তাদের আরও অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন এবং নিজেও নিয়েছেন। এই লেনদেন জারি রাখতে সাবেক মন্ত্রীর মদদে ওই সিন্ডিকেটকে আরও শক্তিশালী করেছেন শরিফুল।
সমবায় অধিদপ্তরে ডিজির আশীর্বাদপুষ্ট এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত নিবন্ধক (প্রশাসন) হাফিজুল হায়দার চৌধুরী, উপনিবন্ধক (প্রশাসন) আতিকুল ইসলাম, যুগ্ম নিবন্ধক (প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ফাইন্যান্স) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম নিবন্ধক প্রশাসন রিক্তা দত্ত, ঢাকা বিভাগীয় সমবায় দপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক শেখ কামাল হোসেন, ঢাকা জেলা সমবায় অফিসার সাদ্দাম হোসেন; যিনি গোপালগঞ্জের ক্ষমতা দেখিয়ে ঢাকা ও গাজীপুর দুই জেলার দায়িত্ব পালন করেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাবলা দাশগুপ্ত ও তার ছোট ভাই সঞ্জয় দাশগুপ্ত, অফিস সহায়ক আমিনুল, নরসিংদী আঞ্চলিক সমবায় ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. আশরাফুল ইসলাম, চট্টগ্রামের জেলা সমবায় কর্মকর্তা মুরাদ আহমেদ, মেট্রো থানার অফিসার আলাউদ্দিন মোল্লা ও উপসহকারী নিবন্ধক আব্দুস সোবহান।
জানা গেছে , আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আঁতাত করেই সমবায় অধিদপ্তরের ডিজি বানান শরিফুল ইসলামকে। নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পরস্পর যোগসাজশে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন প্রভাবশালী এ দুই প্রতিমন্ত্রী। তাদের আস্থাভাজন হয়ে শরিফুল নিজে সুবিধা নিয়েছেন এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। শরিফুলের স্ত্রী (জেলা প্রশাসক) ও ভাই মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অবসরের পরও বড় ভাইকে (মো. ইদ্রিস আলী আইডি নং-৬০২৭) চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক বানিয়েছেন শরিফুল। বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সব সুযোগ-সুবিধা নিলেও আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন নিজেকে বঞ্চিত দাবি করে ভোল পাল্টে ডিজি পদে বহাল আছেন শরিফুল।
নিয়োগ-বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হাফিজ ও আতিকও আছেন স্বপদে। সরকার প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা খরচ করে ৫১১ জনকে নিয়োগের জন্য পরীক্ষার আয়োজন করলেও প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নিয়োগ-বাণিজ্যে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা, পরবর্তী সময়ে তদন্তে তা প্রমাণিতও হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ডিজি শরিফুল ও আতিক-হাফিজ সিন্ডিকেট গত এক বছরে ২৬৭ জনকে বদলি করেছে।
বাবলা দাশগুপ্তর অফিস সহায়ক পদোন্নতিতে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি প্রমাণিত হলেও ডিজি শরিফুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। অথচ সমবায় বদলি ও নিয়োগ-বাণিজ্যের হোতা হিসেবে সবার কাছেই পরিচিত বাবলা। তারপরও তাকে শাস্তি না দিয়ে উল্টো তার ভাই সঞ্জয় দাশগুপ্তকেও জাল সনদে চাকরি দিয়েছেন ডিজি শরিফুল। সঞ্জয় দাশগুপ্তর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল, সেটা তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের এক মন্ত্রীর সঙ্গে বাবলার সখ্যতা ছিলো।
এদিকে ডিজি মো. শরিফুল ইসলাম ও মন্ত্রণালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তার যোগসাজশে বসিয়েছেন এই ঘুষের বাজার এখনো চলছে। তার এই বদলি বাণিজ্য ‘ন্যায্যতা’ দিতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি তৈরি করে নিয়েছেন। এ ছাড়া সমবায় অধিদপ্তরের আওতায় সব অফিস সহকারীর পদোন্নতির একটি তালিকা তৈরি করেছেন আগের মতো টাকা হাতিয়ে নিয়ে টাকার তালিকা পুনর্বিন্যাসের জন্য। বদলির তালিকা করে সিন্ডিকেট চক্র ২ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত টাকা ঘুষ নিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। নতুন করে এই বদলি তালিকায় দু্ই শতাধিক ব্যক্তির নাম আনা হয়েছে। যাদের কাছ থেকে প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চট্টগ্রামের জেলা সমবায় কর্মকর্তা মুরাদ আহমেদের দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও সমবায়ের ডিজি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে স্বপদে বহাল রাখেন।
জানা গেছে , সমবায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বা উপসহকারী নিবন্ধকের কোনো পদ নেই। কিন্তু সংযুক্তিতে এই পদে প্রায় ৩৪ জন কর্মরত। একটি উপজেলা অফিসের অফিস প্রধানকে সংযুক্তি দিয়ে মাঠের কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন সমবায় কার্যালয়ে অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদ না থাকা সত্ত্বেও শুধু অর্থের বিনিময়ে তিনি সংযুক্তি দিয়েছেন। সমবায় অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখায় শাখা প্রধান পদে দুজন কর্মরত থাকা সত্ত্বেও সেখানে দুজন উপসহকারী নিবন্ধককে সংযুক্তি প্রদান করেছেন।
ক্লার্ক পদোন্নতির জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উপসচিব ড. অশোক কুমার বিশ্বাস ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আব্দুস সামাদ প্রধানকে তদন্ত করতে দেওয়া হয়। এই কমিটি ঘুষ-বাণিজ্যের প্রমাণ পায়। প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাবলা দাশগুপ্ত ও আমিনুল ইসলাম নামে অফিস সহায়ককে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ব্যাংক হিসাবে ঘুষের অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আশরাফুলের দুর্নীতি: নরসিংদী আঞ্চলিক সমবায় ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. আশরাফুল ইসলাম। নানা অপকর্মের কারণে সমবায়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে আশরাফুল ইসলাম পরিচিত। বিভিন্ন অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার এই চিত্র তুলে ধরে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলেও ডিজির সঙ্গে সখ্য থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। ডিজির সিন্ডিকেট চক্রের অন্যতম হোতা আশরাফুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে বদলি করা হয়। আশরাফুল নরসিংদী থাকাকালে ভুয়া ভোটার ও ক্ষমতার অপব্যবহার চুক্তিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন জিতিয়ে দেওয়া এবং নির্বাচনকালীন উন্নয়নের নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এসব বিষয়ে তার নামে অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় এবং দুদকে অভিযোগও জামা পড়েছে।
সমবায়ের জেলা পর্যায়ের আরেক কর্মকর্তা মো. সাদ্দাম হোসেন। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হওয়ায় এবং সাবেক আওয়ামীলীগের প্রেতাত্মা চিহ্নিত ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে সমবায় অঙ্গনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি জেলা সমবায় কার্যালয় (ঢাকা ও গাজীপুর) তার নিয়ন্ত্রণে রেখে দাপটের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাট করেছেন। কথিত আছে, অনিয়ম থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে ডিজিকে সব সময় টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে চলতেন।
বাবলা দাশগুপ্ত তার ছোট ভাই সঞ্জয় দাশগুপ্তকে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে সমবায় অধিদপ্তরের সরেজমিন তদন্তকারী পদে চাকরি দিয়েছেন। এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা, ফেনী মো. গাজী সালাউদ্দিনকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছরের জুলাই মাসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। তদন্তে সঞ্জয় দাশগুপ্তের শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তারপরও সঞ্জয় দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু তাকে নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম মো. মুরাদ আহমেদের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এর আগে সমবায় অধিদপ্তরের সমিতি ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা হলেও ডিজি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
সমবায় ভাবনার আলোকে সমবায় মডেল ভিলেজ স্থাপন নামক প্রকল্প পরিচালক ছিলেন যুগ্ম নিবন্ধক, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তাকে সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক (প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ফাইন্যান্স) পদে বসিয়েছেন বর্তমান নিবন্ধক ও মহাপরিচালক। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাটের বড় প্রকল্প একটি বাড়ি একটি খামার। এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে উপনিবন্ধক (প্রশাসন) মো. আতিকুল ইসলাম একটানা ৫ বছর কর্মরত ছিলেন।
অতিরিক্ত নিবন্ধক (প্রশাসন) হাফিজুল হায়দার চৌধুরীও সমবায় অধিদপ্তরের আর এক ব্যর্থ প্রকল্প ‘সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’-এর পরিচালক ছিলেন। তার সময়কালে প্রকল্পভুক্ত এলাকা খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা থেকে ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে; কিন্তু তিনি অতিরিক্ত নিবন্ধক (প্রশাসন) পদে বসে তা ধামাচাপা দেন। এসব কিছু জেনেও মো. শরিফুল ইসলাম কোনো ব্যবস্থা নেননি।
সমবায় সমিতির আড়ালে আইনুদ্দিন হায়দার ওয়াকফ স্টেটের কালসী এলাকায় ২০০৬ সালে ২০ একর জমি ১৯ কোটি টাকায় লিজ নেন। এখনো সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। লিজ নেওয়ার পরিকল্পনায় ছিল সমিতির তৎকালীন সভাপতি মুহাম্মাদ কবির মিয়া।
আইনুদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেসা ওয়াকফ স্টেট বাউনিয়া প্রজা কল্যাণ সমবায় সমিতি লি. ২০০১ সালের নভেম্বরে ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে নিবন্ধিত হয়। সমিতির উপ-আইনের ৪(১) ধারা অনুযায়ী সদস্যদের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি, পুঁজি গঠন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাসস্থান, আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি এবং ক্ষুদ্রঋণ বিনিয়োগ ও আদায়ের ব্যবস্থা করা; কিন্তু তার কিছুই হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের একটি রিট পিটিশন অনুযায়ী জানা যায়, এ জমির বিপক্ষে ধার্যকৃত মূল্য খুবই সামান্য। জমির লিজ প্রদানের ৬ ও ৮নং শর্ত ওয়াকফ অধ্যাদেশ-১৯৬২-এর পরিপন্থি এবং লিজ প্রক্রিয়া অবৈধ।
জানা গেছে , সমিতি আইন-২০১৩ মেনে এ সম্পর্কিত কোনো সদস্য রেজিস্ট্রার, বার্ষিক, সাধারণ সভা ও সমিতির কোনো কার্যক্রম নেই। তারপরও জেলা সমবায় কার্যালয় ঢাকা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সমবায় অধিদপ্তরের লাইসেন্সকে ভিত্তি করে এ জমি ভোগ দখল করে যাচ্ছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও প্রতারক চক্র। সর্বশেষ একটি গ্রুপকে এই সমিতির কমিটি গঠন করে দিয়ে প্রতারণার নতুন লাইসেন্স দেন সমবায় অধিদপ্তরের ডিজি মো. শরিফুল ইসলাম। সাবেক আওয়ামীলীগের প্রেতাত্মা চিহ্নিত যুবলীগের সদস্য মো. হিরন মিয়াকে দিয়ে এ কমিটি করার জন্য তৎকালীন জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে চাপ দেন। আইনসংগত না হওয়ায় জেলা সমবায় কর্মকর্তা সরকারি কর্মচারীদের দ্বারা অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি প্রদান করেন। এতে ডিজি ক্ষিপ্ত হন। সমিতির আইনগত কোনো ভিত্তি না থাকায় সরকারি কর্মচারীরা সমিতিটি অবসায়নে দেওয়ার সুপারিশ করেন। ফলে প্রতারক গ্রুপকে নির্বাচিত করে প্রতারণার লাইসেন্স প্রদানের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ডিজি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাহমান, সদস্য মো. ইব্রাহীম খলিলুল্লাহকে বান্দরবান ও পটুয়াখালী বদলি করেন। পরে অন্তর্বর্তী কমিটির রিপোর্ট ও রক্ষিত ডকুমেন্ট অনুযায়ী তৎকালীন জেলা সমবায় কর্মকর্তা সমিতিটি অবসায়নে প্রদান করলে তাকেও ঠাকুরগাঁওয়ে বদলি করা হয়। অবসায়ন কার্যক্রমের কিছু আইনগত পদ্ধতি থাকলেও তার তোয়াক্কা না করে নিয়োগকৃত অবসায়ককে দিয়ে দায়সারা রিপোর্ট দাখিল করে জেলা সমবায় কর্মকর্তা অযৌক্তিকভাবে অবসায়ন আদেশ প্রত্যাহার করেন। পরে ডিজির পছন্দের অসদস্য দিয়ে সমিতির অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করে দেন। অবসায়ন আদেশ প্রত্যাহারের পত্রে দেখা যায় অবসায়ক বলেছেন, সমিতিতে একাধিক পক্ষ বিদ্যমান এবং এর কোনো কার্যালয় বা কার্যক্রম নেই। এজিএম না করে, পাতানো নির্বাচন করে সমিতির কমিটি করা হয়, যা চলমান।
অফিস ও কমিটি না থাকা সত্ত্বেও বাউনিয়া প্রজা কল্যাণ সমবায় সমিতি নির্বাচন করতে নির্দেশনা দেয়; কিন্তু তা না মানায় তিন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তরে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম গণমাধ্যম কে বলেন, ফাইল না দেখে বলতে পারব না। বাউনিয়া সমিতির পুনর্বাসন করার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর উত্তরে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে জানা নেই। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫১১ জনকে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ও নিয়োগ বাণিজ্য করায় এ নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এর উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ, বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর পরীক্ষা হতে পারে। সঞ্জয় দাশগুপ্ত জাল সনদ দিয়ে সমবায় চাকরি করছে তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও চাকরিতে বহাল আছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, এসব ফাইল না দেখে বলতে পারব না।
এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এবং প্রমাণিত হওয়ায় পর চাকরিতে বহাল আছেন, এর উত্তরে শরিফুল ইসলাম বলেন, যারা বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত এবং একই জায়গায় ৭-৮ বছর ধরে আছে, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। এটাই তো একটা ব্যবস্থা।
সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক (প্রশাসন) আতিকুল ইসলাম গণমাধ্যম কে বলেন, কেউ চাইলে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে পারে। আমার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তদন্ত করে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে। আমি কোনো পদবাণিজ্য নিয়োগ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নই।