এবার যুব মহিলা লীগেও শুদ্ধি অভিযান!

রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়া যুব মহিলা লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই নেতার আলোচনা হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসেই এ সম্মেলন হতে পারে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী যুব মহিলা লীগে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, অনেকের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। কারা কী করছেন সে বিষয়ে তার কাছে অনেক প্রতিবেদন আসছে। এসব নেতাকে ছাড় দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় সূত্র এ খবর জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী ১১ মার্চ শেষ হতে যাচ্ছে যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ। এরইমধ্যে সংগঠনটির কয়েকজন নেতার বিতর্কিত কর্মকা- সামনে আসায় সংগঠনটিকে ঢেলে সাজাতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য যুব মহিলা লীগের শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলও দাবি করেছেন, তারাও সঠিক সময়েই সম্মেলন করতে চান।
দলীয় সূত্র জানায়, সেদিন গণভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতিতেই বিভিন্ন সংগঠনের সম্মেলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুব মহিলা লীগ, মহিলা লীগ, তাঁতি লীগসহ যেসব সংগঠনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে, সেগুলোর সম্মেলনের বিষয়ে প্রাথমিক কিছু নির্দেশনা শেখ হাসিনা সেদিনই দিয়েছেন। কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ যুব মহিলা লীগের নরসিংদী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর যুব মহিলা লীগের এক নেতাসহ আরও কয়েকজনের নানা কুকীর্তির কথা সামনে আসায় এ সম্মেলন দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর। তিনি কোনও ধরনের ছাড় দিতে নারাজ। দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে যারা অপকর্ম করবেন, তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে তার।
জানা যায়, দায়িত্বশীল নেতাদের নানা অপকর্মের অভিযোগের তীর এখন যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিকে। এসব ঘটনাকে তাদের ব্যর্থতা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কেননা, বিতর্কিত শামীমা নূর পাপিয়াকে নরসিংদী জেলার যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক করার পেছনে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের নেতা সাবিনা আক্তার তুহিনের ভূমিকা ছিল বলে আলোচনা হচ্ছে। এ কারণেই সংগঠনটির দ্রুত সম্মেলন দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনার বিষয়টি ভাবছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়। সভায় যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নতুন কমিটি গঠনের জন্য দলের সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন।
কবে সম্মেলন হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্চে মুজিববর্ষের কর্মসূচি আছে। আশা করি এপ্রিল নাগাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সংগঠনটির দুই নেত্রীর কার্যকলাপ বিতর্কিত হওয়ার কারণে যুব মহিলা লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মার্চে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক নিয়মেই যথাসময়ে সম্মেলন হবে, অন্য কোনও কারণে নয়। বিতর্কিত ওই দুই নেত্রীর কর্মকা-ের ভার যুব মহিলা লীগ বা শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর বর্তায় না বলেও দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বলেন, ‘কমিটির মেয়াদ একবারে শেষদিকে। আমরাও যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্মেলন করতে চাই। এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন ইতালি থেকে ফেরেন, সেদিন তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১১ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পান নাজমা আকতার ও অধ্যাপিকা অপু উকিল। এর আগে ২০০২ সালে নাজমা-অপু যুগলের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে যুব মহিলা লীগ। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ সংগঠনটির প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে নাজমাকে সভাপতি ও অপুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
সম্প্রতি অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নারীদের নিয়ে অনৈতিক কর্মকা-, জালনোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে যুব মহিলা লীগের নরসিংদী শাখার সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া গ্রেফতার হন। এ অবস্থায় গত বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। গণভবন সূত্র জানায়, এসময় প্রধানমন্ত্রী তাদের সংগঠনে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার কাছে অনেক রিপোর্ট আসছে, কারা কী করছেন সব জানেন। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাত-দিন পরিশ্রম করে দেশের জন্য কাজ করছি। আর তারা সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করবে? আমি কাউকে ছাড়বো না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ক্যাসিনোকা-ে নাম আসে যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতার। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ওমর ফারুক চৌধুরীকে। একই ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীমসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ ছাড়তে হয় রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে। একই অভিযোগে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউসার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথও পদ হারান।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *