বিশেষ প্রতিবেদক : সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র রোপওয়ে (রজ্জুপথ)। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশে রোপওয়ের লোডিং স্টেশনের বাঙ্কার এলাকা পড়েছে। গত ৫ আগস্টের পর সংরক্ষিত ওই এলাকা থেকে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) সরিয়ে নেওয়া হয়। এ সুযোগে চলছে পাথর লুট। দিনে ও রাতে বাঙ্কার খোঁড়াখুঁড়ি করে পাথর তোলা হচ্ছে। এতে করে ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতেও বদলাচ্ছে না দৃশ্যপট। বাঙ্কার খুঁড়ে পাথর তোলা চলছেই।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পাথর পরিবহনে স্থল কিংবা জলযানের বিকল্প হিসেবে ১৯৬৪ সালে ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতকে রজ্জুপথ স্থাপন করা হয়। ১১৯টি খুঁটির মাধ্যমে তৈরি হয় রোপলাইন। এর মধ্যে আছে ভোলাগঞ্জ লোডিং স্টেশন (বাঙ্কার) ও ছাতক খালাস স্টেশন। বাঙ্কারের ৩৫৯ একর জমি, অবকাঠামোসহ রেলের স্থাপনা, যন্ত্রপাতি দেখভাল করতে ২০০০ সাল থেকে আনসার বাহিনী দায়িত্বে ছিল। তবে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আনসার বাহিনীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব নেয় রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবি। একজন পরিদর্শক ও দুজন উপপরিদর্শকের নেতৃত্বে ৪৮ সদস্যের আরএনবি দল সার্বক্ষণিক অবস্থান করে পাহারায় নিয়োজিত হয়।
তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট রাতে বাঙ্কারের দায়িত্বে থাকা আরএনবি সদস্যদের ওপর দুর্বৃত্তরা হামলার চেষ্টা করে। আরএনবি সদস্যদের মারধর করে তাদের মোবাইল, অর্থ ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ৭ আগস্ট বাঙ্কার থেকে আরএনবি সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়। এই সুযোগে রোপওয়ের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুটপাট হচ্ছে। কাটা হয়েছে গাছও। আরএনবি সদস্যরা চলে যাওয়ার পর থেকে সেখান থেকে নানান কৌশলে পাথর তোলা চলছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রোপওয়ের সংরক্ষিত বাঙ্কারের ঠিক পেছনে বিস্তৃত এলাকায় পাথরের স্তূপ জমা ছিল। সেখানটি এখন প্রায় শূন্য। দুষ্কৃতকারীরা সংরক্ষিত এলাকার গর্ত খুঁড়া দেখলেই অনুমান করা যায় কি ভয়াবহ পাথর লুট করে নিয়েছে। এমনকি আবাসন কক্ষ ও স্টোর রুমের তালা ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে গেছে। এ ছাড়া বাঙ্কারের মসজিদের মাইক, ব্যাটারি, ফ্যানসহ সব ধরনের মালামাল লুটপাট হয়ে গেছে। তবে রাতের আঁধারে গর্ত খুঁড়ে রেখে দেওয়া থেকে পাথর লুটপাট এখনো চলমান রয়েছে।
আরএনবি দায়িত্বে না আসা পর্যন্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে ও থানা পুলিশকে এলাকাকে নজরদারির মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবিদা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘৩ অক্টোবর ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকা পরিদর্শনের সময় অবৈধভাবে পাথর তোলা ও পরিবহনের কারণে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আদায় করা হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকার দায়িত্বে ছিল। ৫ আগস্টের পর নিরাপত্তার স্বার্থে রেলওয়ের কর্মীদের প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এখনো রেলওয়ের কেউ এখানকার দায়িত্বে আসেননি। তাই বর্তমানে এই জায়গাটি অরক্ষিত আছে। তবে সাময়িকভাবে বিজিবিকে এই এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রোপওয়ের বাঙ্কারে পাহারায় আরএনবিকে ফেরানো হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের পরিদর্শক আবদুল নুর। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা না থাকায় সেখান থেকে আরএনবি সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে এসেছেন। সেখানে কী কী লুটপাট হয়েছে, তার একটা তালিকা করা হয়েছে। আরএনবি সদস্যদের দায়িত্ব পালন বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।
যোগাযোগ করা হলে রেলের পূর্বাঞ্চল জোনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এটি ভাড়া নেওয়ার জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব করেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। সম্মতি পেলে হয়তো দরপত্রের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে।