নিজস্ব প্রতিবেদক : দলের ভাবমূর্তি নষ্টকারী, প্রতারক ও চাঁদাবাজ- দখলবাজ এবং লুটেরাজ- দুর্নীতিবাজ সেলিমুজ্জামান সেলিমকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার ও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার (১৬ নভেম্বর) এই আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়। আবেদনপত্রে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর গোপালগঞ্জসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের মানুষ যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেছে তখন এ অঞ্চলে দানবের ভূমিকায় আবির্ভাব হয়েছে বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম। ফরিদপুর অঞ্চলে এই ব্যক্তি বসিয়েছেন চাঁদার হাট। নিজের কোনো ব্যবসা বাণিজ্য না থাকলেও সেলিমুজ্জামান সেলিম চলেন দামি গাড়িতে। থাকেন রাজনীতির অভিজাত এলাকায় ডুপ্লেক্স বাড়িতে।
রাতের আধারে বিভিন্ন ক্লাবে বসান জুয়া-মদ ও নারীর আড্ডা। দেশের সব নামকরা মাদক কারবারিরা অংশ নেন সেলিমের এই জলসায়। এখানে বসেই খেলেন রাজনীতির খেলা। বিএনপির কাকে কোথায় পদে বসাতে হবে। কাকে বাদ দিতে হবে এই লেনদেনও করেন জলসায় বসে। পোস্টিং বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও বিএনপির পদ বাণিজ্যও করেন রাজধানীর অভিজাত ক্লাবে বসে।
নিজেকে বিএনপির ফরিদপুরের একমাত্র অভিভাবক দাবি করা সেলিমুজ্জান সেলিমের দরবারে টাকা হলে সব মেলে। রাজপথের সক্রিয় কর্মী না হয়ে টাকা পয়সার বিনিময়ে সব সময় বিএনপির পদ ভাগিয়ে নেন সেলিম। বিএনপির পদ তার টাকা ইনকামের সিড়ি। বিএনপিতে তাকে দালাল ও প্রতারক হিসেবে সবাই চিনে। কয়েকজন প্রতারককে নিয়ে বিএনপিতে তৈরি করেছেন ভাইয়া সিন্ডিকেট। যাদের কাজ বিএনপির নামে চাঁদাবাজি, দালালি ও প্রতারণা করা।
সেলিমুজ্জামান সেলিমের অপরাধ দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির কিছু ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো।
সাবেক অ্যাডিশনাল আইজি মনিরুল ইসলামের অবৈধ সম্পদের রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে সেলিম। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর সেলিম তাকে দেশ থেকে পালাতে সহায়তা করে। মনিরুল ইসলামের সব অবৈধ সম্পদ সেলিমের জিম্মায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপির সব গোপন তথ্য সেলিমুজ্জামান সেলিম পুলিশের সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলামের কাছে ফাঁস করতো। এছাড়া নিজের মতের বাইরে কেউ গেলে সেলিম তাকে মনিরকে দিয়ে গ্রেফতার করাতো। সেলিমুজ্জামান সেলিম মূলত মনিরের সোর্স হিসেবে বিএনপিতে কাজ করতো, আর লেঃ কর্নেল (অবঃ) ফারুক খানের সাথে ছিল তার গোপন আঁতাত (রিলেশন)।
শেখ হাসিনার পতনের পর সেলিমুজ্জান সেলিম টাকা পয়সার বিনিময়ে সরকারী অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের পোস্টিংয়ের জন্য তদবির শুরু করেছে। এখানে সে যত্রতত্র তারেক রহমানের নাম বিক্রি করে চলছে। তদবির বাণিজ্য সেলিমের মূল ইনকাম। অনেক সরকারি কর্মকর্তাদের ফোন দিয়ে তাদের পোস্টিং করিয়ে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছে। দলীয় ফান্ডের কথা বলে অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নেন! আবার কেউ যদি তার কোনো তদবীর না শোনেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানী কারে থাকেন।
আওয়ামী লীগের অনেক দাগী আসামির রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন সেলিম । সরকার পতনের পর তার ঢাকার বাসায় আওয়ামী লীগের অনেক দাগী আসামি আশ্রয় নেয় এবং আওয়ামী লীগের বেশ কিছু অপরাধীদের সে দলে ভেড়াচ্ছেন অর্থের বিনিময়ে।
গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা দিদার হত্যা মামলা বেশ কিছু পয়সা ওয়ালা লোককে আসামি করিয়ে তাদের থেকে অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে এবং মূল আসামীকে না ধরিয়ে নিরপরাধ লোকদের হয়রানী করাচ্ছে এই সেলিমুজ্জান সেলিম!! গোপালগঞ্জে যার জলন্ত প্রমান আসামি পপা চৌধুরীসহ কয়েক জনের নাম কাটানোর কথা বলে সেলিমুজ্জামান সেলিম কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শুধু তাই নয় যাতের অর্থ বৃত্ত আছে তাদের টার্গেট করে এই ভন্ড সেলিম।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসনে সেলিমুজ্জামান সেলিমকে চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেয়ায় রাজধানীল গুলশান বিএনপি অফিসের সামনে শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও তার ছেলের উপর হামলা করে সেলিমের সন্ত্রাসী বাহিনী। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে গত ৬ বছর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীরের ছেলে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের বেদখল ফ্ল্যাট, জমি, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসীদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে দখল করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন সেলিম। তার বিরুদ্ধে পল্টন ও মগবাজারে একাধিক লোকের ফ্ল্যাট, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাকরাইল মোড়ে বিতর্কিত কথিত জমজম টাওয়ারের কথিত মালিক দাবীদার বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন সেলিমুজ্জামান সেলিমের পার্টনার! এছাড়া একাধিক আবাসিক হোটেল এবং কয়েকটি বার ও ক্লাব সেলিমের নিয়ন্ত্রণে।
বিগত ফ্যাশিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের সময় মালেয়শিয়ায় আদম ব্যবসা কেলেংকারীর সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজ মাহবুব ও সাইদুর যারা শেখ সেলিমের শেল্টারে আদম ব্যবসার নামে লুটপাট চালিয়েছে সেই মাহবুব সাইদুর সহ একটি সংঘবদ্ধ আদম ব্যবসায়ী চক্র দিয়ে ম্যান-পাওয়ার অফিসগুলো টাকার বিনিময়ে নিয়ন্ত্রণ করছে সেলিমুজ্জামান সেলিম ও তার বাহিনী। মানব পাচারকারীদের শেল্টার দাতা সেলিম রাজধানীর মগবাজারের মানবপাচাকারী মামলার আসামির একটি রিক্রুটিং এজেন্সি সেলিমের শেল্টারে পরিচালিত হয়। মানবপাচাকারী চক্রকে শেল্টার দিয়ে সেলিম মাসে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।
চোরাই গাড়ির ব্যবসা পরিচালনা হয় সেলিমের নামে। রাজধানীর কাকরাইলে একটি চোরাই গাড়ি বিক্রির প্রতিষ্ঠার সেলিমের নামে চলে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হয়েও পুলিশ প্রোটকলে গোপালগঞ্জে চলাফেরা করেন সেলিম। কাশিয়ানী-মুকসুদপুরের ইউএনও-ওসিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে বসিয়ে রাখেন। গোপালগঞ্জের ডিসি-এসপিকে অন্যায় আবদার পূরণে বাধ্য করেন। নিজেকে ভবিষ্যৎ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী দাবি করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে প্রশাসনকে ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
বৃহত্তর ফরিদপুরে বাস-গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়, খাস জমি দখল, বাজার থেকে চাঁদা উত্তোলন, ঢাকা-খুলনা বিশ্বরোডের বিভিন্ন এলাকায় তার কর্মীদের দিয়ে অবৈধভাবে দোকান বসিয়েছেন সেলিম। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ কাশিয়ানী-মুকসুদপুরসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের মানুষ।
সেলিমুজ্জামান সেলিম গোপালগঞ্জে চিহিৃত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারীদের বিএনপিতে যোগদান করিয়ে দলকে কলুষিত করছে। তার গাড়িতে যারা প্রটোকল দেয় সবাই মাদকসেবী ও কারবারী হিসেবে পরিচিত।
গোপালগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সভাপতি সহিদুল ইসলাম লেলিনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সাবেক পিএস গাজী হাফিজুর রহমান লিকু ও তার পরিবারের সকলের বিভিন্ন মামলায় জমিনের ব্যবস্থা করাসহ অব্যহতি পেতে বিশাল অংকের লেনদেন হওয়ায় দুদকের অনুসন্ধান থেকে শুরু করে তাদের সকল কিছু থেকে রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে সেলিমুজ্জামান সেলিম।
সেলিমুজ্জামান সেলিম ও তার পরিবার প্রতিনিয়ত মুকসুদপুর-কাশিয়ানী থানায় দালালি করে এলাকার অপরাধীদের ধরে এনে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।
আওয়ামীলীগ বিএনপি জামায়াত অন্য যে দলেরই হোক না কেন! সেলিমুজ্জান সেলিমকে যে টাকা দিবে গোপালগঞ্জের পুলিশ প্রসাশনকে তার পক্ষেই কথা বলবে এবং সেও তার পরিবার বর্তমানে এলাকায় কারও মধ্যে বিরোধ থাকলে তারা একপক্ষের থেকে টাকা খেয়ে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে বিচার শালিস করছে ! এতে করে এলাকার মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসস্তোষ বিরাজ করছে।
সেলিমুজ্জামান সেলিম নিজেকে তারেক রহমানের ক্যাশিয়ার দাবি করে মুকসুদপুরের দাসের হাটের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা নিয়েছে।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির অন্যতম সদস্য কাওছার মোল্লার পার্টনার ও মাদক এবং স্বর্ণ চোরাকারবারী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক কে এম মাসুদুর রহমান মাসুদের কাছ থেকে বিএনপির ও তারেক রহমানের নামে ২৫ কোটি টাকা নিয়েছে সেলিমুজ্জামান সেলিম সেই সাথে তার বিতর্কিত সেবা গ্রিন লাইন ও সিএজি- ফিলিং স্টেশন (পেট্রোল পাম্প) এর গোপনে শেয়ার গ্রহন করে মাসুদকে শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে এই সেলিমুজ্জান সেলিম!
সেলিমুজ্জামান সেলিম তার স্ত্রী সাবরিনা শুভ্রাকে আওয়ামী লীগের মিডিয়া দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আতিকুল্লাহ খান মাসুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্বিঘ্নে চালানোর নিশ্চয়তা দিয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা কর্নেল ফারুক খান ও তার পরিবারের সাথে সেলিমুজ্জামান সেলিমের আত্নীয়তা ও গোপনীয় সখ্যতা রয়েছে।
তগ ৫ ই আগষ্ট পট পরিবর্তনের পরেই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী মুকসেদপুরের বেশ কিছু হাট-বাজার, বাস স্টান্ড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলে নেয় সেলিমুজ্জামান সেলিম ও আত্নীয় স্বজনেরা, সেলিমুজ্জামান সেলিম কাশিয়ানী এম এ খালেক ডিগ্রী কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এবং তার স্ত্রী সাবরিনা বিনতে অহম্মদ জয়নগর ইয়ার আলী খান ডিগ্রী কলেজের সভাপতির পদ দখল করেছেন! আরেক ভাই মোস্তফা মোল্লা থানা যুবদলের পদে বসিয়েছেন! তার এক বোন ঢাকায় থাকে তাকে জেলা মহিলা দলের সহ-সভাপতি বানিয়েছে !
সেলিমের শ্যালক স্থানীয় তারাইল বাজারে সরকারি জমি দখল করে পাকা ঘর নির্মান করছে সেলিমের ভগ্নিপতি শফিকুল আলম কবু বিএমএ ভবন সংলগ্নে সার্জিক্যাল ব্যবসার অন্তরালে নকল পন্য সাপ্লাই ও ভূয়া এলসি এবং হুন্ডি ব্যবসা করা সহ এলাকার হিন্দুদের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে নিচ্ছে!
পারিবারের অন্যান্য সদস্য এবং আত্নীয় স্বজনেরা এখন এলাকায় গিয়ে সেলিমুজ্জামান সেলিমের বাড়িকে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির হাট বসিয়েছে ! সেলিমুজ্জামান সেলিম নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হয়েও পুলিশ প্রোটকলে গোপালগঞ্জে চলাফেরা করেন সেলিম।
কাশিয়ানী-মুকসুদপুরের ইউএনও-ওসিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে বসিয়ে রাখেন! এসকল কারণে এলাকার সচেতন মহল ও নীতিবান প্রশাসন কর্তারা ভীষণ ভাবে বিব্রত এবং ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে!
তাই বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল তথা সাড়া দেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি’র) ভাবমূর্তী রক্ষার্থে এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া এই দলটিকে কলঙ্কমুক্ত রাখতে, বহুরূপি প্রতারক ধান্দাবাজ ও চাঁন্দাবাজ সেলিমুজ্জামান সেলিমের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।