নিজস্ব প্রতিনিধি (বরগুনা) : আওয়ামীলীগ-শ্রমিকলীগের দাপুটে পলাশ, হুমায়ুন, সগীর চক্রই নিয়ন্ত্রণ করছে বরগুনার সবকিছু। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাস থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধই চলছে তাদের নেতৃত্বে, বাধাহীন ভাবে। এ সংঘবদ্ধ চক্রই সচল রাখছে বরগুনার মাদক সাম্রাজ্য। দীর্ঘদিন তারা আওয়ামীলীগের সাইনবোর্ডে অপরাধ অপকর্ম চালালেও ইদানিং খোলস বদলে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
যৌথ বাহিনীর সার্বক্ষণিক টহলের মধ্যেও পলাশ-সগীর বাহিনীর দুর্বৃত্তরা জেলা শহরের জনাকীর্ণ মিজান টাওয়ারে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। গত ৩০ মে রাত ৮ টায় কবীর, পলাশ, সবুজসহ ৮/৯ জন সন্ত্রাসী দেশিয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মিজান টাওয়ারের মদীনা গার্মেন্টস স্টোরে হামলা চালায়। তারা প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো: আব্দুল হক (৬৫) কে বেধম মারধোর করে গুরুতর আহত করে। এ সময় ক্যাশ ভেঙ্গে আড়াই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। পাশাপাশি আরো কয়েক লাখ টাকা মূল্যের পণ্য সামগ্রী লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা।
হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের উপরেও ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের এলোপাতারী মারধোর, লাঠিসোটা, রড, শাবলের আঘাতে পৌর সুপার মার্কেটের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, হিরু, সিদ্দিক, স্বপন, তারিকুল, বায়জিদসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। দুর্বৃত্তরা লুটকৃত টাকা ও পণ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সময় আরো পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা শিগগির তাদের কাছে পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়ে যান। চাঁদা পরিশোধ না করলে মদীনা গার্মেন্টস স্টোর আগুনে পুড়িয়ে দেয়াসহ এর মালিক মো: আব্দুল হককে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে আহত মো: আব্দুল হক বাদী হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্ত কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এদিকে হামলাকারী দুর্বৃত্তরা মামলা তুলে নিতে বাদী ও সাক্ষীদের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যথেচ্ছা অপরাধ দৌরাত্ম্য
————
সংঘবদ্ধ চক্রটি বছরের পর বছর ধরে বরগুনায় অপরাধ অপকর্ম চালিয়ে আসলেও তাদের দৌরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না কোনভাবেই। কখনও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে, কখনও মাসোহারার মাধ্যমে থানা পুলিশ প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে তারা। চক্রের অন্যতম হোতা সাইনুল ইসলাম ছগির জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক হয়ে সর্বত্র চাঁদাবাজির একচ্ছত্র সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। বাস-মিনিবাস ছাড়াও শহর ও শহরতলীতে চলাচলকারী হাজার হাজার অটোরিকসা থেকে দৈনিক ভিত্তিতে তার সাঙ্গপাঙ্গরা বাহীন চাঁদাবাজি চালিয়ে থাকে।
অপরাধ চক্রের আরেক হোতা শহিদুল ইসলাম পলাশ নিজেকে শ্রমিকলীগের নেতা দাবি করে দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে রয়েছেন। তিনি শহরে কিশোর গ্যাংয়ের বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারই কব্জায় আছে মাদক বাণিজ্যের আরেক জগত। দুর্বৃত্ত শ্রেণীর ২৫/৩০ জন সহযোগী নিয়ে নিয়মিত মহড়া দিয়ে বেড়ানোসহ বিলোধপূর্ণ জায়গা জমিতে জবরদখলদারিত্ব কায়েম করেন পলাশ।
এর আগে নিজ স্ত্রীর বদলি নিয়ে ক্ষোভের জেরে বরগুনা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুজ্জামানকে অপহরণ করে নির্যাতন চালানোর ঘটনায় শহিদুল ইসলাম পলাশ গ্রেফতার হন। কিন্তু অজ্ঞাত ইশারায় কয়েকদিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন, জেলা শহরের কোথাও একচিলতে জায়গা ফাঁকা থাকার উপায় নেই। সেখানেই দলবল নিয়ে হামলে পড়েন পলাশ। যে কোনো উপায়ে জায়গা জবর দখলে নিয়ে তা ব্যবসায়িদের কাছে উচুমূল্যে ভাড়া দিয়ে থাকেন। এসব অপকর্মে বরাবরই পলাশ নিজেকে জেলা শ্রমিকলীগের দায়িত্বশীল নেতা বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তবে বরগুনা জেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক আঃ হালিম মোল্লা বলেন, পলাশ শ্রমিক লীগের কেউ নয়। তার সঙ্গে সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই।
দখলবাজিসহ নানা অপকর্ম আর মাদক বাণিজ্যের টাকায় গত ১০/১২ বছরেই শহিদুল ইসলাম পলাশ রীতিমত আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হয়েছেন। বৈধ আয়ের কোনো পথ না থাকলেও কোটি কোটি টাকা ও বিপুল পরিমাণ সহায় সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। চক্রের অপর সদস্য কবীর হোসেন ওরফে গুরু কবীর ও হুমায়ুন মূলত জায়গা জমি নিয়ে প্রতারণামূলক কাজ কারবারে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।