মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মহসিন উদ্দিন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ আলাউদ্দিন ও উপজেলা প্রকৌশলী এস এম জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাদের দূর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে কে এম সাইফুর রহমান ও বিল্লাল হোসেন নামের দু’ব্যক্তি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করছেন।
ইতোমধ্যেই দূর্নীতির অভিযোগ ওঠা এই তিন কর্মকর্তার মধ্যে ইউএনও মহসিন উদ্দিন এবং পিআইও মোঃ আলাউদ্দিন কে বদলির নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর। সম্প্রতি পিআইও আলাউদ্দিন স্টেশন ত্যাগ করে নুতন কর্মস্থল ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় যোগদান করলেও অজানা কারণে এখন পর্যন্ত ইউএনও মহসিন উদ্দিন নুতন কর্মস্থলে যোগদান করেনি।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ইউএনও মহসিন উদ্দিন, প্রোকৌশলী এস এম জাহিদুল ইসলাম, পিআইও আলাউদ্দিন পতিত সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতার সাথে যোগসাজশ রেখে দীর্ঘদিন ধরে দূর্নীতি ও অনিয়ম মাধ্যমে সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্প ও বরাদ্দ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। উক্ত আয় বহির্ভূত অর্থ দিয়ে ঢাকাসহ নিজ নিজ এলাকায় ও শশুর বাড়ীতে করেছেন বাড়ি, কিনেছেন ফ্লাট, প্লট ও প্রচুর পরিমাণে কৃষিজমি। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে জমিয়েছেন টাকা। অনিয়ম দুর্নীতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খানের ব্যক্তিগত মৎস ঘেরে যাতায়াতের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ব্রিজ নির্মাণ।
ভূমিহীন, গরিব ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করা মুজিব বর্ষের ঘরে নিম্নমানের ইট ব্যবহার। মাটির নিচে ইট কম দেওয়া, সিমেন্ট কম ব্যবহার করা। ভূয়া প্রকল্প দিয়ে এডিপির বরাদ্দ আত্মসাৎ, ব্যক্তির কাছ থেকে বড় অংকের উৎকোচ নিয়ে অন্যের মালিকানাধীন জমির উপর অন্যায় ভাবে এডিবির বরাদ্দে রাস্তা নির্মাণ। উরফি ইউনিয়নের পুরাতন আদর্শ গ্ৰামের ঘর নিলামে বিক্রি না করে গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ। ইউএনও’র সহকারী সঞ্চিতা ও সিএ বিকাশ কে দিয়ে নিজ দপ্তরের কাজে ঠিকাদারি ব্যবসা করানো। উপজেলা চত্বরে বঙ্গবন্ধুর মোরাল তৈরিতে বাড়তি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আত্মসাৎ।
পিআইও আলাউদ্দিন চাকুরী বিধি লঙ্ঘন করে নিজ অফিসে বসে প্রকাশ্যে ধূমপান ও মাদক সেবন, যা তাকে ডোপটেষ্ট করালে প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই অভিযোগে। এছাড়াও তার রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ। ২০২২ সালে নিজ দপ্তরের পিয়ন আলী আহম্মদ শিকদারের সুন্দরী স্ত্রী খাদিজা বেগম কে ধর্ষণ করার চেষ্টায় গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের মাধ্যমে বাদীকে চাপ প্রয়োগ করে ৮লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হয়।
অপরদিকে উপজেলা প্রকৌশলী এস এম জাহিদুল ইসলাম মাসুদ নামের এক রং মিস্ত্রীকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স এর নামে কাজ নিয়ে নিজেই ব্যবসা করছেন।
অতিসম্প্রতি উপজেলা পরিষদের গেট ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মান কাজে একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করেছেন। বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এলজিইডির নির্মানাধীন রাস্তায় পচা ইট, পাথর ও নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে আসছে। এছাড়াও নিজ দপ্তরের সিডিউল বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করারও রেকর্ড রয়েছে এই কর্মকর্তার।
দূর্নীতি দমন কমিশন গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ মশিউর রহমান জানান, উপজেলা পর্যায়ের এই তিন কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের মাসিক মিটিং হওয়ার পরে ঢাকা হেড অফিসে পাঠানো হবে, হেড অফিস থেকে তদন্তের অনুমতি পেলে আমরা তদন্ত শুরু করবো।
এবিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার মহসিন উদ্দিন বলেন, অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। উপজেলা প্রকৌশলী এস এম জাহিদুল ইসলাম জানান, এ সকল কাজের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি কোন অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।
পিআইও মোঃ আলাউদ্দিন এর মুঠোফোনে বার বার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান বিষয়গুলো তদন্ত করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।