বিশেষ প্রতিবেদক : সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তে ধলাই নদী রয়েছে বাংলাদেশের প্রধান পাথর কোয়ারি। ধলাই নদীতে পাথরের বিশাল মজুদের কথা চিন্তা করে ১৯৬৪-৬৯ সালে এই কোয়ারির কাছে রেলওয়ের জমিতে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ-ছাতক রোপওয়ে প্রকল্প। বসানো হয় স্বয়ংক্রিয় পাথর প্লান্ট। সেখানে পাথর ভেঙে তা রোপওয়ে বা কেবল লাইনের মাধ্যমে পাঠানো হতো ১৯ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকে। তবে ৯ বছর আগে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর এ প্রকল্প এলাকার সম্পদ সর্বশেষ পাহারায় ছিল রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী-আরএনবি।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ভোলাগঞ্জজুড়ে শুরু হয় পাথর লুটপাটের মহোৎসব। ভোলাগঞ্জ প্রধান কোয়ারি, পাশের সাদাপাথর পর্যটন এলাকা ও আলোচিত শাহ আরেফিন টিলা এবং রেলওেয়ে বাঙ্কার এলাকায় চোখ পড়েছে দুর্বৃত্তদের। শাহ আরেফিন টিলা ও সাদা পাথর লুটপাট পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও দিন/রাতে রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকা থেকে লুট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার পাথর। দিন-দুপুরে কয়েকশ নৌকায় পালাক্রমে এখান থেকে সরানো হচ্ছে পাথর। তেমনি ভাবে রাতেরবেলাও সরিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী ৫ আগস্ট চলে যাওয়ার পর বাঙ্কারের নিরাপত্তার দায়িত্ব বর্তায় কার্যত স্থানীয় বিজিবির ওপর। অথচ রোপওয়ে বাঙ্কারের কাছে একটি ক্যাম্প ও দুটি পোস্ট থাকার পরও বিজিবি আছে দর্শকের ভূমিকায়।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনাও হয়। সেখানে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে বিজিবিকে ১০ দিনের সময় দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সদ্য ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় উন্মুক্ত আলোচনা করতে আসেন এবং সে উন্মুক্ত আলোচনায়ও পাথর লুটপাট চাঁদাবাজি হচ্ছে মর্মে উপস্থিত অনেকে অভিযোগ তুলেন উপজেলা প্রশাসনের উপর। তবে অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরাই নৌকাপ্রতি ৫০০ টাকা করে নিয়ে পাথর লুটের সুযোগ করে দিচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামীলীগের পতনের পর পাথর লুটের নতুন সিন্ডিকেটও গড়ে উঠেছে। এরা ভোলাগঞ্জ কোয়ারি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের বিশাল এলাকা পাথর ব্যবসার জন্য ভাড়া দিয়েছে। বাঙ্কার থেকে লুট করা পাথর সরাতে চাঁদাও আদায় করছে।
৫ আগস্টের বিগত সরকারের পতনের পর পাথর লুটকারীরা অনেকটা হামলে পড়ে পাথররাজ্য কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ কোয়ারি এলাকায়। সাদাপাথর পর্যটন এলাকা থেকে এক-দেড় মাসেই লুট হয় শত কোটি টাকার পাথর। ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের পাশে পর্যটনকেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে প্রায় দেড় কোটি টাকায় নির্মাণ করা দেয়ালও ওই সময় ভেঙে ফেলা হয়। সেখানকার ইট লুটের পাশাপাশি বসানো হয় একাধিক মিনি স্টোন ক্রাশার মেশিন। হামলা হয় বাঙ্কার এলাকায়ও। খুলে নেওয়া হয় লোহা, তামা ও টিন। ভাঙচুর করা হয় স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প ও পোস্ট।
গতকাল সোমবার ৮ ডিসেম্বর সরেজমিন দেখা যায়, রেলওয়ে বাঙ্কার এলাকার পাশাপাশি নদী থেকে এখনও বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে বালু ও চিপ পাথর উত্তোলন করছে। সেখানে একটি চায়ের দোকানীর সঙ্গে কথা হয় তিনি বলেন, আগে মিলেমিশে লুটপাট করা হয়েছে। এখন নতুন সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে লুটপাট ও চাঁদাবাজি করছে। প্রশাসন জেনেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকাটি যেন নদীর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
পর্যটন ঘাটের রেস্টুরেন্টসহ একাধিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন শত শত নৌকা দিন-রাত পাথর লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর এটি অনেক বেড়েছে।
সিন্ডিকেটমুক্ত হচ্ছে না ভোলাগঞ্জ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিকে কেন্দ্র করে সব সময় সক্রিয় থাকে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। আওয়ামীলীগের পতনের কয়েক দিনের মধ্যেই তৈরি হয়েছে নতুন সিন্ডিকেট। স্থানীয়দের তথ্যমতে, ভোলাগঞ্জ এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন উপজেলা বিএনপি যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদুর রহমান দুদুসহ দু’টি সিন্ডিকেট। দুদুর দলে রয়েছেন সাজ্জাদের ভাই আনোয়ার ও বোরহান, সহযোগী জাহাঙ্গীর মিয়া, জাকির হোসেন, সাজন আহমদ, মজফরসহ কয়েকজন। এ ছাড়া পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মাহফুজ মিয়া ও কবির আহমদ, জেলা যুবদল যুগ্ম সম্পাদক বাহার আহমদ রুহেল ও উপজেলা যুবদলের নেতা রজন মিয়াসহ আরেকটি বলয়ও সক্রিয়। ৫ আগস্টের পর ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের পাশে ট্যুরিজম বোর্ডের অধিগ্রহণ করা জমির দেয়াল ভেঙে দখলে নেয় এসব সিন্ডিকেট। সরেজমিন দেখা যায়, ওই স্থানে ২৫-২৬টি মিনি ক্রাশার মেশিন বসিয়ে পাথর ভাঙা হচ্ছে। শ্রমিকরা জানান, শতক হিসেবে ওই জায়গা কারও কাছে এক বছর বা মাসের হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাঙ্কার এলাকা থেকে লুট করা পাথর আনলোড করতেও টাকা তুলছে সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের একমাত্র রোপওয়েটি অবস্থিত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ। ১৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রোপওয়ে বন্ধ রয়েছে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে। অবৈধ পাথরখেকোদের দৌরাত্ম্যে বর্তমানে অস্তিত্বই হারাতে বসেছে রোপওয়েটি। এর জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় সাড়ে তিনশত একর জমি দখল করে সেখান থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে গর্ত খুঁড়ে নিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন তারা। ফলে ঝুঁকিতে পড়ে গেছে রোপওয়েটির বাঙ্কার। হেলে পড়েছে রোপওয়েটির খুঁটি, ঝুলে রয়েছে রোপওয়েটির আবাসনের বিল্ডিং গুলো। চুরি হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রপাতিও। ৫আগস্ট থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র ও ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাঙ্কার থেকে পাথর ও মালামাল লুটপাট। যেখানে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে লুটপাট বন্ধ করার কথা ছিল। সেখানে চিত্র ভিন্ন। প্রশাসন রয়েছে চুপচাপ। লুটপাট বন্ধে নেই দৃশ্যমান কোনো অভিযান। লুটপাটের কথা প্রশাসন কিছু জানে না তা কিন্তু নয়, সবকিছু জেনেও তারা চুপচাপ! কিন্তু কেন? অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই চালানো হচ্ছে এ লুটপাট। রহস্যজনকভাবে লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট ও টাস্কফোর্সের অভিযান না থাকার কারণে পাথরখেকো ও দুর্বৃত্তরা পাথর এবং রোপওয়ের মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
৫ আগস্ট সরকারের পতন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিল অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ও রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকায় বেড়ে যায় পাথর লুটপাট। এছাড়াও বাঙ্কার থেকে শতকোটি টাকার সরকারি মালামালও চুরি করা হয়। স্থানীয় আওয়ামীলীগ, বিএনপি নেতারা মিলেমিশে একাকার হয়ে চলে এমন তান্ডব ও লুটতরাজ। গত ১৫ অক্টোবর পাথর লুটপাট বন্ধে পুলিশ অভিযান করলে তাদের উপর হামলা চালায় পাথর সন্ত্রাসী দূর্বৃত্তরা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি জাবের আহমদ এবং আব্দুল্লাহ নেতৃত্বে অভিযানকারী পুলিশের উপর হামলা করতে নির্দেশ দেন। এ হামলায় আহত হন পুলিশের এসআই শরিফুল ইসলাম। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি বাদী হয়ে জাবের ও আব্দুল্লাহসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তাৎক্ষণিক ৪জন ও পরে আরো ১জনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের মামলায় তাৎক্ষণিক পাথর সন্ত্রাসী কয়েকজনকে আটক করা হলেও ট্রলি গাড়ি ও পাথরের মালিক আফিয়া বেগম (মরি) এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলার কালিবাড়ী এলাকার লিলাইবাজারে নদীর তীরে পাথর বোঝাই কয়েকটি গাড়ি আটক করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ গাড়িগুলো থানায় নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিলে ছাত্রলীগ নেতা জাবের আহমদ ও আব্দুল্লাহর নির্দেশে পুলিশের উপর হামলা চালায় প্রায় শতাধিক লোক।
পাথর কোয়ারিতে গিয়ে দেখা যায়, দিনের বেলা কোয়ারির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ধলাই নদের বিভিন্ন অংশে বালুও পাথর এবং রেলওয়ের রজ্জুপথের (রোপওয়ে) সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকা থেকে শত শত গর্ত খুঁড়ে পাথর তুলে নিয়ে বারকি নৌকায় করে নিয়ে যাচ্ছে দূর্বৃত্তরা। এসব বালু ও পাথর ধলাইয়ের পশ্চিম পাড়ে গুচ্ছগ্রাম পুলিশ ফাঁড়ি নদীঘাট, গুচ্ছগ্রাম বাজার নদীঘাট এবং ধলাইয়ের পূর্ব পাড়ে নতুনবাজার ও কালীবাড়ি এবং কলাবাড়ী এলাকায় স্তূপাকারে রাখা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে সুযোগ করে ট্রাক ও পিকআপে বালু-পাথর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যার পরও একইভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করতে দেখা যায়।
বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত করা হয়, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে সংরক্ষিত এলাকা (বাঙ্কার) এলাকায় পাথর লুটপাটে সক্রিয় স্থানীয় একটি পাথরখেকো চক্র। সেখানে দিনের পাশাপাশি রাতের শত শত গর্ত খুঁড়ে চলছে অবাধে পাথর লুট। পাথরখেকো চক্র পাথর লুটপাটে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পাথর উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের একমাত্র রজ্জুপথ ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাঙ্কার। বেশ কিছুদিন ধরে রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে রফাদফার মাধ্যমে বাঙ্কার এলাকা থেকে পাথর লুটপাট করে রেলওয়ে রোপওয়ে বাঙ্কার ধ্বংসে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকায় গর্ত খুঁড়ে বর্তমানে পাথর উত্তোলন হচ্ছে বিএনপির সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের নেতা রজন মিয়া ও গিয়াস উদ্দিন সহ ৫/৬ জনের নেতৃত্বে একটি পাথরখেকো চক্র। তারা সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস্তুুপে পরিণত করে পাথর উত্তোলন করছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পেশীশক্তির বলে পাথরখেকো চক্রটি কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এলাকার ধলাই নদী থেকে বিরামহীন চালিয়ে কোটি কোটি টাকার পাথর সম্পদ লুটে নিলেও রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। মাঝে মধ্যে পাথরখেকো চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে পুলিশ ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও প্রতিবার জেলা যুবদলের নেতা বাহার আহমেদ রুহেল ও উপজেলা যুবদলের নেতা রজন মিয়া এবং গিয়াস উদ্দিনসহ এরা রয়ে যান বহাল তবিয়তে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের প্রধান কোয়ারি ভোলাগঞ্জ। সঙ্গে রয়েছে ধলাই নদী বালুমহাল। কোয়ারির পাশে রেলওয়ের বাঙ্কার এলাকা। এর উত্তরে সীমান্তঘেঁষা সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। সরকার পতনের পর পরই ৬ আগস্ট থেকে বিরামহীন চালিয়ে যাচ্ছে পাথর সন্ত্রাসীরা তাদের তান্ডব আর এমন দানবীয় তান্ডবের শিকারে রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকা থেকে শত শত কোটি টাকার সাদাপাথর লুট হচ্ছে। বালু-পাথর লুট অব্যাহত থাকায় গত কয়েক মাসে পাথরখেকোদের আঁচড়ে প্রায় বিলীন হওয়ার পথে ভোলাগঞ্জের রোপওয়েটি লুটেপুটে খাচ্ছে দূর্বৃত্তরা। গভীর ভাবে ঘুমিয়ে আছেন স্থানীয় প্রশাসন। সরকার পতনের পর পরই রেলওয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সাদাপাথর ও বাঙ্কার এলাকা থেকে চলে গেলে অরক্ষিত হয়ে পড়ে সেই এলাকা। তবে চারটি বিজিবি ক্যাম্প ও পোস্ট থাকার পরও প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ এবং বিজিবিকে ম্যানেজ করেই পাথর লুট করা হচ্ছে।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোলাগঞ্জ রেলওয়ের বাঙ্কার এলাকার তিনটি স্থানে শত শত লোকজন সীমাহীন গর্ত খুঁড়ে নিয়ে এসব গর্ত থেকে পাথর উত্তোলন করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার পরিবর্তনের পর বারকি শ্রমিকদের একাধিক সিন্ডিকেট, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী তা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী শৈবাল শাহরিয়ার সাজন, আওয়ামীলীগের লাল মিয়া, তোফাজ্জুল হোসেন রাজু, ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি কবির হোসেন ও সেক্রেটারি মাহফুজ মিয়া, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা বাহার আহমদ রুহেল, আওয়ামীলীগের মতিউর রহমান এবং পাথর শ্রমিক বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক, তৃণমূল বিএনপির নেতা আবুল হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সাজ্জাদুর রহমান দুদু, তার ভাই সহ আত্মীয় স্বজনরা সহ ১৫/২০ জন।
রেলওয়ে বাঙ্কার সীমান্তের ও ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ও শাহ আরেফিন টিলা থেকে পাথর লুটপাট বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা বলেন, ভোলাগঞ্জে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে। শাহ আরেফিন টিলা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কাজ করছে। এবং আরো বলেন, আমার উপজেলা প্রশাসনের কেউ এ-সব সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে আমার জানা নেই।
ভোলাগঞ্জ রোপওয়েটি দায়িত্বে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবু জাফর মিঞার সঙ্গে একাধিক বার সরকারি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগের করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমার নলেজে রয়েছে এবং এমন এসব নিয়ে আইনি উদ্যোগ নিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প,পাথর কোয়ারি, কালাইরাগ, কালাসাদক সরকারি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে, ক্যাম্প কমান্ডাররা বলেন, মিডিয়াতে কথা বলার অনুমোদন নেই।
এসব বিষয় নিয়ে বিজিবি ৪৮ অধিনায়ক সিও লেঃ কর্ণেল মোঃ হাফিজুর রহমানের সরকারি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমাদের বিজিবি চাঁদাবাজি সঙ্গে জড়িত হলে আমি খোঁজ নিয়ে দ্রুত সম্ভব ব্যবস্হা নিবো।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান রেলওয়ে বাঙ্কার, সাদা পাথর ও শাহ আরেফিন টিলাসহ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি গুলোতে এমন পাথর লুটপাটে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাহ আরেফিন টিলা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, রেলওয়ে বাঙ্কার এলাকা রেলওয়ে বাহিনীর দায়িত্ব ও উপজেলা প্রশাসন এসব দেখেন। তবে আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্হা নিতে প্রস্তুত।
রেলওয়ে বাঙ্কার এলাকা গর্ত খুঁড়ে পাথর লুট ও সাদা পাথর এবং শাহ আরেফিন টিলা এমন লুটপাটের মহোৎসব বিষয়ে জেলা প্রশাসন(ডিসি) শের মাহবুব মুরাদ বলেন, শাহ আরেফিন টিলা বন্ধ করা হয়েছে, রেলওয়ে বাঙ্কারের দায়িত্ব রেলওয়ে অধিদপ্তরের আমি তবুও চেষ্টা করছি এসব বন্ধ করার, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা নিয়ে ডিসি বলেন, আমার এসব জানা নেই, এবং ৫ ডিসেম্বরে কোম্পানীগঞ্জে উন্মুক্ত আলোচনায় কেউ এসব বলেননি।