নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নামে কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা যায় সেই উচ্ছেদ হওয়া ভবন ফের নির্মাণ হচ্ছে। এমন কর্মকাণ্ডে রাজউকের উচ্ছেদ নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান কি সংস্কার, নাকি অবৈধ লেনদেনের পথ সুগম করা? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে।
রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ইমারত বিধিমালার বাস্তবায়ন ও দেখভালের দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের ওপর। কিন্তু কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের জন্য এ দপ্তর আজ কলুষিত। রাজউক কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্য আর দুর্নীতির কারণে অনিয়মের সুযোগ পাচ্ছে মালিকানাধীন ও ডেভেলপার কোম্পানিগুলো। নোটিশ করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ভবনের অংশ বিশেষ অপসারণ কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের অপকৌশলে পরিণত হয়েছে। ভবন নির্মাণ বিধিমালার ব্যতিক্রম দেখিয়ে ভবনের একক মালিক কিংবা ডেভেলপার কোম্পানির মালিকদেরকে নোটিশের মাধ্যমে অফিসে ডেকে এনে অনিয়মকে মৌখিক নিয়মের ছাড়পত্র দেওয়ার আশ্বাসে ঘুষ লেনদেন যেন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
অভিযোগ আছে জোন-৩/২ এর অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন, পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার ১৩৪/১, ১৪৬/ই/৩, ১৪৬/ই/৩/১ হোল্ডিংয়ের আগারগাঁও ৬০ ফিট কলাপাতা রেস্তোরাঁর পেছনে ও বিপরীতে থাকা ভবনগুলো বিগত ৭ অক্টোবররাজউকের ম্যাজিস্ট্রেটসহ অভিযান চালালেও অদৃশ্য কারণে ভবনগুলো আগেররূপে ফিরছে। কীভাবে উচ্ছেদকৃত ভবনগুলো পুর্বের রুপে ফিরছে এ বিষয়ে নির্মানাধীন ভবনের মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা রাজউকের কর্মকর্তাদের দিকেই অভিযোগের ইঙ্গিত দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, আগে যারা ছিলেন তারা বর্তমান কর্মকর্তাদের থেকে কিছুটা ভালো ছিলেন। তিনি বলেন অথরাইজড স্যারকে জানিয়ে বাড়ির মালিককে অফিসে ডেকে এনে মীমাংসা করে দেয়ার পরেও শেগুফতা শারমিন সেই বাড়ি ভেঙে দেন। কারন মীমাংসা করে দেয়ার অর্থ তার মনপুত হয়নি, জানি না এইভাবে চাকুরি কতদিন করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, জোন-৩/২ এর অথরাইজড অফিসার মিটিংয়ে কোনো ফাইল ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২,০০,০০০ টাকা অবৈধ লেনদেন ছাড়া কোনো ইমারত প্ল্যান পাস করেন না। এই অর্থের লেনদেন হয় শেগুফতা শারমিনের ব্যক্তিগত সহকারী জানে আলমের মাধ্যমে। জানে আলমের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল এলেই প্ল্যান পাস হয়।
কোন অথরাইজড অফিসারের সরকারিভাবে ব্যক্তিগত সহকারী থাকার সুযোগ আছে কিনা এমন তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে সরকারিভাবে কোনো অথরাইজড অফিসারকেই ব্যক্তিগত সহকারী দেওয়া হয় না। শুধু অথরাইজড অফিসারের ব্যক্তিগত সহকারী আছে এমন নয় ইমারত পরিদর্শকদেরও রয়েছে ব্যক্তিগত সহকারী। প্রশ্ন আসে এই ব্যক্তিগত সহকারীদের বেতন আসে কোথা থেকে? শেগুফতা শারমিনের ব্যক্তিগত সহকারীই এই লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নয় তার সঙ্গে রয়েছেন সহকারী অথরাইজড অফিসার মামুনও।
রাজউক থেকে ইমারতের প্ল্যান পাস করতে সরকারিভাবে যে অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয় তারপরেও প্ল্যান পাস করানোর জন্য মিটিং এর সময় দিতে হয় অতিরিক্ত অর্থ। আর এই অর্থ না দিলে প্ল্যান পাস হয় না এমনই তথ্য পাওয়া গেছে ভুক্তভোগী বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে।
তারা আরো বলেন যথা সময়ে ঘুষের টাকা পরিশোধ না করলে পরবর্তীতে দ্বিগুণ ঘুষ দিয়ে প্লান পাস করাতে হয় তাই প্ল্যান পাস মিটিংয়ের আগেই ঘুষের টাকা প্রদান করতে হয় অথরাইজ অফিসার শেগুফতা শারমিনের ব্যক্তিগত সহকারী অথবা সহকারী অথরাইজড অফিসার মামুনের কাছে।
উচ্ছেদকৃত ভবনগুলো পুনরায় আবার কীভাবে আগের রূপে ফিরে গেছে তার তদন্ত করতে গিয়ে উঠে এসেছে শেগুফতা শারমিনের এই দুর্নীতির চিত্র। উচ্ছেদকৃত ভবন গুলো আগের রূপে কিভাবে ফিরে গেল এই বিষয়ে শেগুফতা শারমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন অফিসে আসেন সরাসরি কথা বলি।
এর কিছুক্ষণ পরেই উচ্ছেদ হওয়া এক ভবন মালিক প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে চান এবং তার এক প্রতিনিধিকে দেখা করতে পাঠাতে চান। এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই যায় কীভাবে বাড়ির মালিক প্রতিবেদকের ফোন নাম্বার পেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে? কীভাবেই জানল এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
রাজউক জোন ৩ এর পরিচালক মো. সালেহ আহমদ জাকারিয়া কে এই বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।