রাজউক জোন-৩ এর শেগুফতা সিন্ডিকেট ভাঙবে কবে ? 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজউকের জোন-৩ এর দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির যেন লাগামটানা ভার। জোন-৩/২ এর অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন আসরাফ, সহকারী অথরাইজড অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, ইমারত পরিদর্শক সোলাইমান হোসাইন, আবুল কালাম আজাদ সবাই ডুবে আছেন দুর্নীতিতে। এই কর্মকর্তাদের একাধিক দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসলেও তারা তাদের মত দুর্নীতির রথ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সকল কর্মকর্তাদের অফিসিয়ালি শেগুফতা সিন্ডিকেট নামে চিনলেও কোন এক অদৃশ্য কারনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না রাজউকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।


বিজ্ঞাপন

এই সিন্ডিকেটের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তথ্যভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন হলেও সবকিছু যেন কর্পূরের ন্যায় উবে যাচ্ছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর, একটি দৈনিকে  “শেগুপ্তা শারমিনের ২ খলিফা, মামুন আর সোলাইমান” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত ০১ অক্টোবর  আরও একটি দৈনিকে “রাজউক মহাখালী অথরাইজড অফিসার আওয়ামী পন্থী শেগুপ্তা শারমিন আশরাফ এর খুটির জোর কোথায় প্রশ্ন সেবা গ্রহীতা ও সাংবাদ কর্মীদের” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি রাজউক কর্তৃপক্ষের। এই সংবাদ গুলোর ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নামে রিপোর্টিং ক্রাইম টিম। গত ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে “ঘুষ দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই রাজুকের অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। তবুও ঘুম ভাঙেনি রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। তাই এই শেগুফতা সিন্ডিকেট নিয়ে অধিকতর তদন্ত শুরু করে রিপোর্টিং এর ক্রাইম টিম। প্রথমেই অনুসন্ধান করা হয় তাদের কি পরিচয়, কিভাবেই বা তাদের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে?


বিজ্ঞাপন

প্রকৌশলী শেগুফতা শারমিন আসরাফ, অথরাইজড অফিসারে জোন-৩/২, রাজউক  প্রকৌশলী শেগুফতা শারমিন আসরাফ : ৭৩, পূর্ব রাজা বাজার শেরে-বাংলা নগর এর আসরাফ উদ্দিন ও সালমা আক্তারের কন্যা এই শেগুফতা শারমিন আসরাফ।সালমা আক্তার বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করলেও তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সক্রিয় নারী নেত্রী। সরকারি দায়িত্ব পালন করেও তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা ও ঢাবির সাবেক ভাইস চ্যাঞ্চেলর প্রফেসর এ.কে আজাদ চৌধুরির ভাগ্নী সালমা আক্তারের মেয়ে এই শেগুফতা শারমিন আসরাফ। সাবেক গনপূর্ত প্রতিমন্ত্রি ঢাকা ০১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খানকে প্রফেসর এ.কে আজাদ চৌধুরি সুপারিশ করেছে এই শেগুফতার চাকরির বিষয়ে। আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে ২০১১ সালে রাজউকের চাকরি বাগিয়ে নেন শেগুফতা শারমিন আসরাফ। ২৪ মার্চ ২০১১ খিস্টাব্দে রাজউকে সহকারি অথরাইজড অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।

এরপর থেকেই চলছে তার নানা অপকর্ম। তার অপকর্মের বিষয়ে জানতে তার চাকরির শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত রিপোর্টিং এর ক্রাইম টিম বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে তদন্ত শুরু করে। দুর্নীতি, অসদাচরণ থেকে শুরু করে সকল অপকর্মই করেছেন শেগুফতা শারমিন আসরাফ। মা আওয়ামী লীগ নেত্রী হওয়াতে কাউকেই পাত্তা দিতেন না তিনি। তার অধীনস্থ কর্মকর্তা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত কাউকেই ভ্রুক্ষেপ করতেন না তিনি। জোন ১/১ উত্তরায় থাকাকালীন সাংবাদিকদের খারাপ দৃষ্টিতে দেখতো বলে একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী জানায়। সংবাদ কর্মীগণ পরিচালককে লিখিতভাবে অবহিত করার পরেও শেগুফতা শারমিন আসরাফ সংবাদকর্মীদের তার কক্ষে ঢুকতে অনুমতি দেয়নি।

দৈনিক বাংলা ৭১ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার এবং মিরপুর প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি নিজেও পরিচালক বরাবরে লিখিত ভাবে অবহিত করেও দেখা করতে পারিনি এই প্রভাবশালী দুর্নীতিগ্রস্ত অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন আসরাফের সাথে। দৈনিক গণতদন্ত পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হাসমত মিয়া সংবাদ প্রকাশের পুর্বে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানের স্বার্থে এই কর্মকর্তার সাথে দেখা করতে চাইলে তাকে কক্ষ থেকে অপমান করে বের করে দেয় এই কর্মকর্তা। কক্ষ থেকে বের হয়ে এসে গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন আসরাফ এর বিরুদ্ধে সংবাদ কর্মীদের হেনস্তা করার অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন সাংবাদি হাসমত মিয়া।

সাংবাদিক হাসমত মিয়া জানান, এই কর্মকর্তা জোনাল অফিস উত্তরা জোন ১/১ গাজীপুর এলাকার দায়িত্বে থাকাকালীন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাধারণ মানুষের নিকট থেকে, একই সময়ে পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় সাভার আশুলিয়া থেকে শত কোটি টাকার জ্ঞাতো আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছে বলে তিনি একাধিক সূত্রে জানতে পেরেছেন।

জানাগেছে গাজীপুরের আল আমিন নামের এক ব্যক্তি গত ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশনে শেগুফতা শারমিন আসরাফের ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এত অভিযোগের পরও এই দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার পদোন্নতিই হয়েছে। ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারিতে ২৫.৩৯.০০০০.০০৯.১২.০০১.২২.৫৬৩ স্মারকের আদেশে যে কয়জনকে সহকারি অথরাইজড অফিসার থেকে অথরাইজড অফিসার হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তার মধ্যে শেগুফতা শারমিন আসরাফ একজন। ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি ২৫.৩৯.০০০০.০০৯.১৯.০০৩.২২.৮১ স্মারকের আদেশে তার দায়িত্বের এলাকা আরও বর্ধিত করা হয়। তিনি জোন-১/১ এ দায়িত্ব পালন করলেও এই আদেশে তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে জোন-১/২ এ দায়িত্ব পালন করার অনুমতি প্রদান করা হয়। দায়িত্ব বর্ধিত হওয়ায় তার দুর্নীতির মাত্রা বর্ধিত হয়েছিল। এমনই পরিস্থিতিতে তাকে এই জোন থেকে বদলি করে পাঠানো হয় জোন-৩/২ এ। এই৷ জোনে এসেও থেমে যায়নি তার দুর্নীতি। তার দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টিং এর প্রতিবেদনে। গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে “ঘুষ-দুর্নীতিতে পিছিয়ে নেই রাজউকের অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন” নামে প্রকাশিত হয়েছে তথ্যবহুল প্রতিবেদন। এরপরেও রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোন নড়চড় লক্ষ্য করা যায়নি। এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে এই দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তার খুঁটির জোর কোথায়?

আব্দুল্লাহ আল মামুন , সহকারি অথরাইজড অফিসার জোন-৩/২, রাজউক আব্দুল্লাহ আল মামুন :  নড়াইল জেলার সদর উপজেলার বোড়ামারা গ্রামের মোহাম্মদ জহুরুল এর পুত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সাবেক এক সংসদ সদস্যের সুপারিশে রাজউকে চাকুরি পেয়ে ০২ জুলাই ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও আওয়ামী ঘরনার হওয়ায় ইমারত পরিদর্শক থেকে পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন সহকারি অথরাইজড অফিসার। বর্তমানে তিনিও কর্মরত রয়েছেন জোন-৩/২ এ। অথরাইজড অফিসার শেগুফতা শারমিন আসরাফ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন দুইজনেই আওয়ামী ঘটনার হওয়ায় একসাথে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির সিন্ডিকেট। তার দুর্নীতি নিয়ে ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে দৈনিক আমার সময় পত্রিকায় “রাজউক জোন-৩/২ এর সহকারি অথরাইজড অফিসার মামুনে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে দুর্নীতির ভিতকে আরো মজবুত করতে সহকারি অথরাইজড অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন দলে ভিড়িয়েছেন দুইজন দুর্নীতিগ্রস্ত ইমারত পরিদর্শক মো: আবুল কালাম আজাদ ও সোলাইমান হোসাইনকে।

মো: আবুল কালাম আজাদ, ইমারত পরিদর্শক জোন-৩/২, রাজউক মো: আবুল কালাম আজাদ :  সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার শেরখালীর মৃত আব্দুল কাদেরের পুত্র মো: আবুল কালাম আজাদ। দশম ও একাদশ সংসদের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন এর সুপারিশে রাজউকে চাকুরি পেয়ে ০২ জুলাই ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনিও কর্মরত রয়েছেন জোন-৩/২ এ। সহকারি অথরাইজড অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আবুল কালাম আজাদ একই সময়ে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করার কারণে শেগুফতা সিন্ডিকেট আরও জোরালো হয়েছে। ২৪ মার্চ ২০২৩ সালে জাকির পাটোয়ারী নামে এক ব্যক্তি আবুল কালাম আজাদের ঘুষ বাণিজ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাজউক চেয়ারম্যান বরাবরে অভিযোগ জানালেও আবুল কালাম আজাদের কিছুই হয়নি আর এতেই তার দুর্নীতি করার স্পৃহা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৪ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে এক গণমাধ্যমে “রাজউকের অথরাইজড অফিসার ও ইমারত পরিদর্শকের বিরুদ্ধে নোটিশ বাণিজ্যের অভিযোগ” শিরোনামে আবুল কালাম আজাদ এর ছবি সংযুক্ত সংবাদ প্রকাশ হলেও রাজউকের ঊর্ধ্ব পদস্থ কর্মকর্তাদের টনক নড়েনি।

সোলাইমান হোসাইন, ইমারত পরিদর্শক জোন-৩/২, রাজউক
সোলাইমান হোসাইন :  ঝিনাইদহের চাপড়ী গ্রামের সন্তান মোঃ সোলাইমান হোসেন রাজউকে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন ২৫ অক্টোবর ২০১৫ সালে। যোগদানের পরে জোন ১/৩ এ কর্মরত থাকাকালিন নোটিশ ব্যবহার করে ভবন মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপার্জন, ঘুষ গ্রহন করে অনৈতিক ও আইন বিরোধী কাজে লিপ্ত হন।বর্তমানে তিনিও কর্মরত রয়েছেন জোন-৩/২ এ। জানা গেছে সোলাইমান হোসেনের কোন এক চাচা রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, সোলাইমান হোসেনের স্ত্রী ও রাজউকের একজন কর্মকর্তা।

ইমারত পরিদর্শক সোলাইমান হোসেনের অপকর্ম নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ হলেও বহাল তবিয়তেই আছেন এই কর্মকর্তা। সোলাইমান হোসেনের অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে একাধিক গণমাধ্যম। এই কর্মকর্তার একাধিক অপকর্ম নিয়ে রিপোর্টিং এর অনুসন্ধান টিমের অনুসন্ধান শেষে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন “রাজউকের পরিদর্শক সোলাইমানের অপকর্মের শেষ কোথায়?” শিরোনামে ৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সংবাদ প্রকাশ হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে।

রাজউকের এই সকল কর্মকর্তাদের অপকর্ম নিয়ে গত ২ ডিসেম্বর  রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান সরকার (অবঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করে রিপোর্টিং এর অনুসন্ধানী একটি টিম। এতকিছুর পরেও এই দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়নি। তাহলে কি ধরে নিতে হবে রাজউক চেয়ারম্যান সহ রাজউক জোন-৩ শেগুফতা সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়! নাকি এর পিছনে রয়েছে গোপন সিন্ডিকেট?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *