আওয়ামী স্বৈরাচারের আরেক দোসর বিপিএমসিএ’র ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক  : বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) এর কার্যনির্বহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। বিপিএমসিএ’র মূল সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী স্বৈরাচারের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর পালিয়ে গেলে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন এই দায়িত্ব গ্রহন করেন।


বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরে জন্মগ্রহণকারী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ফরিদপুর কানেক্টশনের কারণে পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের কাছ থেকে অনেক অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করেছেন। ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন নিজেকে একজন অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু তার ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখেন এরকম ওয়াকিবহাল সূত্র জানিয়েছেন, তিনি ১৯৮৭ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনের পর ১৯৯৪ সালে জাপান থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তারপর ১৯৯৬ সালে আইচি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে যেটি আইচি মেডিকেল কলেজে রুপান্তরিত হয়। ফলশ্রুতিতে অধ্যাপক হওয়ার আগে সহকারি অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নূন্যতম অভিজ্ঞতা অর্জনের যে শর্ত রয়েছে তা তিনি কখনো প্রতিপালন করেননি। অথচ সর্বত্রই তিনি নিজেকে অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দেন। তার অধ্যাপক দাবি করা এক ধরনের প্রতারণা বলে ডাক্তারি পেশায় অভিজ্ঞ কয়েকজন ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন।


বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন পেডিএট্রিক সার্জারিতে। পিএইচডি একটি গবেষণামূলক ডিগ্রী। পক্ষান্তরে পেডিএট্রিক সার্জারি একটি অতিবিশেষায়িত চিকিৎসা ক্ষেত্র। এ ক্ষেত্রে বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা বেশি প্রয়োজনীয়। পিএইচডির মতো গবেষণামূলক ডিগ্রী পডিএট্রিক সার্জারির মতো ক্লিনিক্যাল বিষয়ে খুব বেশি দক্ষতা অর্জনে সাহাজ্য করে না বলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ কতিপয় চিকিৎসক মন্তব্য করেছেন।


বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরাতে আইচি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেসময় আইচি হাসপাতাল ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেনও শারীরিকভাবে নিগ্রহীত হন। এ ঘটনা নিয়ে তখনকার পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।

বিপিএমসিএ’র সভাপতির দায়িত্ব পালন কালে ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন পতিত আওয়ামী স্বৈরচারি সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং পরবাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের ঘনিষ্ট সহচর এম এ মবিন খান মিলে বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রলোভন ও ভয়তীতি দেখিয়ে শতশত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমানে বিপিএমসিএ’র নির্বাচন ব্যতিত ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পতিত স্বৈরচারি সরকারের পতনের পর স্বৈরচারের দোসররা সবাই পালিয়ে গেলেও ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ভোলপাল্টে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত। এদের অতীত অপকর্মের জন্য শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগী প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন আগামী ১০ জানুয়ারি ২০২৫ বার্ষিক সাধারণ সভা আহবান করেছেন, যার ৩ নং আলোচ্যসূচী ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে ২ বছরের জন্য কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন। নির্বাচন তফসিলে ঘোষণা অনুযায়ি নির্বাচনের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২৫। কিন্তু ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগেই ১০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন কিভাবে সম্ভব? এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্নের উদ্রেগসৃষ্টি হয়েছে। বিপিএমসিএ’র অনেক সদস্য ধারণা করেছেন নির্বাচন না দিয়ে সাধারণ সভার মাধ্যমে ক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধরে রাখার অপচেষ্টা করছে মোয়াজ্জেম হোসেন গংরা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার তুরাগে অবস্থিত ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন। এই মেডিকেল কলেজে পূণাঙ্গ হাসপাতাল নেই। এছাড়া মেডিকেল কলেজে ৫০ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস ঘাটতি এবং হাসপাতালে ৭০ শতাংশ বেড অকুপেন্সি ঘাটতি রয়েছে বলে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ক্লাসরুম সংকট, লাইব্রেরিতে অপর্যাপ্ত আসন সংখ্যা, মিউজিয়ামে সরঞ্জাম ঘাটতিসহ নানা শর্ত উপেক্ষা করে চলছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম। এই সব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েও শাস্তির পরিবর্তে আসন সংখ্যা বারবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন আওয়ামী স্বৈরচারি সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে এসব অপকর্ম করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিপিএমসিএ এর নতুন কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে হবে। সাধারণ সভায় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কমিটি হওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *