গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি ডেইরি ফার্মের মালিক দিলীপ কুমার হাজরা।
মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মধুমতি ডেইরি ফার্মের মালিক দিলীপ কুমার হাজরার বিরুদ্ধে সরকারি যায়গা ও সাধারণ মানুষের কৃষি জমি জবরদখল সহ নদী দূষণের অভিযোগ উঠেছে।
উল্লিখিত মধুমতি ডেইরি ফার্মটি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের লেবুতলা গ্ৰামে।
এবিষয়ে সরজমিনে লেবুতলা গ্ৰামে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায়, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে দিলীপ কুমার প্রচুর পরিমান নদীর চর দখল করছে। ডেইরি ফার্মের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে মধুমতি নদীতে ফেলে নদী দূষণ করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে মামলা-হামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। কয়েকদিন ধরে রাতের আঁধারে ১নং খাস খতিয়ানের জমি দখলের উদ্দেশ্যে বালু ভরাট করছে।
এবিষয়ে সুদাস চন্দ্র মন্ডল নামের এক ভুক্তভোগী গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে টুঙ্গিপাড়া আমলী আদালতে ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর- ৫৯৯/২৪। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
একাধিক ভুক্তভোগীদের মৌখিক অভিযোগ ও মামলার বর্ননা থেকে জানা যায়, ভূমিদস্যু দিলীপ কুমার হাজরা টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী গ্ৰামের মৃত চিত্ত রঞ্জন হাজরার ছেলে। সে এলাকার প্রভাবশালী ও আওয়ামীলীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে ছোট ডুমুরিয়া মৌজার লেবুতলা গ্ৰামে সামান্য কিছু যায়গা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন কৌশলে এলাকার বেশ কিছু নিরিহ মানুষের কৃষি জমি নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে। পাশাপাশি মধুমতি নদী থেকে যেগে ওঠা চর স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের ম্যানেজ করে তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে দখল করে নেয়।
ওই সময়ে লেবুতলা গ্ৰামের মৃত হুমায়ূন কবিরের ৫০ শতাংশ, শ্যামল ঘরামী ও সমর ঘরামীর ৩২শতাংশ, নিজামুল হক মোল্লার ৪০ শতাংশ, সুদাস চন্দ্র মন্ডলের ৯শতাংশ সহ এলাকার দূর্বল প্রকৃতির বেশকিছু মানুষের কৃষি জমি দখল করেন প্রভাবশালী দিলিপ কুমার হাজরা। তৎকালীন সময়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও প্রতিকার পাইনি জমির প্রকৃত মালিকগণ। এরপর ২০০৬ সালে মধুমতি ডেইরি ফার্ম স্থাপন করেন দিলিপ কুমার।
পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন। পুকুরের পাড়ে রোপন করেন বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ।অন্যান্য যায়গায় সবজি আবাদ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। এছাড়াও খামার স্থাপনের শুরু থেকে মধুমতি ডেইরি ফার্মের বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে মধুমতি নদীতে ফেলে নদী দূষণ করে আসছেন। ভূমিদস্যু দিলীপ হাজরা দীর্ঘ বছর বৈধ অবৈধ জায়গা মিলিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করলেও আওয়ামী নেতাদের ভয়ে এতো দিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
ভুক্তভোগী হেলেনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার মৃত স্বামীর ক্রয়কৃত একবিঘা যায়গা তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে দখলে রেখেছে দিলীপ কুমার। গ্ৰামবাসীরকাছে বিচার চেয়েও ন্যায় বিচার পায়নি। এই এলাকাটিতে পুরো হিন্দু বসতি থাকায় আমরা একঘর মুসলিম নিরুপায় হয়ে পড়েছি।
আরেক ভুক্তভোগী শ্যামল ঘরামী জানান, গ্ৰামবাসীর বিচার সালিশে একাধিক বার তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ১০ বছরেও ফেরত দেয়নি দিলিীপ কুমার।
মামলার বাদী সুদাস মন্ডল জানান, ভূমিদস্যু দিলীপি কুমার টাকার বিনিময়ে এলাকার লাঠিয়াল বাহিনী ব্যবহার করে জমির প্রকৃত মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। আমাকেও মামলা তুলে নিতে লোক মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করেছে।
এসকল অভিযোগের বিষয়ে দিলীপ কুমার হাজরা জানান আমি কারো যায়গা অবৈধভাবে দখল করিনি। একটি কুচক্রী মহল আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এলাকার সুদাস মন্ডল নামের এক খারাপ ব্যক্তি ইতোমধ্যে আমার নামে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি তার খামারের বর্জ্য মধুমতি নদীতে ফেলানোর কথা স্বীকার করে বলেন খুব শিঘ্রই বিকল্প স্থানে বর্জ্য ফেলানোর ব্যবস্হা করা হবে।