নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় গত ৮ নভেম্বর। অভিযোগটি দায়ের করেন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
ওই অভিযোগ দায়েরের ইন্ধনদাতা হিসেবে এবং এর পেছনে অর্থের যোগানদাতা ছিলেন রয়েল ফ্যামিলির ঘনিষ্ঠজন ও আওয়ামী লীগ সরকারের ডোনার এনআরবি ব্যাংকের দুই পরিচালক মো. জাহিদ ইকবাল ও মো. জামিল ইকবাল। এছাড়াও, এই দুই সহদোরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারসহ নান দুর্নীতির বিষয় উল্লেখ করে গত ১১ নভেম্বের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন গাজী সিরাজুল ইসলাম নামের জৈনেক অ্যাডভোকেট।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, এই দুই পরিচালক আপন দুই ভাই এবং বিগত স্বৈরাচার সরকারের দোসর। শেথ হাসিনা, শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিকীসহ সালমান এফ রহমানের নানা অপকর্মের সহযোগী। তাদের অবৈধ টাকা দেশ থেকে লন্ডন ও দুবাই পাচার করার দায়িত্বে ছিলেন জাহিদ ও জামিল। এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে অবৈধ টাকার একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সাবেক ভুমিমন্ত্রীর অধিকাংশ টাকাও লন্ডন ও দুবাই পাচার করা হয়েছে এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে দুই সহোদরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়।
এছাড়া, ‘জামিল ইকবাল লিমিটেড’ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ঠিকাদারীর কাজ করতো প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমে নির্দিৃষ্ট এরিয়াতে কাজ করলেও পরবর্তীতে দেশব্যপী কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। নিম্নমানের কাজের কারণে তাদের প্রতিষ্ঠান কালোতালিকাভূক্ত হয়। পরে স্াবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে অব্যাহতি পায় প্রতিষ্ঠানটি।
সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা রক্ষা বাঁধ মেরামতের কাজ করে জামিল ইকবাল লিঃ। গুজা-মিল দিয়ে কাজ করার পরে তা ভেঙেও যায়। এই বাঁধের আওতায় কৃষকের ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ঘটনায় সরকার মামলা করে জামিল ইকবালসহ ১৭ জনের নামে। তখনও দুই ভাই লন্ডনে পালিয়ে যান। পরে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে ও টাকার বিনিময়ে চার্জশিট থেকে নিজেদের নাম কাটিয়ে নেন।
এছাড়া, পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নিম্নমানের কাজ করার কারণে দুইবার বাঁধ ভেঙে যায়। সেই ঘটনাটিও টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়া হয়। দুই সহোদরকে স্বৈরাচার সরকারের বড় আকারের ডোনার বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। মুজিববর্ষসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তারা আর্র্থিক সহযোগিতার বিভিন্ন ছবিও সংযুক্ত করা হয় আবেদনটির সাথে। জামিল ইকবাল ও জাহিদ ইকবাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একাধিকবার কয়েক কোটি টাকা (দলীয় ফাণ্ডে) প্রদান করেছেন। সেসব ছবিও সংযুক্তি হিসেবে রয়েছে এই আবেদনের সাথে।
সরকার পরিবর্তনের ফলে গত ৫ আগস্টের পরে দুইভাই লন্ডেন পালিয়ে যান। তাদের লন্ডনের বাড়িতে পালিয়ে যাওয়া অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া এসব আওয়ামী লীগ নেতাদের লন্ডনে তার নিজ বাড়িতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। লন্ডনে তারা একাধিক বাড়ি ক্রয় করেছেন এবং তাদের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশ থেকে টাকা পাচার করে এসব বাড়ি ক্রয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের ডোনার হিসেবে তারা দুইভাই সিলেটে বেশ পরিচিত। শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সময় তারা কোটি কোটি টাকা ডোনেশন দিয়ে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নিজেদের প্রভাবশালী হিসেবে প্রকাশ করেছেন।
দুই সহোদরের সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই সম্পর্কের সেঁতু-বন্ধন তৈরি করে দিয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
যিনি ড. ইউনুসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এছাড়াও এই দুই ভাইয়ের সমস্ত আপদ-বিপদ রক্ষা করার দায়িত্বে ছিলেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মোমেন, শফিকুর রহমান ও সালমান এফ রহমান।
২৪ এর বিপ্লব আন্দোলনেও তারা আনোয়ারুজ্জামানের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ডোনেশন করে। পরে অবস্থা খারাপ দেখে দুইভাই লন্ডনে পালিয়ে যান। মেয়র আনোয়ারও পালিয়ে লন্ডনে চলে যান এবং জামিল ও জাহেদের বাসায় তিনি আশ্রয় নেন।
এরপর গত ৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে তিনি ওই মামলাটি করেন। এতে আর্থিকসহ সবরকম সহযোগিতা করেন এনআরবি ব্যাংকের এই দুই পরিচালক জামিল ও জাহিদ। দুই সহোদর লন্ডনে বিএনপি‘র বিভিন্ন নেতাদের সাথে লবিং করে এবং টাকা দিয়ে অনেককে ম্যানেজ করেন। যার মধ্যে বিএনপি’র লন্ডন সভাপতি এম এ মালেক তার মামা হয় বলেও এখন ঢালাও করে তা প্রচার করছেন এই দুই পরিচালক।
সরকার পতনের পরে এম এ মালেক যখন দেশে আসেন তারপরে জাহেদ ইকবালও লন্ডন থেকে দেশে আসেন। এবং নিজেদের পীঠ বাঁচানোর জন্য বিএনপি নেতাদের সাথে যোগাযোগ করার সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাদের এসব দুর্নীতি, লুটপাট ও দেশের টাকা পাচারসহ সব রকম দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তপূর্বক তাদেরকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধও জানানো হয় এই আবেদনে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য জাহেদ ইকবালের সেলফোনে কল করলে তার বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি বিধায় তার কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।