সিলেট প্রতিনিধি : পরিবেশ বিনষ্টের মুল কারিগর ও ভূমি খেকো জালিয়াত চক্রের মাফিয়া রতন মনি মোহন্ত ওরফে ব্যাঙ মোহন্ত লক্ষ লক্ষ টাকা জরিমানা গুনলেও কোন ভাবেই থামছেনা তার দৌড়াত্ব। ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে পাহাড় (টিলা) রকম ভূমি বিনষ্ট করে। উর্ধ্বে ১৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তাকে জরিমানা গুণতে হয়েছে। কিন্তু এতেও তার টনক নড়েনি।
রতন মনি মোহন্ত ওরফে ব্যাঙি মোহন্ত দৃশ্যমান টিলা (পাহাড়) কেটে নির্বিচারে পরিবেশ বিনষ্টের মুল কারিগর হয়ে বেশ কয়েকবার পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে মামলাভুক্ত হলেও বার বার বড়ো অংকের টাকা জরিমানা গুণে নিজেকে আত্মরক্ষা করছে।
সর্বশেষ ২৭ মার্চ ২০২৪ ইং-তারিখে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র শাহপরাণ (রহঃ) থানাধীন মেজরটিলা, ইসলামপুর এলাকার ফাল্গুনি, আবাসিক এলাকাধীন দেবপুর মৌজার ১২৬৯, ১২৭৬২ ও ১২৬৩ নং- দাগের টিলা (পাহাড়) কেটে পরিবেশ বিনষ্ট করে। পরে এঘটনার সত্যতা পেয়ে সিলেট জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের পরিদর্শক মোঃ মামুনুর রশীদ বাদি হয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৩/৮৩। ১৫(১) টেবিলের ৫ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)। এতে প্রধান আসামি করা হয় উত্তরা আবাসিক এলাকা (নাথপাড়া) রজনী নিবাস, ২৩৩/ই, মৃত-রসময় মোহন্তের ছেলে শ্রী রতন মনি মোহন্ত (৫৭) সহ আরো একজনকে। বর্তমানে মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।
এর আগে দেবপুর মৌজার দক্ষিণ ইসলামপুর ফাল্গুনি এলাকায় বিরিন্দার নামে একটি টিলা কাটার অপরাধে রতন মনি মোহন্ত ওরফে ব্যাঙি মোহন্তকে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি এক মাসের মধ্যে ওই টিলার মাটি ভরাট করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু রহস্য জনক কারনে আজো সে এই টিলা মাটি ভরাট করেনি। ১৪০ ফুট উচ্চতার টিলা নির্বিচারে ধ্বংস করেছে সে।
একপর্যায় ঢাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর তাকে তলব করলে পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী এ রায় প্রদান করেন। এসময় অভিযুক্ত জেলা জজ আদালতের কমিশন হিসেবে কর্মরত রতন মনি মোহন্ত শুনানিতে উপস্থিত হয়ে পাহাড় কাটার অপরাধ অকপটে স্বীকার করেন। তিনি জরিমানা পরিশোধ এবং ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে যাতে আইনগত ব্যবস্থা যেনো না নেওয়া হয়, সে বিষয়ে অনুনয় বিনয় করেন।
তিনি জরিমানার প্রথম কিস্তি বাবদ ১০ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করলে অবশিষ্ট টাকা পরবর্তী ১ সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে পরিশোধের নির্দেশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ইং- ঢাকাস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি টিম এ টিলায় অভিযান চালিয়ে টিলা কর্তনের প্রমাণ পায়।
প্রসঙ্গগত, রতন মনি মোহন্তের বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতা, অল্পদিনে অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকা উপার্জন ও পাহাড়-টিলা কর্তনের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও তার লাগাম টেনে ধরতে পারছেনা প্রশাসন। যদিও তৎকালীন সময়ে অবশিষ্ট পাহাড়/টিলার বেআইনি শ্রেণী পরিবর্তন, ভূমি মালিকানার পরিবর্তন ও হস্তান্তর কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য সিলেট জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়া হয়। অথচ আইন প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিলেট মহানগরীতে গড়ে তোলেছে ত্রাসের রাজত্ব।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, রতন মনি মোহন্ত কৌশল অবলম্বন করে কথিত বডি গার্ড ধীরেন্দ্র দেব নাথ নয়নের নামে বেশ কিছু ভূমি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অনেক টিলা রকম ভূমিরও কাগজপত্র সেই নয়নের নাম যুক্ত রয়েছে। এর ফলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী শাসনামলে জিরো থেকে কোটিপতে বনে যাওয়া এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), গোয়েন্দা সংস্থা যথাযথ তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে এ সকল অপকর্মের আলামত।