নিজস্ব প্রতিনিধি (সুনামগঞ্জ) : ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের গহীনে চোরাচালানের কয়লা আনতে গিয়ে কোয়ারি ধসে লোকমান মিয়া নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
নিহত লোকমান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের সীমান্ত গ্রাম লাকমার বন্দের হাটির মোহাম্মদ আলী ওরফে বকুলের ছেলে।
শনিবার বেলা ০১টার দিকে বিজিবি সিলেট সেক্টরের ২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টেকেরঘাট কোম্পানী সদরের বালিয়াঘাট বিওপির ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে থাকা কয়লা কোয়ারি ধসে ওই শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
শনিবার দুপুরে উপজেলার টেকেরঘাটের বালিয়াঘাট বিওপির আওতাভুক্ত লাকমা সীমান্ত গ্রামের মানুষজন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সাফিল মিয়া লোকমান নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, উপজেলার লাকমা সীমান্ত গ্রামের কিয়ামতের ছেলে চিহ্নিত মাদক কারবারি লিটন ও লাকমা পূর্বপাড়ার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে সাইফুলের অধীনে শনিবার ভোররাতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মেইন পিলার ১১৯৮ অতিক্রম করে মেঘালয় পাহাড়ের গহীনে থাকা কোয়ারি থেকে সীমান্ত গ্রামের শতাধিক শ্রমিকের সাথে লোকমান চোরাচালানের কয়লা আনতে যায়।
পাহাড়ের গহীনে থাকা কোয়ারিতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে শ্রমিকরা অন্ধকার কোয়ারি থেকে বের হয়ে আসার পথে কোয়ারি ধসে কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। ওই সময় কোয়রি ধসে লোকমান কোয়ারির ভেতর নিহত হন।
সাথে থাকা অন্য শ্রমিকরা লোকমানের মরদেহ লাকমা সীমান্ত গ্রাম বন্দের হাটি বাড়িতে পৌছে দিয়ে সটকে পড়েন। শনিবার ভারতের মেঘালয়ে ধসে পড়া কোয়ারি ফেরত একাধিক শ্রমিক এমন তথ্য নিশ্চিত করেন।
উপজেলার লাকমা সীমান্ত গ্রামের কিতাব আলীর ছেলে চিহ্নিত মাদক কারবারি লিটন ও লাকমা পূর্বপাড়ার মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে সাইফুলের নিকট শ্রমিক লোকমান নিহত ও কয়লা চোরাচালান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, এলাকার অনেকেই সব কিছু ম্যানেজ করেই কয়লা চোরাচালানের কারবার করছে, এতে দোষের কিছু দেখছি না।
অভিযোগ রয়েছে তাহিরপুর থানা, টেকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের কিছু অসৎ অফিসারদের গোপন মদদে ও বিজিবির কিছু অসৎ সদস্যদের সহযোগিতায় সীমান্তের চাঁনপুর থেকে টেকেরঘাট, বালিয়াঘাট, চারাগাঁও সীমান্তের বিভিন্ন ঘাট দিয়ে দিবারাত্রী চোরাচালানের কয়লা নিয়ে আসার সুযোগ দেয়া হয়েছে কয়লার বস্তা প্রতি, টন প্রতি ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে।
এসব চোরাচালানের কয়লা বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন,চারাগাঁও শুল্ক স্টেশনের বেশ কিছু অসাধু আমদানিকারকের ডিপোতে, সীমান্ত গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি মজুদ করে ভুয়া চালানপত্র, সমিতির স্লিপ,এলসিকৃত কয়লার বিল অফ এন্ট্রির ফটোকপি টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের আনোয়ারপুর, নেত্রকোনার কলমাকান্দা, কিশোরগঞ্জের চামড়াঘাট, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন ইটভাটা এবং কয়লা বিক্রয়ের ঘাটে ঘাটে সড়ক পথে, নৌ পথে ট্রলার, বাল্ক হেড বোঝাই করে চোরাচালানের কয়লা অবাধে বিক্রি করে আসছে চোরাকারবারি চক্রের একাধিক সদস্যরা।
উপরের নির্দেশ না থাকা সহ নানা অজুহাতে চোরাচালানের মজুদকৃত কয়লার ডিপো থেকে, সীমান্ত গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি মজুদকৃত চোরাচালানের কয়লা জব্দ কিংবা চোরাকারবারিদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতেও অনেকটা অনিহা প্রকাশ করেন থানা, পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ অফিসারগণ- সীমান্তে দায়িত্বরত বিওপির বিজিবি সদস্যরা।
শনিবার বিজিবি ২৮-বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টেকেরঘাট কোম্পানী সদরের কোম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল হান্নান বলেন, শ্রমিক লোকমান নিহত হওয়ার বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি।
ভারতে কয়লা আনতে যে এলাকা অতিক্রম করেছে শ্রমিকরা সেই এলাকা বালিয়াঘাট বিওপির এড়িয়া বলে জানান কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল হান্নান।
ব্যাটালিয়নের টেকেরঘাট কোম্পানী সদরের বালিয়াঘাট বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার সিদ্দিক বলেন, ভারতে কয়লা আনতে গিয়ে শাসকষ্ট দেখা দিলে বাড়ি নিয়ে আসার পথে লোকমান নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছে বলে জেনেছি।
তাহিরপুর থানার টেকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবুল কালাম চৌধুরী ভারতে কয়লা আনতে গিয়ে কোয়ারিতে কোন এক কারনে লোকমান নিহত হয়েছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করে জানান মরদেহ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কয়লা চোরাচালানে থানা পুলিশ, টেকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের কিছু অফিসারের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কয়লা চোরাচালানের সাথে আমি জড়িত নই, লোকজন মিথ্যাচার করছে।
শনিবার তাহিরপুরের টেকেরঘাট- বালিয়াঘাট সীমান্তের নানা শ্রেণিপেশার লোকজন জানান, ২০২৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের (১১ জানুয়ারি) পর্য্যন্ত গত ৭ থেকে ৮ মাসে লোকমান সহ কমপক্ষে ১৫ শ্রমিক ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের গহীনে বিভিন্ন কোয়ারি থেকে চোরাচালানের কয়লা উক্তোলন,কয়লা আনতে গিয়ে কোয়ারি ধসে হতদরিদ্র পরিবারের শ্রমিকরা নিহত হয়েছেন।