শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন

অর্থনীতি এইমাত্র বানিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভয়াবহ দরপতনের মুখে পড়ায় দেশের শেয়ারবাজারে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এ দাবি জানাতে বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধি দল রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) রওনা দিয়েছেন।
সাত সদস্যের এ প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে ডিএসই’র দায়িত্বশীলরা বলছেন, বিশ্ব শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের আইনে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। সুতরাং এ মুহূর্তে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখা যাবে না। তবে বিনিয়োগকারীদের পেনিক না হয়ে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করে শেয়ার ধরে রাখতে হবে।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন চলছে। এই পতনের কবলে পড়ে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছেন, নিঃস্ব হচ্ছেন। আমাদের দাবি এ মুহূর্তে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখতে হবে। পতনের কারণে ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে লেনদেন সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি জানাতে আমরা সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ডিএসইতে যাচ্ছি। সেখানে ডিএসই’র চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি জানাবো। আপাতত কিছুদিন লেনদেন বন্ধ রাখলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ এ বিষয়ে বলেন, আমাদের দাবি আপাতত শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রেখে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সেই বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রত্যেকটি ব্রোকারেজ হাউজকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ কোটি টাকার লেনদেন (ক্রয় ও বিক্রয়) করতে হবে। সেইসঙ্গে বাইব্যাক আইন বাস্তাবয়ন করতে হবে। এটা করতে পারলে শেয়ারবাজার অবশ্যই ভালো হবে।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের এই দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই’র চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, আমি সবসময় আফিসে থাকি না। আমাদের এমডি অফিসে থাকেন। বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি দল তাদের প্রস্তাব আমাদের এমডি’র কাছে তুলে ধরবেন। এমডি প্রয়োজন হলে তাদের এ প্রস্তাব পর্ষদে তুলে ধরবেন। তারপর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া এমডি চাইলে নিজস্ব ক্ষমতা বলেও কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
তবে ডিএসই’র এক পর্ষদ সদস্য জানান, ভারতের শেয়ারবাজারে একদিনে সূচক সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়লে অথবা কমলে সাময়িক লেনদেন বন্ধ রাখার বিধান রয়েছে। আর সূচক ২০ শতাংশ উঠলে অথবা পড়লে লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং এই মুহূর্তে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখা যাবে না। তবে সরকার চাইলে ভিন্নকথা।
এ বিষয়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ডিএসই’র পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। তাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে। আতঙ্কে পেনিক সেল না দিয়ে শেয়ার ধরে রাখতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সবাই বাজার ভালো করতে চেষ্টা করছে। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি এই বাজার ভালো হবে।
শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখতে বিনিয়োগকারীদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি বলেন, এটা সম্ভব না। কারণ আমাদের এখানে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখার আইন নেই। ভারতের শেয়ারবাজারে সার্কিট ব্রেকার আছে। পতন অথবা উত্থানের কারণে সূচক সেই সার্কিট ব্রেকার স্পর্শ করলে লেনদেন সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু আমাদের বাজারে সূচকের কোনো সার্কিট ব্রেকার নেই। কাজেই এটি করা যাবে না।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *