ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা  :  বোরো চাষ নস্যাৎ করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কে দায়ী করলেন সংবাদ সম্মেলনে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন মানবিক খবর সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

সুমন হোসেন, (যশোর)  :  আমরা গভীর ক্ষোভ, দুঃখ ও হতাশার সাথে জানাচ্ছি যে, ভবদহ জলাবদ্ধতা অঞ্চলে অধিকাংশ জমিতে এ বছর বোরো চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি অফিস অসত্য তথ্য প্রদান করে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে। বোরো চাষ হবার যে বাস্তবতা সৃষ্টি হয়েছিল তা নস্যাৎ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়ী।


বিজ্ঞাপন

বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভবদহ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দেন এবং আমাদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা প্রদান করেন। আমাদের দাবির ভিত্তিতে যেসব কাজ চলমান তা হলো-
১) আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ ও টেন্ডার করা হয়েছে। তবে খালের ইউ-ড্রেন অংশ ৩৩ ফুট চওড়া করায় যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে আমডাঙ্গা খালের স্লুইসগেট প্রসস্থ করার। সেক্ষেত্রে ইউ-ড্রেন কমপক্ষে আরও ১০ ফুট বাড়ানো দরকার। নচেৎ ভবিষ্যতে বাড়াতে গেলে নতুন সংকট ও অর্থ অপচয় হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এই জনপদ ডুবে যাবার যে সম্ভাবনা তা মোকাবেলায় পানি নিষ্কাশনের সকল পথ উন্মুক্ত প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আমডাঙা খালে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। সামগ্রিক বিবেচনায় ওই খালের ইউ-ড্রেন অন্তত ১০ ফুট প্রসস্ত করতে হবে সে মতামত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা অবহিত করেছি।
২) দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে বোরো চাষ করার লক্ষ্যে ভবদহ স্লুইসগেট থেকে ভাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়া হরি নদী খননের জন্য আমাদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৮টি খনন যন্ত্র প্রদান করা হয়। নদী খননের সাথে সাথে গেট খুলে দেবার সিদ্ধান্ত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চলেছে। অপরিকল্পিত ও কাজের দীর্ঘসূত্রিতা, গেট খুলে দেবার কাজে তালবাহানা, কুটযুক্তির মাধ্যমে ফসল ফলানোর জন্য উপদেষ্টা মহোদয়ের বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ করে দেওয়া হচ্ছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ একই সাথে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করা ও জনগণের সাথে প্রতারণামূলক অবস্থান নিয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে লুটেরা স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে টিআরএম প্রকল্প বাতিল ও পাম্প চালু করে নদীকে হত্যা করা হয়েছিল। বর্তমান দুর্ভোগের জন্য গণবিরোধী সে সিদ্ধান্ত দায়ী। এখনো সেই চক্র সক্রিয় এবং তারা সরকারের কাছে কিছু স্বাক্ষরসহ আবেদন করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষের মধ্যে সেই ভূত চেপে আছে। সে কারণেই সরকারি সিদ্ধান্ত বানচাল হতে চলেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও এর বিহিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এইমুহূর্তে ভবদহ স্লুইসগেট খুলে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার অব্যহত রাখলে ফসল ফলানো সম্ভব হতে পারে।


বিজ্ঞাপন

৩) টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করা হবে মর্মে সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টিআরএম বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৎপর। ফলে জনপদের মানুষের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, চলমান নদী খনন কাজের সাথে এখনই একটি বিলে টিআরএম চালু করা হোক তা না করা গেলে যে খনন কাজ হচ্ছে তা আবার ভরাট হয়ে যাবে। ফলে অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, ডুমুরিয়ায় নদী-খাল সংস্কারের কাজ অর্থহীন হয়ে পড়ছে। ফলে জরুরী ভিত্তিতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ ও চালুর উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
৪) পানিসম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে যশোর সার্কিট হাউজে গণশুনানিতে তিনি ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদারকি কমিটি গঠন করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক সে নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন।

এমতাবস্থায়, জরুরিভিত্তিতে নিম্নোক্ত দাবি বাস্তবায়নের আহবান জানাচ্ছি : 

১) আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ইউ-ড্রেন ৩৩ ফুটের স্থলে কমপক্ষে ১০ ফুট বাড়িয়ে ৪৩ ফুট করতে হবে ;
২) চলতি বোরো আবাদ সফল করার লক্ষ্যে ভবদহ স্লুইস গেট খুলে দিয়ে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা দুর করতে হবে। এক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা অপরিকল্পিত তৎপরতা বন্ধ করে ফসল ফলানো নিশ্চিত করতে হবে ;
৩) এখনই সম্ভাব্য বিলে টিআরএম চালু করতে হবে। এটা সমাধানের প্রধান উপায় হিসেবে আইনী দীর্ঘসূত্রিতার অবসান করতে হবে ;
৪) নদীগর্ভে সকল অবৈধ দখলদার স্থাপনা উচ্ছেদ ও তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে ;
৫। কৃষি ঋণ আদায় বন্ধ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, দিনমুজুর গরীব কৃষকদের খাদ্য দিতে হবে ;

আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করছি যে, খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা ও জলাবদ্ধতা নিরসন করার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগ যাতে ব্যর্থ না হয় তার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

উপরোক্ত দাবিতে আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপি এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে সংবাদ সম্মেলনে হুশিয়ারি দেওয়া হয়।

১৯ জানুয়ারি দুপুর ১টায় নীল রতন ধর রোডস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল। এসময় উপস্থিত ছিলেন- সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী, উপদেষ্টা তসলিম-উর-রহমান, সদস্য জিল্লুর রহমান ভিটু, অনিল বিশ্বাস প্রমুখ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *