নিজস্ব প্রতিবেদক : আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান যেখানে মরণব্যাধি ক্যান্সারের চিকিৎসা আবিস্কার করতে এখনো সক্ষম হয়নি;সেখানে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পল্টনে বসে প্রশাসনের নাকের ডগায় ক্যান্সার চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে যাচ্ছেন ”হোমিও বৈদ্য ” এস এম সারওয়ার নামের এক ব্যক্তি।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যেখানে এমবিবিএস পাস ছাড়া কেউ নামের সাথে ”ডা:” যোগ করতে পারেনা সেখানে; এস এম সারওয়ার নামের সাথে ডাক্তার যোগ করেই ক্ষান্ত হননি, সরকার স্বীকৃত কোন মেডিকেল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি না নিয়েই নিজেকে ” ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ” দাবি করছেন। দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত মৃত্যু পথযাত্রী ক্যান্সার রোগিদের আবেগকে পূঁিজ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
তথ্যমতে,জাতীয় ঔষধ নীতি ও ড্রাগ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী উপরোক্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন,দেশের বিদ্যমান আইন ভঙ্গ করে এমন প্রতারনা অনেকে হয়তো করছেন। কর্মের আওতায় থাকলে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমুহের এবিষয়ে নিয়মিত মনিটর পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে,তথাকথিত স্বঘোষিত ”ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক” গণস্বাস্থ্য হোমিও’র প্রতিষ্ঠাতা এস এম সারওয়ার ৪০টি’র বেশি রোগের ”বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক”! সারওয়ার-এর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র এসএসসি পাস। তিনি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পুরানা পল্টনের ৫৬/১ হোল্ডিংস্থ বায়তুল ভিউ টাওয়ারের ১২তলায় গণস্বাস্থ্য হোমিও চিকিৎসক নামে দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারসহ ৪০টির বেশি রোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। শুধু ঢাকায় নয় এসএম সারওয়ার তার নিজ এলাকা হবিগঞ্জ জেলার সদর থানার পিটি আই রোড, বাসা নং-৩৫৯৫ এ রয়েছে চেম্বার। তিনি কেবল মাত্র এসএসসি পাস করে ঢাকায় এসে হোমিও প্যাথিক কলেজে ভর্তি হয়ে কিছু দিন ক্লাস করে পরীক্ষা দেন। হোমিও প্যাথিক কলেজ থেকে পাস করে তিনি হোমিও ”ডাক্তার” হিসেবে সাইনবোর্ড ব্যানার ও ভিজিটিং কার্ড লাগিয়ে ঢাকার ১৪ পুরানা পল্টন দারুস সালাম মার্কেট-এর ৭ তলায় একটি কক্ষ নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেন।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ক্ষেত্রেও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন। বিশ্বখ্যাত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অনুকরনে নাম দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য হোমিও। এরকম নামের কারনে জনসাধারণ বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল দাবি করছেন।
জানাগেছে,এস এম সারওয়ারের বিশেষজ্ঞ ডিগ্রী লেখার কারণে তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান পাখি একাধিকবার লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন। গত ৩ ডিসেম্বর ২৪ ইং প্রথম লিগ্যাল নোটিশ করা হয়। নোটিশে ১৫ দিনের মধ্যে এস এম সাওয়ারের বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হয়। কিন্তু ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও এস এম সারওয়ার নোটিশের কোন জবাব না দেয়ায় গত ২৫ ডিসেম্বর-২৪ দ্বিতীয় বার লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় নোটিশের ও কোন জবাব দেন নাই। এস এম সারওয়ারের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেন নাই।
এড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান পাখি’র দ্বিতীয় লিগ্যাল নোটিশ সূত্রে জানা যায়, এস এম সারওয়ার দালাল শ্রেণীর মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি নিজেকে এশিয়ার বিখ্যাত ক্যান্সার চিকিৎসার জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত ক্যান্সার গবেষক, অধ্যক্ষসহ আরো একাধিক পদবী ব্যবহার করে থাকেন। এস এম সারওয়ারের কাছে লিগ্যাল নোটিশ দেয়ার কারণে এড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম পাখিকে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্যান্সার গবেষণার জন্য তিনি কোথায় ল্যাব ব্যবহার করেন তাও জানা যায়নি। একই সঙ্গে তিনি কোন হোমিও কলেজে অধ্যাপনা করছেন তাও রহস্যজনক। তিনি কিভাবে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সিকিৎসক হয়েছেন তা কেউ জানেনা। এস এম সাওয়ারের দ্বারা হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন। জনৈক ভূক্তভোগি জানান, তার নিকটতম কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন এস এম সাওয়ারের কাছে গিয়ে তার চিকিৎসা শর্তে দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন করার পরও কোন রোগ ভালো হয়নি। এবং দীর্ঘ সময় কালক্ষেপনের কারণে ভুক্তভোগীদের রোগ আরো বেড়ে গেছে। তিনি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে যেসব চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরেন এবং ৪০টি’র বেশি রোগের চিকিৎসা করে থাকেন তার মধ্যে একটি রোগও ভালো হওয়ার কোন নজির পাওয়া যায়নি। এই কথিত ”ক্যান্সার গবেষক” শুধু ঢাকায় নয় নিজ গ্রাম হবিগঞ্জের সাধারণ মানুষের সাথে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। সূত্রমতে, এস এম সাওয়ারের একটি দালাল চক্র রয়েছে। এই দালাল চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতাল ও গ্রামগঞ্জের রোগীর কাছে গিয়ে তাদের ভালো উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা বলে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে আসে। তার বায়তুল আমান চেম্বারে গেলে দেখা যায় ১৫/২০ জনের একটি দালাল চক্র অনবরত সেখানে বসে থাকে। কোন একটি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী এস এম সাওয়ারের কাছে কৌশলে নিয়ে আসতে পারলেই দালালদেরকে অর্থের একটি অংশ দেয়া হয়। ভুক্তভোগীরা অনেক সময়ে কাংখিত সেবা না পেয়ে এস এম সাওয়ারের চেম্বারে প্রতিবাদ করতে আসলে তাদেরকে নানা রকম হুমকি দেয়া হয়। রোগীরা ভয়ে প্রতিবাদ করেন না।
অন্যদিকে সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবু বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এস এম সারওয়ারের বিরুদ্ধে গত ৩১ ডিসেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। শাহবাগ থানার জিডি নম্বর ২২১৮। ফোজিত শেখ বাবু জিডিতে উল্লেখ করেন যে, গত ২৯ ডিসেম্বর দৈনিক জনতা পত্রিকায় প্রকাশিত “ডিগ্রি নেই তবুও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা: ডা. এস এম সারওয়ারের বিরুদ্ধে আইনজীবীর লিগ্যাল নোটিশ” শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাকে এবং সিনিয়র আইনজীবী নজরুল ইসলাম পাখিকে দোষী সাব্যস্ত করে ডা. এস এম সারওয়ার একটি মিথ্যা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।
এ বিষয়ে এস এম সাওয়ারের বক্তব্য নেয়ার জন্যে তার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।