মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী : আমি প্রতিবন্ধী আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমি নিজে একজন উদ্যোক্তা হয়ে এবং আমার সংসারের হাল ধরতে পারবো হ্যাঁ এমন কথাগুলোই বলছিলেন, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সুশীল হালদার এর প্রতিবন্ধী ছেলে জয় হালদার (১৮)। জয় হালদার জন্ম থেকেই দুটি হাত একেবারেই অকেজো জন্ম থেকে সে কোন প্রকার কাজকর্ম করতে পারেন না, কথা বলতেও রয়েছে অনেক অস্পষ্টতা , দুটি পা কোনরকম চালু থাকলেও হাঁটতে পারে না তিনি সোজা হয়ে ।
জয় হালদার ২০০৭ সালের মার্চ মাসের ১৩ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর থেকেই জয় হালদার অনেকটা রুগ্ন এবং ক্ষীন স্বাস্থ্যে ও প্রতিবন্ধকতার অধিকারী ছিলেন। যে কারণে জয় হালদার বেঁচে থাকবে এমন আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তার মা-বাবা। তারপরও সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় বেঁচে রয়েছে জয় হালদার। জয় হালদার ছাড়াও দিনমজুর কৃষক সুশীল হালদারের রয়েছে আরও একটি মেয়ে ও একটি ছেলে সহ তিন সন্তানের জনক। আজ থেকে প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছর আগে থেকে জয় হালদার পা দিয়ে দেখাতে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অসাধ্য কাজকর্ম ।
শুধু তাই নয়, হাতে কাজ করতে না পারলেও পা দিয়ে তিনি করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ল্যাপটপ কম্পিউটার সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফটো এডিটের কাজ । কোন লোক মোবাইল হ্যাক করলেও তিনি তাও সেই বুঝতে পারে এবং তাকে সনাক্ত করতে পারেন জয়। তিনি পায়ের সাহায্যে বিভিন্ন প্রকারের আবেদন লিখতে পারেন এবং সকল প্রকার বিল পে করার মতন যোগ্যতাও রয়েছে এই জয় হালদারের। অথচ তিনি গ্রন্থ কত কোন বিদ্যা বা কোন শিক্ষকের দ্বারা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেননি।
এটা এক কথায় বলতে গেলে অলৌকিক নিদর্শনের জ্বলন্ত উদাহরণ। সরে জমিন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেল রামশীল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের সুশীল হালদারের ছেলে জয় হালদারের সাথে কথা বলে ।
এ বিষয়ে জয় হালদারের পিতা সুশীল হালদারের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, জয় হালদার প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিলেও ভালো করে কথা বলতে পারেনা এবং হাত দিয়ে কোন প্রকার কাজও করতে পারে না কিন্তু ওর দুটি পা কোনরকম সচল থাকার কারণে, এই পা দিয়ে মোবাইল কম্পিউটারের বা ল্যাপটপে বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করতে সক্ষম আমার ছেলে।
কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি অথবা কোন প্রতিষ্ঠান বা সরকার যদি আমার ছেলেকে একটা কম্পিউটার দিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে আমার ছেলে সমাজের বোঝা না হয়ে, নিজেকে একজন উদ্যোক্তা বানিয়ে আশীর্বাদ হয়ে গড়ে উঠতে পারতো।
একই এলাকার শিক্ষক অবিরাম রায়ের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস অহিদ স্যার থাকাকালীন অবস্থায় একদিন জয় হালদার কে দেখতে এসেছিলেন, এবং তিনি জয় হালদার কে সহযোগিতা করার কথাও জানিয়েছিলেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ অব্দি কোন প্রকার সরকারি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে জয় হালদার কোন সহযোগিতা পায়নি। জয় হালদার জন্মগত প্রতিবন্ধী হলেও পায়ের মাধ্যমে ও যে অলৌকিকতা দেখিয়েছে তাতে আমরা সবাই বিস্মিত। আমাদের দাবি জয় হালদার কে সরকারি কোন সহায়তার মাধ্যমে একজন উদ্যোক্তা যেন হতে পারে সে ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়া।
সবশেষে জয় হালদার সকলের উদ্দেশ্যে বলেন আমাকে আপনারা সমাজের বোঝা মনে করবেন না। আমার বিশ্বাস আমি আপনাদের একটু সহযোগিতা পেলে আমি একজন উদ্যোক্তা হয়ে সমাজে অবদান রাখতে পারব।