নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানী থানাধীন মহাখালীতে কিশোর গ্যাং-এর বেপরোয়া কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। তাদের প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও সীমাহীন বেয়াদবির কারণে লজ্জায় মুখ লুকাতে হয় মুরব্বিদের। দলবল নিয়ে মহল্লার অলিগলিতে মহড়া, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শন, নারীদের ইভটিজিং, আধিপত্য বিস্তারে বিরোধী গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষ তাদের নিত্যদিনের ঘটনা। কেউ সাহস করে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তার জীবন নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অথবা তাদের অভিভাবকদের কাছে অভিযোগ করে ইতিমধ্যে এলাকার অনেকেই লাঞ্ছিত হয়েছেন। অসম্মান হয়ে লজ্জায় এলাকা ছাড়ার দশা হয়েছে। এমন অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে মহাখালীর কিশোর গ্যাং-এর কয়েকটি গ্রুপের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব কিশোর গ্যাং গুলোকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য শেল্টার দেন স্থানীয় কিছু বড় ভাই নামক নেতা। তাদের দিয়ে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, হামলা, দখল ও মিটিং মিছিলে ব্যবহার করেন বড় ভাইরা। তার বদলে কিশোর গ্যাং-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে যেভাবেই হোক তা ম্যানেজ করে ফেলেন বড় ভাইরা। প্রতিটি গ্যাং কোনো না কোনো রাজনৈতিক পদপদবি থাকা বড় ভাইয়ের অধীনে তাদের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে।
এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য সূত্রে জানা যায়, আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের পর একদলের বড় ভাইরা পালিয়ে গেলেও কিশোর গ্যাং গুলো আগের জায়গাতেই আছে। তারা শুধু বড় ভাই বদলেছে। কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকলেও এখন তারা নতুন বড় ভাইয়ের ছায়ায় আগের চেয়েও অধিক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বড় ভাইরাও দল ভারী করতে এবং ক্ষমতার জানান দিতে তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে।
মহাখালীতে সবচেয়ে বেশি আলোচনা যেই কিশোর গ্যাং টিকে ঘিরে তাদের দেখা যায় ওয়্যারলেস গেইটে স্কয়ার বিল্ডিং এর পিছনে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে এক সঙ্গে ২০-৩০ জন আড্ডা দিতে। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে আতশবাজি করে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে। তারা এই এলাকার ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদাবাজি করে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো তাদের লাগামহীন মাদক ব্যবসা নিয়ে। তারা ইয়াবা ব্যবসা করে। তারা পুরো এলাকায় ভয়াবহ ভাবে মাদক ছড়িয়ে দিয়েছে। আগে এই গ্যাং-টি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বনানী থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. নাছির এর হয়ে কাজ করতো। এখন তারা বনানী থানা ছাত্রদলের সভাপতি মো. নাঈম উদ্দিন মিজবাহ শেল্টারে কাজ করে।
উক্ত কিশোর গ্যাং-এর প্রধান সমন্বয়ক আহসানুল হাসান ইমন ওরফে টাকলা ইমন ও তার সহযোগী জুয়েল ওরফে রকার জুয়েল। টাকলা ইমন নিজেকে নাঈম উদ্দিন মিজবাহ এর ভাই বলে পরিচয় দেয়। তাদের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কার্যকলাপে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা। গত ২১ জানুয়ারি, মহাখালীতে জল খাবার রেস্টুরেন্ট ও মিষ্টান্ন ভান্ডারে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তারা জড়িত।
তার পরের দিন ২২ জানুয়ারি, বনানীর এরশাদ নগর এলাকায় জায়গা করতে গিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বেলতলার বাসিন্দারা ২৬ জানুয়ারি রাতে বনানী থানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। গত ১৫ অক্টোবর, এই কিশোর গ্যাং তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কড়াইল বস্তির একজন অটোরিকশা চালককে আটকে রেখে তার পরিবারের কাছ থেকে সাত হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে।
এর আগে গত ৮ আগষ্ট, তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের পেছনে বিটিসিএল কলোনির জমি দখলে সহযোগিতা করে এক দখলকারীদের।
কয়েকমাস আগে এই কিশোর গ্যাং-এর এক সদস্য এলাকার এক দোকান থেকে বিকাশে এক নাম্বারে ১০ হাজার টাকা পাঠায়। টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার পর দোকানদারকে বলে টাকা পরে দিবে। দোকানদার ছেলেটিকে আটকিয়ে রেখে তার অভিভাবককে খবর দেয়। ছেলেটির মা এসে বলে টাকা রাতে দিয়ে যাবে।
রাতে টাকা না দিয়ে উল্টো তার গ্যাং এর সদস্যদের নিয়ে এসে দোকানদারকে হুমকি ধামকি দেয়। ভয়ভীতি দেখায়। দোকানদার এ ঘটনায় বনানী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে স্থানীয় ক’জন বিএনপি নেতা দোকানদারকে অভিযোগ তুলে নিতে অনুরোধ করে। তাদের অনুরোধ অভিযোগ তুলে নিলেও এখনও দোকানদার ১০ হাজার টাকা পাননি।