সংশোধিত কর নীতি নিয়ে তামাক খাতের শীর্ষ নেতাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ  :  কর্মসংস্থান, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও শিল্পখাতের প্রত্যাশিত স্থায়িত্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা

Uncategorized অর্থনীতি কর্পোরেট সংবাদ জাতীয় ঢাকা বানিজ্য বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

বাম থেকে জেটিআই বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাউন্ট পল হলওয়ে, বিএটি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনীষা আব্রাহাম ও ফিলিপ মরিস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-উর-রহমান মাহমুদ।

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক   :  সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক ও কর নীতির সংশোধন, বিশেষ করে সিগারেট খাতে উল্লেখযোগ্য সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিগারেট উৎপাদন খাতের শীর্ষস্থানীয় তিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ। পরিবর্তিত শুল্ক ও কর নীতির কারণে দেশে টেকসই উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়বে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিএটি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনীষা আব্রাহাম, জেটিআই বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাউন্ট পল হলওয়ে ও ফিলিপ মরিস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-উর-রহমান মাহমুদ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংশোধিত শুল্ক ও কর নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশকে সমীচীন মনে করছেন তারা।


বিজ্ঞাপন

এক বিবৃতিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ জানিয়েছেন, “দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে এবং এক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থনও রয়েছে; তবে, একইসাথে আমরা বিশ্বাস করি, শুল্ক ও কর নিয়ে সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তন এ শিল্পখাত, সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি এবং এ খাতের ওপর নির্ভরশীল লাখো মানুষের জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”


বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি, অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্বে মোট ৩৪৬.৪ বিলিয়ন টাকা কর হিসেবে প্রদান করে অবদান রেখেছে সিগারেট খাত, যা দেশের মোট কর রাজস্বের ১১.৬ শতাংশ। যেখানে বৈশ্বিকভাবে সাধারণত একটি দেশের মোট কর রাজস্বের মাত্র ১ শতাংশ তামাক খাত থেকে আসে, সেখানে আমাদের ক্ষেত্রে তা ১০ গুণ বেশি। উল্লেখ্য যে, দেশের গত ৫০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ ঘটে যখন জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজকে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে অধিগ্রহণ করে। এছাড়া, প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে সিগারেট শিল্পখাত।


বিজ্ঞাপন

এ শিল্পখাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা সিগারেট খাতের অবদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “তামাক খাত দেশের অন্যতম প্রধান রাজস্ব-উৎপাদনকারী খাত। দেশের সংকটকালীন সময় দেশের অর্থনীতিতে এ খাত উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার পাশাপাশি বছর প্রতি দ্বিগুণ অঙ্কের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ভূমিকা রেখে চলেছে। শুধুমাত্র ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই, দেশের রাজস্বে এ শিল্পখাতের অবদান প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।

গত এক দশকে, বাংলাদেশে তামাক খাতের কর হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে—২০১৪ সালে খুচরা মূল্যের ওপর ৬৬ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৭৭ শতাংশে কর হার উন্নীত করা হয়েছিল। সর্বশেষ কর বৃদ্ধির মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানুয়ারি ২০২৫-এ খুচরা মূল্যে ৮৩ শতাংশ কর হার নির্ধারণ করেছে।

শিল্পখাতের অংশীজনদের সাথে আনুষ্ঠানিক কোন পরামর্শ ছাড়াই সংশোধিত এই নীতি ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সিগারেট শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন করনীতির কারণে বৈধ শিল্পখাতের বিক্রয় ও মুনাফার পরিমাণ হ্রাস পাবে, যা এ খাতের ভ্যালু চেইনের সাথে সম্পৃক্ত ৪৪ লাখ মানুষের জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যার মধ্যে রয়েছেন দেড় লাখের বেশি কৃষক এবং ১৩ লাখ খুচরা বিক্রেতা ও শ্রমিক।

এছাড়াও, সিগারেট খাত ৪৭.৫ শতাংশ কর্পোরেট কর প্রদান করে, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ কর হার। উল্লেখ্য, শীর্ষস্থানীয় এ তিন প্রধান তামাক প্রতিষ্ঠান সিগারেট খাতের সরকারি রাজস্বে প্রায় ৯০ শতাংশ অবদান রাখে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ অংশীজনদের সাথে কোন পরামর্শ ছাড়াই নীতি পরিবর্তন ও হঠাৎ কর বৃদ্ধি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, “সবচেয়ে বড় এবং অন্যতম পুরনো প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ এ খাতে হওয়া সত্ত্বেও সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তনের ফলে এ শিল্পখাতের প্রবৃদ্ধি রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে, ব্যবসায়িক খাতে নীতিগত অসঙ্গতি তৈরি হবে, যা শেষ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ কর বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একইসাথে, তারা এ খাতকে আরও বিভিন্ন শঙ্কা থেকে রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক রোডম্যাপ নিয়ে আসা এবং টেকসই নীতি প্রণয়নে অংশীজনদের সাথে অর্থপূর্ণ আলোচনা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

তারা বলেন, “আমরা আশা করি, এ খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক নীতি প্রণয়নের একটি উপায় বের করা হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব, স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকে (এফডিআই) সুরক্ষিত রাখবে।

একইসাথে, আমরা ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা তৈরি করবে না এমন একটি বিচক্ষণ আর্থিক নীতি নিয়ে আসতে পরামর্শ দিচ্ছি; যা কর ও দাম বৃদ্ধিকে একই পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হবে, যেন তা ভোক্তাদের জন্য বহন করা সম্ভব হয়। রাজস্ব আদায় ও এই খাত, দুটিকেই টেকসই করতে পারবে এমন ভবিষ্যৎমুখী সমাধান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমরা সরকারের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।”


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *