অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া ফাতেমা (প্রাঃ) হাসপাতালে একই দিনে দুই জন প্রসূতি নারীকে অপারেশন করা হয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে দুজনেরই মৃত্যু হয়। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে অপারেশন করা শারমিন বেগম (২৬) নামের এক নারী ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। মৃত শারমিন বেগম মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের বাবু মোল্যার স্ত্রী।

জানা যায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে উপজেলার নওয়াপাড়া ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালে শারমিন বেগম (২৬) ও আসমা খাতুন (৩২) নামের দুই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পরে ওই দুই রোগীর শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে পৌঁছানোর পর রাত ৮টার সময় আসমা বেগম নামের নারীর মৃত্যু হয়। মৃত আসমা খাতুন মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী।

নারীর মৃত্যুতে বিক্ষুদ্ধ স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালটি ভাঙচুর ও ঘেরাও করেন। এদিকে শারমিন খাতুনের অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়। ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শারমিন বেগম রোববার দুপুরে মৃত্যু বরণ করেন।
মৃত শারমিন খাতুনের স্বামী বাবু মোল্যা বলেন, আমার স্ত্রীকে ফাতেমা হাসপাতালের ডাক্তার ভুল অপারেশন করে হত্যা করেছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার সন্তান এতিম হয়ে গেছে। আমি এই হত্যার সঠিক বিচার চাই।
অপর মৃত আসমা বেগমের ভাই জসিম উদ্দিন বলেন, আমার বোনকে ডাক্তার সেলাই ঠিক মতো না দেওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মারা গেছেন। ৫ ব্যাগ রক্ত দিয়েও আমরা বোনকে বাঁচাতে পারলাম না। ভুল অপারেশন করার জন্য আমার বোন মারা গেছে। আমি এই হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
ফাতেমা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মঞ্জুরুল মোরশেদ রোগীর মৃত্যু ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ভুল চিকিৎসা নয়; অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কারণে রোগীদেরকে দ্রুত খুলনায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে মৃত্যু হবে ভাবতেও পারছিনা।
নওয়াপাড়া ফাতেমা হাসপাতালের মালিক রফিকুল ইসলাম বাঘা জানান, প্রথম দিন এক জন মৃত্যুবরণ করেছিলো। আজ দুপুরে আরো একজনের মৃত্যুর খবর শুনেছি। বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য দুই পরিবারের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলিমুর রাজিব বলেন, দুই পরিবারের কারোর কাছ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি নিজে অভয়নগরে ক্লিনিক ও হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করবো, ইনশাআল্লাহ।