দলবাজি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি এবং অনিয়ম করেই গড়েছেন অঢেল সম্পদ  : খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের দুর্নীতির সাতকাহন  !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক : খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান। এক সময় আওয়ামী লীগের মন্ত্রি, এমপিদের আত্মীয় ছিলেন। ছিলেন তাদের আস্থাভাজন ও আজ্ঞাবহ। ফলে বিভিন্ন অনিয়ম, নারী কেলেঙ্কারীর প্রমান থাকা সত্তেও তা ধোপে টেকেনি। এমনিকি বিভাগীয় মামলা, দুদকে অভিযোগ সবই যেন ম্যাজিকের মতো ভ্যানিস হয়ে যায়। জুলাই, আগষ্ট গণঅভ্যুথানে পটপরিবর্তন হয়েছে। তিনিও পরিবর্তন হয়েছেন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে ।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগ উঠেছে ওই দপ্তরের উচ্চ পদস্থ তার একাডেমিক ও হলের সিনিয়র থাকায় এখন তিনি সব পার পেয়ে যান। এর সুবাদে অনেককে বদলির ভয়ও দেখিয়ে তিনি সকল কাজ করিয়ে নেন। বিপুল পরিমান টাকাও হাতিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে দুদক বা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য খুঁটির জোরে তা আমলে আসে না। সরকার যেই আসুক জামানুর যেন সবার। যখন যেখানে যে রুপ ধরতে হয়, তিনি তখন সেই রুপ ধারণ করেন।


বিজ্ঞাপন

দুদকে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, সাময়িক বরখাস্তের সময় জীবন ধরাণ ভাতা ছাড়া অন্য কোন ভাতা বা সুবিধা পাননা। কিন্তু তিনি ওই সময়ে ভবিষ্য তহবিল থেকে ৩৭ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া একই সময়ে তিনি তৎকালিন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সুপারিশে লম্বা ছুটিও ভোগ করেন।


বিজ্ঞাপন

কুষ্টিয়ায় তার নিজ বাড়ী এবং মেহেরপুরে তার শশুর বাড়ি হওয়ার সুবাদে ফ্যাসিস্ট সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মাহবুবুল হক হানিফ, হাসানুল হক ইনুর সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়েও বেতন নিয়েছেন ৪র্থ গ্রেডের। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন হওয়ায় পূর্বের তারিখে প্রমোশন নেন। যা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ওপেন সিক্রেট।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান আওয়ামী লীগের সময় থেকে এক টানা পাঁচ বছর খুলনা সার্কেলে চাকুরী করছেন। ফলে তার একটি শক্তিশালি বলয় তৈরি হয়েছে এ অঞ্চলে। ৫ই আগষ্টের পর রুপ বদলে তিনি এখন আওয়ামী লীগ বিরোধি সেজে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

দলবাজি, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি এবং অনিয়ম করেই গড়েছেন অঢেল সম্পদ। তার ভয়ে দপ্তরের কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না। কেউ প্রতিবাদ করলে হয়রানি এবং মানসিকভাবে নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়।

দলবাজ এ প্রকৌশলী সিন্ডিকেট করে একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বার বার কাজ দিয়েছেন। নিম্নমানের কাজ করে বিল তুলতে অসাধু ঠিকাদারকে সাহায্য করেন। কোন কর্মকর্তা নিম্নমানের কাজের বিল দিতে অসম্মতি জানালে তার বিরুদ্ধে কারসাজি করে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। এ নিয়ে তার আওয়াতাধীন বিভিন্ন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীদের নানান কৌশলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।

তার পছন্দের ঠিকাদারকে সাহায্য না করলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়েছেন। জামানুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয় দেখিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিল করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ তার বিরোধিতা করলে তাদের তিনি রাজাকার বলেও আখ্যায়িত করেছেন।

অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিনি অপদস্ত করেছেন।
৫ই আগষ্টের পর তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ বিরোধি বলে দাবী করছেন। তিনি এখন আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিষ্ট বলে গালি দেন। আর এক সময় তিনিই ফুলেল ঢালী নিয়ে গেছেন টুঙ্গিপাড়ার মাজারে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে তার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন রয়েছে বলে সবার কাছে প্রচার করছেন। বাগেরহাট জেলার একজন প্রকৌশলী বলেন, তিনি অপকর্ম করতে সবসময় চাপ প্রয়োগ করেছেন। তার অন্যায় আবদার না শুনলে আওয়ামী লীগের ওমুক লিডার বিষয়টা দেখতে বলেছেন বলে শাষিয়ে তার লক্ষ্য পূরণ করে নিতেন। তাতেও কাজ না হলে বিভিন্ন মহল দ্বারা হেনস্তা করেছেন তিনি।

খুলনা জোনের বিভিন্ন জেলায় টেন্ডার কারসাজি এবং অসাধু ঠিকাদারের নিম্ন মানের কাজের বিল জোর করে পাশ করিয়ে হাতিয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ।

বাগেরহাটে তার মাধ্যমে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন সময়ে তার্ আস্থাভাজন এবং আওয়ামী লীগের ঠিকাদারদের কাজ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অনভিজ্ঞ ঠিকাদার হলেও গুরুত্বপূর্ন কাজ জোরপূর্বক তিনি তার সিন্ডিকেটকে দিতে বাধ্য করেন। তিনি তার কৌশল ব্যবহার করে এবং অর্থের জোরে বার বার পার পেয়ে যান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান বলেন, সত্য সবসময় সত্য, মিথ্যা সব সময় মিথ্যা। খুলনায় কাজ করেছি কিন্তু আমি কখনো শেখ বাড়ি যায়নি। আমাকে কেউ নিতে পারেনি। আমি সব সময় আমার নীতি আদর্শে অটল থেকেছি। আমি জামায়াত, বিএনপি সমর্থীত মানুষ।

এই কারনে আমি বার বার সমস্যায় পড়েছি। আমি অন্যায় করলে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ – জামানুর রহমান ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ লোক। তিনি আওয়ামী সুবিধাভোগী।

বিগত ৫ বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের গোলামী করে আসছেন। শতপ্রকার অনিয়ম,দুর্নীতি করেও রয়েগেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের আমলে তিনি নিজেকে বিএনপি জামায়াত সমর্থিত লোক বলে দাবী করে তার অতীত অপরাধ কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *