যশোরের ভৈরব নদে ১৮ মাসে ১৫ টির অধিক জাহাজ ডুবি :  দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত ঘটনা !  

Uncategorized আইন ও আদালত খুলনা গ্রাম বাংলার খবর বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

সুমন হোসেন, (যশোর)  :  যশোরের শিল্প ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়ার প্রাণকেন্দ্রে প্রবাহমান ভৈরব নদীতে বিগত ১৮ মাসে ১৫টির অধিক জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। নওয়াপাড়া নদী বন্দরে অবস্থানরত কর্মকর্তা কর্মচারী শ্রমিকরাই এ কথা বলছে। ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য থেকে ও জাহাজ ডুবির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এসব পণ্য বোঝাই জাহাজ ডুবির বিষয়টা নিছক দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত ঘটনা এধরণের ও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় সচেতন মহলের মাঝে।


বিজ্ঞাপন

নওয়াপাড়া নদী বন্দরে অবস্থানরত কর্মকর্তা কর্মচারী শ্রমিকদের দাবি,  নদের নাব্যতা-সংকট, সরু চ্যানেলসহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এ বৃহৎ নদী বন্দরটি। সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম এ নদীবন্দর এলাকায় প্রতিদিনই অবস্থান করে ৩৫০ থেকে ৪০০ টি ছোট বড় কার্গো-জাহাজ।


বিজ্ঞাপন

পণ্যবাহী জাহাজের মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, মূলত চার কারণে বারবার এ নদে জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটছে। প্রথমত, নিয়মিত খনন না করায় নৌবন্দরে ভৈরব নদের নাব্যতা-সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। খননকাজ সুষম বা ধারাবাহিকভাবে করা হয় না। কোথাও গভীর আবার কোথাও মোটেও খনন করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, দখলের কারণে ভৈরব নদ দিন দিন সরু হয়ে যাচ্ছে। তৃতীয়ত, অদক্ষ মাস্টাররা মূল চ্যানেলের বাইরে এসে নদের কিনারায় জাহাজগুলো নোঙর করেন। চতুর্থত, সময়মতো মেরামত না করায় পণ্যের অতিরিক্ত ওজনের চাপ সহ্য করতে না পেরে পুরোনো জাহাজের তলা ফেটে তা পানিতে তলিয়ে যায়।


বিজ্ঞাপন

নওয়াপাড়া নৌবন্দ ধরা হয় খুলনার ফুলতলা উপজেলার মোজুতখালী নালা থেকে অভয়নগরের আফরাঘাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত সীমানা। গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুভরাড়া এলাকায় ৮৫০ টন ইউরিয়া সার বোঝাই এমভি সেভেন সিজ-৪ নামের একটি কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়।

জাহাজের মাস্টার জুয়েল হোসেন বলেন, ‘জাহাজ থেকে ইউরিয়া নামানোর সময় ভাটায় জাহাজের তলদেশের সঙ্গে মাটিতে থাকা পাথর কিংবা শক্ত কোনো বস্তুর সজোরে আঘাত লাগে। এতে তলদেশ ফেটে জোয়ারের সময় জাহাজটি ধীরে ধীরে ভৈরব নদীতে তলিয়ে যায়।’

এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি সিদ্দিপাশায় গমবোঝাই এমভি ওয়েস্টার্ন-২ কার্গো জাহাজ কাত হয়ে ডুবে যায়। এ সময় জাহাজে প্রায় ৭০০ টন গম বোঝাই ছিল।

এ ছাড়া গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ৮২০ টন কয়লাসহ এমভি আর রাজ্জাক, ১৩ এপ্রিল ৬৮৫ টন কয়লাবোঝাই এমভি সাকিব বিভা-২, ১৫ জানুয়ারি প্রায় ৮০০ টন কয়লাবাহী এমভি পূর্বাঞ্চল-৭ ও ১৩ জানুয়ারি ৭০০ টন কয়লা নিয়ে এমভি মৌমনি-১ কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়

জাহাজের কর্তৃপক্ষ বলছে, ভৈরব নদে আগের তুলনায় জাহাজের সংখ্যা বেড়ে গেছে, নোঙর করার জায়গার পরিমাণ খুবই কম। তাছাড়া পানি কম নাব্যতা সংকট থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নওয়াপাড়া নদীবন্দর সচল ও নিরাপদ রাখতে নিয়মিত নদী খনন ও নিরাপদ জেটি নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।

খুলনা নৌপরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ চৌধুরী মিনহাজ উজ জামান সজল বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব থেকে বড় নদীকেন্দ্রিক অর্থনীতির কেন্দ্র নওয়াপড়া বন্দরের এ বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের। নদীর নাব্যতা কম। পানি কমতে কমতে নদী ছোট হয়ে আসছে। সঠিক পদ্ধতিতে ড্রেজিং করার প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা বারবার বলেছি। তবে এর সমাধান হচ্ছে না।’

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নওয়াপাড়া শাখার সদস্যসচিব নিয়ামুল ইসলাম রিকো বলেন, ‘নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদের নাব্যতা-সংকট প্রকট। দখলে নদ সরু হয়ে আসছে। খননকাজ সুষম বা ধারাবাহিকভাবে করা হয় না। কোথাও গভীর আবার কোথাও মোটেও খনন করা হয় না। যে কারণে ঘন ঘন জাহাজ ডুবছে।’

এ বিষয়ে কথা হলে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘সব নদ-নদীতে নাব্যতা-সংকট রয়েছে। ভৈরব নদে ড্রেজিং চলছে। মূলত অদক্ষ মাস্টার-ড্রাইভার নিয়ম না মেনে জাহাজগুলো মূল চ্যানেলের বাইরে এসে নদের কিনারায় নোঙর করেন। তা ছাড়া পুরোনো জাহাজের তলদেশ নিয়মিত ডকিং বা মেরামত না করায় অতিরিক্ত পণ্যের চাপে ভাটায় এসব জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ছে।’

খুলনা বিআইডব্লিউটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক নৌ সংরক্ষক মোঃ আশরাফ উদ্দিন বলেন, নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরে জাহাজ ডুবির হিসাব আমরা সংরক্ষণ করি না। তবে প্রায় জাহাজ ডুবি হয়। কোনটি জানাজানি হয় কোনটি জানা সম্ভাব হয় না।

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি এযাবতকালে নওয়াপাড়ার ভৈরব নদে যে সকল নৌদুর্ঘটনা বা জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে হয়তোবা নিছক দুর্ঘটনা না পরিকল্পিত ঘটনা সেটা বেরিয়ে আসবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *