চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে ওঠা, একটি বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুবর্ণা আক্তার। দারিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই শিক্ষার্থী পড়া-লেখার পাশাপাশি ক্রীড়াক্ষেত্রেও চমক দেখিয়েছেন। ৫৩তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দীর্ঘলাফ ও ৪০০ মিটার রিলে দৌড় প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। সুবর্ণার এই অর্জন করায় সহপাঠী, শিক্ষকরা ও এলাকাবাসী আজ আনন্দিত। তার এই আনন্দ ধরে রাখতে এবং আগামীতে তাকে বিশ্ব জয়ে পৌঁছে দিতে অনুপ্রেরণা মূলক “সন্মানা ক্রেষ্ট” দিয়েছেন, উপজেলা প্রেসক্লাব চিলমারী।

সুবর্ণার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার, রাণিগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরেরহাট বাজার এলাকায়। সে ফকিরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। দারিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া সুবর্ণা আক্তারের বাবা বাচ্চা মিয়া একজন ভ্যানচালক। মা রূপালী বেগম গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট সুবর্ণা আক্তার। কথা হলে সুবর্ণা আক্তার বলেন, আমি খেলা-ধুলা অনেক পছন্দ করি। আমাদের স্কুলে খেলা-ধুলার প্রতিযোগিতা হলে আমি অংশগ্রহণ করি।

এবারও শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করি। উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে খেলে জাতীয় পর্যায়ে গিয়েছি। সেখানে আমি দীর্ঘলাফ (লংজাম্পে) ও ৪০০ মিটার রিলে দৌড়ে প্রথম হয়েছি। আমার অনেক ভালো লাগছে। আরও বলেন, সরকারি ভাবে কোন সহায়তা পেলে শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে খেলে দারিদ্রপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলাকে তথা বাংলাদেশের সুনাম অর্জন করতে চাই। সুবর্ণার বাবা বাচ্চা মিয়া (৫০) বলেন, আমরা নদীভাঙা মানুষ।
পড়া-লেখা বুঝি না। কিন্তু ছাওয়াটা পড়া-লেখার পাশাপাশি খেলা-ধুলাতে ও ভালো। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলে প্রথম হয়েছে। খুব খুশি হইছি, কী যে ভালো লাগছে আমাদের। ফকিরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষক শফিয়ল এলেম বলেন, প্রতিবছর শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন খেলা-ধুলায় আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করেন। এবার দু-জন শিক্ষার্থী সুবর্ণা আক্তার ও ইয়ামিন সারিকা সম্মিত জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেয়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে সুবর্ণা লংজাম্পে ও রিলে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়ামিন সারিকা সম্মিত চাকতি নিক্ষেপে চতুর্থ হয়েছেন।
ফকিরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, আমাদের স্কুলটির সুনাম রয়েছে। চিলমারী উপজেলায় এটি একটি শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এবং গত আট বছর ধরে আমি উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিবেচিত হয়েছি। সরকারি, বে-সরকারিভাবে বিভিন্ন ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
সেখানে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। এবার আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি, আমাদের দু-জন শিক্ষার্থী সুবর্ণা এবং সম্মিত জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন। সুর্বণা দীর্ঘলাফ ও ৪০০ মিটার দৌড়ে দেশসেরা হয়েছেন। সম্মিত ও সেখানে ভালোভাবে অংশগ্রহণ করেছে। তারা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা।
শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়, তাদেরকে যেন আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ হিসেবে তৈরি করতে পারি। এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি সবুজ কুমার বসাক বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঐ স্কুলের দু-জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে সুবর্ণা দেশসেরা হয়েছেন, যা আমাদের অত্যন্ত খুশির খবর।
আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছি। সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি, আনুষ্ঠানিভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ৫৩তম বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা ক্রীড়া সমিতি আয়োজিত এবারের আসরে সারা দেশকে চারটি অঞ্চলে (চাঁপা, বকুল, গোলাপ, পদ্ম) ভাগ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের আয়োজনে হকি, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন একক ও দ্বৈত, টেবিল টেনিস একক ও দ্বৈত, সাইক্লিং, অ্যাথলেটিকস ডিসিপ্লিনে চট্টগ্রামে এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি।