নীতিমালার তোয়াক্কা না করে রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত টিএন্ডটি (বিটিসিএল) আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে শ্রেণী কক্ষেই চলে কোচিং বাণিজ্য। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কোচিং করাতে বাধ্য করা হয়।
উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুপুর দেড়টার ছুটি হয়ে গেলেও দেখা যায় সাড়ে তিনটা চারটার সময়েও শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বেরুচ্ছে। দেখে মনে হতে পারে তখন তাদের স্কুল ছুটি হয়েছে। কিন্তু না জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, তারা স্কুল ছুটির পর কোচিং করে বেরোয়। মানুষ যেন বুঝে শিক্ষার্থীরা স্কুলের ক্লাস করে ফিরছে তাই কৌশলতা অবলম্বন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের যেতে হয় স্কুল ড্রেস পড়ে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনযোগী না হয়ে কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখেন। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা শিক্ষকদের পরিচালিত কোচিংয়ে পাঠাতে বাধ্য হন।
রমজান উপলক্ষে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি দেওয়া হয়েছে। রবিবার (৯ মার্চ) সকালে সরেজমিনে টিএন্ডটি (বিটিসিএল) আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গেলে দেখা যায় স্কুল ড্রেস পড়ে শিক্ষার্থীরা ভেতরে ঢুকছে। স্কুল তো বন্ধ তাহলে তারা কী করে? জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা কোচিং করতে এসেছে। জানা গেছে, বন্ধের মধ্যেও প্রতিদিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোচিং করানো হয়। অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদেরও কোচিং হচ্ছে স্কুলে নিয়মিত।
এসএসসি পরীক্ষার্থী শারমিনের আম্মু রোজিনা বেগম বলেন, ‘স্কুল থেকে একজন শিক্ষক বলেছেন কোচিং না করলে ফরম পূরণ করতে দিবে না। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েকে স্কুলে কোচিং করাচ্ছি। স্কুলের বেতন ৮০০ টাকা হলেও মাসে ১৮০০ টাকা নেয় কোচিং এর বেতন।’
তবে মন্ত্রনালয়ের গাছাড়া ভাবের কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোচিং এর বিষয়টি দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের এমন কান্ড দেখে মনে হয় এটাই তো স্কুলের সেসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার শেষ সুযোগ।
টিএন্ডটি স্কুলের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ পাওয়া যায়, স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক বাসাতেই কোচিং সেন্টার বানিয়ে প্রাইভেট পড়ান। সাবজেক্টের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীকে ফেল পর্যন্ত করিয়ে দেওয়া হয়; আর প্রাইভেট পড়লে পরীক্ষায় ভালো করার নিশ্চয়তা থাকে। শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়া পর্যাপ্ত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করতে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হয়। এতে দরিদ্র শ্রেণির অভিভাবকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব বিষয়ে টিএন্ডটি (বিটিসিএল) আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে বনানীর স্থায়ী বাসিন্দা লুৎফর রহমান জানান, ‘টিএন্ডটি স্কুলে প্রতি শুক্র-শনিবার দেখি কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের ভর্তি বা চাকুরীর পরীক্ষা থাকে। এসব থেকে আলাদা ভাতা খাতা দেখা সহ বিভিন্নভাবে এখানের শিক্ষকরা বেতন ছাড়াও ভালোই আয় করেন। তবু তাদের কোচিং বাণিজ্য করতে হবে কেন বোধগাম্য নয়।’