সিলেটে পাথর-বালু প্রকাশ্যে হরিলুট  ;  নৈপথ্যে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ সিলেট

মোঃ মাহবুব আলম চৌধুরী জীবন  :  সিলেটে চারটি বড় কোয়ারি সহ অন্তত ১৫টি পাথর ও বালু কোয়ারিতে পাথর ও বালু লুটপাটের মহোৎসব চলছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পরে ও পাথর ও বালুখেকোরা লুটে নিচ্ছে শত হাজার কোটি টাকার পাথর।


বিজ্ঞাপন

৫ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের প্রথম ১৫ দিনে সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি ও ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে ৩শ’ কোটি টাকার পাথর লুটের তথ্য পেয়েছিল প্রশাসন। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে গোয়াইনঘাটে পরপর দু’টি মামলা হয়েছিল।


বিজ্ঞাপন

মামলার আসামিরা আরও বেপরোয়া : মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকে জাফলংয়ের পাথরখেকোরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এখন দিনে ও রাতে জাফলংয়ে চলছে লুট। আট মাসে সিলেটে প্রায় কয়েক কোটি হাজার’ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছেন- গত ১৫ বছর প্রশাসনের তরফ থেকে বালু ও পাথর লুটকারীদের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় এখন চলছে হরিলুট। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ শাহ আরেফিন টিলাও।


বিজ্ঞাপন

দেশজুড়ে পরিচিত  মাজার টিলার অবস্থা : দেশজুড়ে পরিচিত একটি মাজার টিলা। এই টিলার মাজার অংশে এতদিন কেউ হাত দেয়নি। কিন্তু শাহ আরেফিন টিলার চিহ্ন আর এখন নেই। গত আট মাসে এই টিলা থেকে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। এখন চলছে বালু লুট। প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার বালু লুট করা হচ্ছে। এই টিলায় পাথর লুট নিয়ে ইতিমধ্যে এলাকার স্থানীয় দুইপক্ষের সংঘর্ষ হলেও লুটপাট কমেনি। প্রশাসনের তরফ থেকে অভিযান দেওয়ার পরে ও কোন ভাবে বন্ধ হচ্ছে না পাথর লুট।দেশের বৃহত্তর পাথর কোয়ারি হচ্ছে ভোলাগঞ্জ। সাদাপাথর পর্যটন স্পটের লাগোয়া এই কোয়ারি। এখান থেকে গত আট মাসে অন্তত কয়েক হাজার কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। এখনো চলছে লুটপাট।

পাশেই রেলওয়ের বাঙ্কার এলাকা। এটি এতদিন নিরাপদই ছিল। কিন্তু ৫ই আগস্টের পর থেকে অবাধে চলছে বাঙ্কার এলাকায় লুটপাট। স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও কথিত কয়েকজন সংবাদকর্মী এবং বিজিবি’র টহল দলের সদস্যদের নেতৃত্বে বাঙ্কারে লুটপাট করা হচ্ছে।

সীমান্ত লাগোয়া জনপদ উৎমা পাথর কোয়ারি : সীমান্ত লাগোয়া জনপদ উৎমা পাথর কোয়ারি। এখানে এখন পাথর হরিলুট চলছে বলে জানিয়েছেন উৎমা, মাঝেরগাঁও সহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা। তারা জানিয়েছেন- উৎমার রমজান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য দিলোয়ার মেম্বার, যুবদল নেতা মোস্তাকিম আহমদ ফরহাদের নেতৃত্বে এসব এলাকায় লুটপাট করা হচ্ছে। আগে ওই কোয়ারিতে লুটপাট চালাতেন জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও যুবদল নেতা মোস্তাকিম আহমদ ফরহাদের আত্মীয় হেনা বেগম। পুলিশ, বিজিবি’র নামে উত্তোলিত পাথর থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি : যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি থেকে অবাধে লুট করা হচ্ছে পাথর। ইতিমধ্যে এ কোয়ারি থেকেও কয়েক শত কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন- হাদাপাড় এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। তারা জানিয়েছেন- স্থানীয় ব্যবসায়ী মাসুক, জসিম ও জয়নালের নেতৃত্বে এ কোয়ারির পাথর লুট করা হয়। এ নিয়ে কয়েকদিন আগে প্রশাসনের তরফ থেকে অভিযান চালানো হলেও পাথর ও বালু লুট বন্ধ হয়নি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা  : জাফলং পাথর কোয়ারিতে বালু-পাথর লুটের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দু’টি মামলা করা হয়েছে। এ দু’টি মামলায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন, জেলা বিএনপি’র পদ স্থগিত যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহ্‌পরাণ সহ শতাধিক লোকজনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ট্রাকশ্রমিকের নামে জাফলংয়ে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। গত শুক্রবার স্থানীয় কান্দুবস্তি ও নয়াবস্তির বাসিন্দারা লুট হওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা জানিয়েছেন- অন্তত ১০টি এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। এখন আর বাঁধের কোনো অস্তিত্ব নেই। ফলে ভারতের ঢল নামলেই এসব গ্রামে বসবাস করা দায় হয়ে পড়বে। জাফলং এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন- এখন নতুন করে জিরো পয়েন্ট ও জুমপাড় এলাকায় পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। আর এই লুটপাটের কারণে পানবাগান সহ কয়েকটি স্থাপনা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

দিনে প্রশাসনের অভিযান ও রাতের ফের লুট : খবর পেয়ে গতকাল দিনে প্রশাসনের তরফ থেকে অভিযান চালানো হলেও রাতের বেলা ফের লুট শুরু করে বালু ও পাথরখেকোরা। এদিকে বুধবার সিলেটে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার আয়োজনে ‘সিলেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা’- শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানেও আলোচিত হয় পাথর ও বালু লুটের ঘটনাবলী। বেলার তরফ থেকে জানানো হয়েছে- রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সিলেটে টিলা, নদী, এমনকি পর্যটনস্থল থেকে পাথর উত্তোলন বেড়েছে।

পাথর উত্তেলনে পরিবেশ ও পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা : এ পাথর উত্তোলনে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে, যা ভূ-প্রকৃতিকে বড় ঝুঁকিতে ফেলবে। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে ছিলেন- শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. মিছবাহ উদ্দিন, পেট্রোলিয়াম ও খনি প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম। মিছবাহ উদ্দিন বলেন- পাথর কোয়ারিগুলো থেকে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে অবৈধভাবে লাগামহীন পাথর উত্তোলনে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা গবেষণা করা প্রয়োজন।পাথর কোয়ারিকেন্দ্রিক পর্যনটনশিল্প ও পাথর উত্তোলনের রাজস্ব কেমন- এ দু’টি বিষয়ে তুলনামূলক গবেষণা ও জরিপ প্রয়োজন। কোনটা থেকে সরকার রাজস্ব বেশি পাচ্ছে। পর্যটন খাতে বেশি রাজস্ব আয় হলে তা সমৃদ্ধ করার জন্য সরকারকে সেই খাতে গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞ শফিকুল ইসলামের বক্তব্য  : আরেক বিশেষজ্ঞ শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন- পাথর উত্তোলন না করলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়; কিন্তু বাস্তবে এটি অজুহাত। ভোলাগঞ্জ ও জাফলংয়ের নদীতে পাথর জমে থাকায় পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হলে প্রশাসনকে আর অভিযান জোরদার করতে হবে।

ভোলাগঞ্জ প্রকাশ্যে পাথর লুট :  অসংখ্য শ্রমিক। কারও হাতে বেলচা, কারও হাতে কোদাল, কারও হাতে শাবল। সবাই মাটি খুঁড়ে বের করছেন পাথর। পাথরগুলো টুকরিতে করে নদের পাড়ে জড়ো করছেন। কয়েক শ বারকি নৌকাওয়ালা সেসব পাথর দরদাম করে কিনে নিচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রকাশ্যে পাথর লুটপাট চললেও স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার। স্থানীয়দের ধারণা, গত আট মাসে অন্তত তিন হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য  : যোগাযোগ করলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার পাথর লুটপাটের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নিয়মিত অভিযান চালিয়েও লুটপাট ঠেকানো যাচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টা তো আর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যায় না। অভিযান চালাতে গেলে লুটপাটকারীরা সরে যায়। চলে এলে আবার পাথর উত্তোলন শুরু করে দেয়।

রোপওয়ে এলাকাটি সংরক্ষিত বাংকার ?  : বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র রজ্জুপথটি দেশের সবচেয়ে বড় পাথরকোয়ারি ভোলাগঞ্জের পাশে অবস্থিত। রোপওয়ে এলাকাটি সংরক্ষিত বাংকার হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৪ সালে ভোলাগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জের ছাতকে পাথর পরিবহনে স্থল কিংবা জলযানের বিকল্প হিসেবে রজ্জুপথ স্থাপন করা হয়। ১১৯টি খুঁটির মাধ্যমে তৈরি হয় রোপলাইন। ভোলাগঞ্জের রোপওয়ে এলাকাটি ৩৫৯ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। এখানকার সামান্য উঁচু টিলার মতো ভূমি আর সমতল স্থানের নিচে আছে ছোট-বড় অসংখ্য পাথর।

সংরক্ষিত বাঙ্কার বর্তমান অবস্থা : গত ১০ মার্চ বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পাশের ধলাই নদের চর ধরে হেঁটে বাঙ্কারের দিকে যাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। তাঁদের হাতে বেলচা, কোদাল, শাবল, টুকরিসহ পাথর তোলার বিভিন্ন উপকরণ। অনেকে মাথায় করে খাবার ও পানি নিয়ে যাচ্ছেন। চরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ধলাই নদ কেউবা বারকি নৌকায়, কেউবা হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন।

ঝুঁকিপূর্ণ গর্তে পাথর উত্তেলন : অন্যদিকে বাঙ্কার এলাকায় কয়েক হাজার শ্রমিক মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলনে ব্যস্ত। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে শত শত গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব গর্ত থেকে তোলা পাথর স্তূপাকারে নদের পাড়ে রাখছেন অনেকে। সেসব পাথর কিনতে এসেছেন অনেক বারকি নৌকাওয়ালা।

ভোলাগঞ্জের বাসিন্দাদের বক্তব্য  : ভোলাগঞ্জের দুজন বাসিন্দা জানান, আগে মানুষ আড়ালে-আবডালে পাথর তুলত। ৫ আগস্ট বাঙ্কারের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) আবাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ভাঙচুর করা হয়। এর পর থেকে প্রকাশ্যে পাথর তোলা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের অভিযান চললে লুটপাটকারীরা সটকে পড়ে। অভিযানকারীরা চলে গেলে আবার লুটপাট শুরু হয়। তবে, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ইন্ধনে দিনে পাথর উত্তোলন কম হলেও বিকেলের পর থেকে সারা রাত অবাধে চলে। রাতে এখানে অস্থায়ী খাবার ও চা–পানের দোকানও বসে।

রাতের বেলা টর্চ ও চার্জলাইট এর ব্যাবহার : বাঙ্কার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রাতের বেলা টর্চ ও চার্জলাইট জ্বালিয়ে পাথর তুলে শ্রমিকেরা বারকি নৌকার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। নৌকার মালিকেরা যা ১০ নম্বর সাইট ও কালীবাড়ি, কলাবাড়ী এলাকায় ক্রাশার মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। পরে সেসব পাথর মেশিনে ভেঙে ছোট করে পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ওই ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও পিকআপে পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।

পাথর তোলা শ্রমিকের বক্তব্য : পাথর তোলায় নিয়োজিত ১২ জন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, রাতের বেলা কয়েক হাজার শ্রমিক এখানে পাথর তোলেন। একেকজন শ্রমিকের প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হয়। বারকি নৌকাভর্তি বোল্ডার (বড় পাথর) ৫ হাজার, ভুতু (মাঝারি) ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার এবং সিঙ্গেল (ছোট পাথর) ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় শ্রমিকেরা বিক্রি করেন।

গত আট মাসে পাথর লুট : গত আট মাসে কী পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে, এর কোনো পরিসংখ্যান স্থানীয় প্রশাসনের কাছে নেই। তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, অনুমান ভিত্তিক তিন হাজার কোটি টাকার পাথর শুধু বাঙ্কার এলাকা থেকে লুট হয়েছে। এভাবে লুটপাট চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে পুরো বাঙ্কার এলাকা পাথরশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরএনবির বক্তব্য  : আরএনবি জানিয়েছে, বাঙ্কার এলাকায় নিরাপত্তা দিতে তাদের ৩০ সদস্যের দল রয়েছে। ১৫ দিন পর পর দলটির বদল হয়। ৫ আগস্ট তাদের আবাসনস্থল ভাঙচুর হওয়ায় এখন বাঙ্কার এলাকা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে থাকেন। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বেলা পাঁচটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষে তাঁরা ওই ক্যাম্পে চলে আসেন। মূলত এর পর থেকে রাতভর পাথর লুটপাট চলে।

আরএনবির উপপরিদর্শক নাফিজ ইমতিয়াজের বক্তব্য : আরএনবির উপপরিদর্শক নাফিজ ইমতিয়াজ বলেন, সীমিত সাধ্য অনুযায়ী তাঁরা পাথর লুটপাট ঠেকাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তবে রাতের বেলাই এখানে বেশি পাথর লুট হয়।

বৃহৎ বাঙ্কার  :  বৃহৎ বাঙ্কার এলাকাটি সীমিতসংখ্যক সদস্যের পক্ষে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয় বলে আরএনবির একটি সূত্র জানিয়েছে। তারা বলছে, বাঙ্কার এলাকায় কোনো ছাউনি পর্যন্ত নেই। প্রচণ্ড গরমে দিনভর খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা দিতে হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শ্রমিকেরা এখন কথা শুনতে চান না। তাই তাঁদেরও পিঠ বাঁচিয়ে কোনো রকমে চলতে হচ্ছে। চারপাশ নদীবেষ্টিত হলেও আরএনবির নিজস্ব কোনো নৌকা নেই। এতে যথাযথভাবে নিরাপত্তা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। শিগগিরই এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা উচিত।

কি বলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক  : এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, পাথর লুট বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। প্রয়োজনে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।

স্থানীয় প্রশাসনের ভুমিকা   :  স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণে বাঙ্কার এলাকায় লুটপাট বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ সরকারি হেফাজতে থাকা জায়গার পাথর প্রকাশ্যে লুটপাট করছে। প্রশাসন ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিষয়টি  একেবারেই দুঃখজনক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *