অভয়নগরে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার ইউরিয়া সার লোপাটের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের  : ২ জন আসামি কে আটক করছে পুলিশ 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

সুমন হোসেন, (যশোর) : যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া থেকে ৯ হাজার ২শ’ ৮০ বস্তা ইউরিয়া সার যার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার ইউরিয়া সার লোপাট করেছে সিন্ডিকেট চক্র। এই ব্যাপারে গত ১৪ মার্চ অভয়নগর থানায় মামলা রুজু হয়েছে। এরপর যশোর ডিবি ২ জনকে আটক করলেও প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে চক্রের হোতারা। সরকারী এ ইউরিয়া সার নির্দিষ্ট বাফার গুদামে পৌছিয়ে না দিয়ে তা অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ওই চক্রের সদস্য। এদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি ঘোরাতে হোতার দুই চক্র পরস্পরকে দোষি করে অভয়নগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। কিন্তু আজও কোন কুল কিনারা করতে পারেনি প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের টাকা দিয়ে সবকিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে ওই সিন্ডিকেট।


বিজ্ঞাপন

অভয়নগর থানায় অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দেশের আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সামিট এ্যাসোসিয়েটস্ এর আমদানি করা ইউরিয়া সার পরিবহন ও হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার মেসার্স নভো ট্রেড এন্ড ট্রান্সপোর্ট-এর প্রতিনিধি উপজেলার ধোপাদী গ্রামের দীন মোহাম্মাদ মোল্যার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মিল্টন (৩৮) বাদি হয়ে ৪জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন।


বিজ্ঞাপন

আসামীরা যথাক্রমে,  উপজেলার ভাঙ্গাগেটস্থ মেসার্স শাহরিয়ার ট্রান্সপোর্ট-এর মালিক (ট্রাক বন্দবস্তকারী) যশোর জেলার কোতয়ালী থানার চাউলিয়া গ্রামের নুর ইসলাম মোল্যার ছেলে মো: মিলন হোসেন (৪৫),  নওয়াপাড়া গ্রামের মো: কেরামত আলী ছেলে মো: আবু বক্কার,  বাঘারপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের মো: শাহাজান আলীর ছেলে মো: রমজান আলী (৩০)  এবং  যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের অনাত সাহার পুত্র উজ্জল কুমার সাহা (৩৫)। এর মধ্যে ১নং আসামী মিলন ও ৪নং আসামী উজ্জল আটক হলেও বাকি দুই আসামীকে এখনও আটক করতে পারেনি পুলিশ।


বিজ্ঞাপন

মামলার বিবরনে জানা যায়, মামলার ১নং আসামী মো: মিলন হোসেন এর সাথে বাদী মিল্টন সরকারী বিসিআইসি’র ইউরিয়া সার অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামস্থ সিরাজ মিয়ার ঘাট, মুজিবর রহমান খাঁন ঘাট ও আজাহার সরদারের ঘাট থেকে ফরিদপুর টেপাখোলা বাফার গোডাউনে পাঠানোর জন্য উভয় চুক্তিবদ্ধ হয়।

চুক্তি অনুযায়ী গত ০৩ ফেব্রুয়ারী-২০২৫ তারিখ সিরাজ মিয়ার ঘাট থেকে যশোর-ট-১১-১৮৯৭ যোগে ৪০০ বস্তা, যশোর-ট-১১-১৬০০ যোগে ৪০০ বস্তা, ০৪ ফেব্রুয়ারী তারিখ একই ঘাট থেকে ঢাকা মোট্রো-ট-১৮-৮৫৬৩ যোগে ৪০০ বস্তা, ০৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মোট্রো-ট-১৫-১৬৩৭ যোগে ৪শ’ ৬০ বস্তা, ১০ ফেব্রুয়ারী আজাহার সরদার ঘাট থেকে সাতক্ষীরা-ট-১১-০২২৩ যোগে ৪শ’ ৬০ বস্তা ও মুজিবর রহমান খাঁন ঘাট থেকে সাতক্ষীরা-ট-১১-০১৬৯ যোগে ৪শ’ ৬০ বস্তা। ১১ ফেব্রুয়ারী আজাহার সরদার ঘাট থেকে সাতক্ষীরা-ট-১১-০২২৩ যোগে ৪শ’ ৬০ বস্তা ও মুজিবর রহমান খাঁন ঘাট থেকে সাতক্ষীরা-ট-১১-০১৬৯ যোগে ৪শ’ ৬০ বস্তা, চুয়াডাঙ্গা-ট-১১-০৮৫৮ যোগে ৪শ’ ৮০ বস্তা, ১২ ফেব্রুয়ারী আজাহার সরদার ঘাট থেকে সাতক্ষীরা-ট-১১-০১৬৯ যোগে ৪শ’ ৬০ বস্তা, ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৭০৭৭ যোগে ৪শ’ ৬০ বস্তা। ১৩ ফেব্রুয়ারী আজাহার সরদার ঘাট থেকে যশোর-ট-১১-৫০৪৮ যোগে ৬শ’৬০ বস্তা, সাতক্ষীরা-ট-১১-০২২৩ যোগে ৪শ’ ৬০ বস্তা, ১৬ ফেব্রুয়ারী মুজিবর রহমান খাঁন ঘাট থেকে খুলনা মোট্রো-ট-১১-১৭৫৫ যোগে ৪শ’ ২০ বস্তা, মুজিবর রহমান খাঁন ঘাট থেকে যশোর-ট-১১-৪৮৮২ যোগে ৭০০ বস্তা, সর্বমোট ৭ হাজার ১শ’ ৪০ বস্তা সরকারি বিসিআইসি ইউরিয়া সার যার ওজন ৩শ’ ৫৭ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রতি বস্তা ১ হাজার ৪শ’ টাকা হারে ৯৯ লাখ, ৯৬ হাজার টাকা। উক্ত ৭ হাজার ১শ’ ৪০ বস্তা সরকারি বিসিআইসি ইউরিয়া সার লোড করে বিবাদী মো: মিলন হোসেন উক্ত সার ফরিদপুর টেপাখোলা বাফার গোডাউনে পৌছে দেয়নি।

মিল্টন আরো জানায়, আমি উপায়ন্ত না পেয়ে মিলন হোসেন-এর সাথে যোগাযোগ করিলে মিলন ড্রাইভারদের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি বলে তালবাহানা করতে থাকে। পরবর্তীতে সকল যায়গায় যোগাযোগ করে জানতে পারি প্রায় ১ কোটি টাকার সার উক্ত মিলন হোসেন অন্যত্র বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছে।

অপরদিকে, অভিযোগ রয়েছে মিলন হোসেন ঘটনা ভিন্নখাতে ঘুরাতে তার আরেক সহযোগী উপজেলার চেঙ্গুটিয়া বাজারস্থ মেসার্স আর রহমান ট্রান্সপোর্ট এন্ড শিপিং এজেন্সির মালিক যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের মো: শাহাজান আলীর ছেলে মো: রমজান আলী (৩০) কে দায়ি করে অভয়নগর থানায় অভিযোগ করেন।

উক্ত অভিযোগ অনুযায়ী জানা গেছে,  গত ৩ ফেব্রæয়ারী যশোর-ট-১১-১৮৯৭ নং গাড়ী যোগে ৫০ কেজি ওজনের ৪০০ বস্তা, যশোর-ট-১১-১৬০০ নং গাড়ী যোগে ৪০০ বস্তা, ০৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৮৫৬৩ নং গাড়ী যোগে ৪০০ বস্তা, ০৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-১৬৩৭ নং গাড়ী যোগে ৪শ’ ৬০ বস্তা, ১১ ফেব্রুয়ারী চুয়াডাঙ্গা-ট-১১-০৮৫৮ নং গাড়ী যোগে ৪শ’ ৮০ বস্তা। সর্বমোট ০২ হাজার ১শ’ ৪০ বস্তা। যার ওজন ১শ’ ৭ মেট্টিক টন। উক্ত বিসিআইসি সরকারি ইউরিয়া সার নওয়াপাড়ার সিরাজ মিয়ার ঘাট থেকে লোড করে ফরিদপুর টেপাখোলা বাফার গোডাউনে পৌছে দেয়ার কথা থাকলেও উক্ত সার জমা না দিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলে লিখিত অভিযোগে জানায়।

এদিকে ১৫ গাড়ী সার আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হলে পরিবহন ও হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার মেসার্স নভো ট্রেড এন্ড ট্রান্সপোর্ট-এর মালিক সৌরভ ও তার সহযোগীরা মিল্টন ও মিলনকে চাপ দিলে তারা ঘটনা ভিন্নদিকে সরাতে ও সার তল্লাশির কথা বলে মেসার্স শাহরিয়ার ট্রান্সপোর্ট-এর মালিক (ট্রাক বন্দবস্তকারী) তার অপর সহযোগী নওয়াপাড়া গ্রামের মো: কেরামত আলী ছেলে মো: আবু বক্কারকে কৌশলে খুলনাস্থ পরিবহন ও হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার মেসার্স নভো ট্রেড এন্ড ট্রান্সপোর্ট এর অফিসে নিয়ে বেদম মারপিট করে ৩শ’ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গিকার করিয়ে নেয় যে আবু বক্কার ১০ গাড়ি ইউরিয়া সার যার মূল্য ৬৭ লাখ ২০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিবে। এসময় তারা আবু বক্কারের নামীয় আইএফআইসি ব্যাংকের ১৩টি স্বাক্ষর করা সাদা চেকের পাতা জামানত হিসেবে রেখে দেয়।
কান্নাজড়িত কন্ঠে আবু বক্কার জানান, আমি সরল বিশ্বাসে মিলনের সাথে কাজ করতাম কিন্তু মিলন এমনিভাবে আমাকে ফাসিয়ে দেবে ভাবতে পারিনি। আমি এখন কি করব? কোন কুল কিনারা পাচ্ছিনা। যার ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, রমজানকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মেসার্স শাহরিয়ার ট্রান্সপোর্ট-এর মালিক (ট্রাক বন্দবস্তকারী) মো: মিলন হোসেন গা ঢাকা দিতে সাহায্য করেছে। মোটা অংকের এই টাকা হজম করতে এদের সকলেই জড়িত রয়েছে। সরকারের চোখে ধুলো দিতে তারা বিভিন্ন ফন্দি এটে যাচ্ছে।

এব্যাপারে অভয়নগর থানার কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, আমি বিষয়টি শুনেছি কিন্তু এই চক্র এত বড় যে, এদের কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছিনা। তবে মামলা হয়েছে এবং দুইজন আটক হয়েছে। সব খবর বের হবে। সার নিয়ে কোন কেলেংকারী সরকার সহ্য করবেনা।

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়দেব চক্রবর্তী জানান, সার নিয়ে কেলেংকারীতে জড়িয়ে এই মোকাম ও সরকারের ক্ষতি করছে একটি চক্র। তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে দ্রুত সকলকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *