শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপি’র ৭ নেতাকর্মীকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ নীতি পরিপন্থী অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে এনে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির এক সভায় ৭ এপ্রিল রাতে এদের বহিষ্কারের প্রস্তাব দিয়ে একটি চিঠি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বরাবরে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় বিএনপি’র ৭ নেতাকর্মী অভিযোগ অস্বীকার করে দলীয় গ্রুপিং এর কারণ ও আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব সহ অন্যান্য সদস্যদের নোংরা মানসিকতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দাবি করে ৯ এপ্রিল দুপুর ১২ টায় শরনখোলা উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

এছাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন পঞ্চায়েত তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে বহিষ্কারাদেশের চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে ওই নেতাকর্মীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন বলে তারা অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে ওই ৭নেতা কর্মীর পক্ষে সাউথখালি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহীদুল আলম লিটন বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী একটি সুযোগ সন্ধানী চক্র অবৈধ পন্থায় উপজেলা বিএনপি’র পদ দখল করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

যারা কখনোই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সময় কোন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নাই।এমনকি তাদের বিরুদ্ধে কোন নাশকতার মামলাও নেই। এছাড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম লাল গত ১৭ বছর কোন আন্দোলনের অংশগ্রহণ করেন নাই বরং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফাঁসি দাবিতে মিছিল ও মানববন্ধন করেছিলেন। এছাড়া শরণখোলা উপজেলা বিএনপির বিতর্কিত সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন পঞ্চায়েত কখনো কর্মীদের ভোটে নির্বাচিত হননি।

উপজেলা বিএনপির ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা অনেকেই তার পক্ষে নয়। আগামী কাউন্সিল নির্বাচনে তিনি সহ তার গ্রুপের লোকজন নিশ্চিত পরাজয় ভেবে দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। এছাড়া বিএনপির অন্য এক নেতা মোল্লা ইসাহাক আলী গত ১৭ বছর শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিরোধী কোন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেননি। সংবাদ সম্মেলনে আগত নেতাকর্মীরা বলেন দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার জন্য ওই গ্রুপটি দলের ত্যাগী ৭ নেতাদের বহিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
লিখিত অভিযোগে লিটন আরো জানান ইতিমধ্যে তারা আগামী উপজেলা কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি পদে আঞ্জুমানারা আলো, সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন মিলন ও সাংগঠনিক পদে বিএনপি নেতা অধ্যাপক শামীম আহমেদ বাদল এর নাম প্রকাশ করলে তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে সংগঠন বিরোধী এ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। এ ঘটনায় তারা ন্যায় বিচার চেয়ে তদন্তপূর্বক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান সহ সিনিয়র নেতাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
যে সকল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা হলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায় কমিটির সদস্য ও খোন্তাকাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মহিউদ্দিন শাহজাহান, সাউথখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শহীদুল আলম লিটন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও শরলখোলা উপজেলা আহবায় কমিটির সদস্য বেলাল হোসেন মিলন, ধানসাগর ইউনিয়ন বিপি সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সরদার, ধানসাগর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য শামীম আহমেদ বাদল, রায়েন্দা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মোল্লা ও ধানসাগর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছবির মাঝি।
এ বিষয়ে শরণখোলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম লাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি কতিপয় নেতা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বহিষ্কৃত এক বিএনপি নেতার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করে যা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। তাই উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি তাদের দল থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাব করেছে।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র আহ্বায় কমিটির যুগ্ন আহবায়ক ও মোড়াগঞ্জ শরণখোলা বিএনপির মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব খাদেম নেয়ামুল নাসির আলাপ বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা সদস্যদের আত্মপক্ষ সমর্পণের সুযোগ দিয়ে নোটিশ দেওয়া দরকার ছিল। সরাসরি বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার প্রস্তাব এর বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, যাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ চাওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়ে থাকলে এ ব্যাপারে কেন্দ্রে বিষয়টি অবহিত করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । বহিষ্কার প্রস্তাব দেওয়ার কোন সিদ্ধান্ত তিনি জানেন না। এটা একান্ত উপজেলা আহবায়ক কমিটির বিষয়।