নিজস্ব প্রতিবেদক : গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকটাই অলস সময় কাটাচ্ছেন জ্বালানি বিপণন কর্মীরা। রাজধানীর সিএনজি স্টেশন ও পেট্রোল পাম্পগুলোতে সেই চিরচেনা ভিড় নেই। প্রতিদিন হাতেগোনা গাড়ি বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা যাচ্ছে জ্বালানি তেল নিতে। তবু এসব গাড়ি ও গাড়ির চালক হতে পারেন করোনাভাইরাসের বাহক। রোববার কয়েকটি সিএনজি স্টেশন ও পেট্রোল পাম্প ঘুরে তেমন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
এদিকে, সিএনজি স্টেশন ও পেট্রোল পাম্পগুলোর মালিকদের সংগঠন বলছে, বড় রকমের আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে যাচ্ছে তারা। এ অবস্থায় দীর্ঘায়িত হলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়াসহ মুখে মাস্ক পরার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু নগরীর কয়েকটি সিএনজি স্টেশন ও পেট্রোল পাম্প ঘুরে কর্মীদের অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। দেখা যায়নি হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও।
মগবাজারের অনুদীপ ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, দুটি গাড়ি আর একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা গ্যাস নিতে এসেছে। চিরচেনা ব্যস্ততা নেই। কর্মচারীরা এক জায়গায় চেয়ার পেতে বসে গল্প করছেন। দুই-একজনের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগেরই নেই।
স্টেশনের সুপারভাইজার ইয়ার আলী বলেন, ‘লোকজন তো রাস্তায় নেই। তাই গাড়িও নেই। আমাদের কাজও তেমন নেই।’
তিনি বলেন, তাদের কেউ বাইরে যাচ্ছেন না, আবার কাউকে বাইরে থেকে আপাতত ভেতরে আসতেও দেওয়া হচ্ছে না।
কর্মচারীদের থাকা-খাওয়া আর সুরক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কনভারসন করার জায়গায় প্যান্ডেল করে সবার থাকার জায়গা করেছি। একেক রুমে ছয়জন করে থাকছে। চার ফুট দূরে দূরে বিছানা করা হয়েছে। এছাড়া সবাইকে বারবার হাত ধোয়ার বিষয়ে বলা হচ্ছে।’
স্টেশনের নিরাপত্তাকর্মী লিয়াকত আলী বলেন, ‘লোকজন কম। তাই নিরাপত্তাও কম। আমরা নিজেরা সতর্ক থাকার চেষ্টা করছি।’
প্রায় একই কথা বলেন হাজীপাড়া পেট্রোল পাম্প আর মালিবাগ মোড়ে অবস্থিত ফিলিং স্টেশনের কর্মীরাও। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে তেমন সচেতন নন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভারসন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, ‘রাস্তায় তেমন গাড়ি নেই। কিন্তু জরুরি পণ্য হিসেবে আমরা প্রায় সব সিএনজি স্টেশন খোলা রেখেছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটি অংশকে ছুটি দেওয়া হলেও বেশির ভাগই স্টেশনে অবস্থান করছে। আমরা তাদের কাউকে বাইরে যেতে দিচ্ছি না। স্টেশনের ভেতরেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমরা সবাইকে সতর্ক করছি। পুরো এলাকা জীবণুনাশক দিয়ে প্রতিদিন স্প্রে করতে বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। সবকিছু সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি।’
পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন, ‘ঢাকার ভেতরের চেয়ে বাইরের স্টেশনগুলো বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। যেহেতু টাকার মাধ্যমেই লেনদেন হচ্ছে, আমাদের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। অনেকেই কাজ করতে চাইছেন না। আমরা অনেককে ছুটিও দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের কমিশনের ব্যবসা, তাই এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে আমরা বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বো। বেশির ভাগেরই ব্যাংক লোন রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক বন্ধ থাকায় স্টেশনের টাকাও জমা দেওয়া যাচ্ছে না, ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতাও বোধ করছি।’