
নিজস্ব প্রতিনিধি সাতক্ষীরা : কালের কণ্ঠ পত্রিকার সাতক্ষীরার তালা উপজেলা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপুকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এই ঘটনায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ম্যাজিস্ট্রেট এবং উপজেলা প্রকৌশলী তথ্য অধিকার আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর। তিনি বলেন, সাংবাদিককে কারাদণ্ড দিয়ে তাঁরা দুর্নীতি ও অনিয়মকে উসকে দিয়েছেন, যা দেশের জন্য একটি অশুভ ইঙ্গিত।
গত মঙ্গলবার দুপুরে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মো. রাসেল এই রায় দেন। জানা গেছে, তালা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের ৯ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপু। এ সময় তালা উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলম তথ্য দিতে অস্বীকার করায় সাংবাদিকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনা দুই পক্ষ তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ‘হাতাহাতিতে জড়ানো’র অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপুকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেন। তবে ওই অভিযোগ ও সাজা দেওয়াকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। সংগঠনটি প্রশ্ন তুলেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতস্থলে যারা ছিল তারা কি কেউ নিরপেক্ষ ছিল? মামলার সঙ্গে জড়িত সবাই ঠিকাদারের শ্রমিক এবং প্রশাসনের লোক। তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তারা আগে থেকেই ওই সাংবাদিকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।
প্রশাসনের উচিত ছিল ঘটনার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু তারা তা না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের ওপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ মিটিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপু বলেন, “কাজের মান খারাপ হচ্ছে, কাদা মেশানো খোয়া দেওয়া হচ্ছে, সিমেন্ট কম দেওয়া হচ্ছে—এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমি সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাই। এ সময় উপসহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলম আমাকে কোনো সহযোগিতা না করে বলেন, ‘তুই জানার কে?’ এরপর ছাতা দিয়ে মারতে শুরু করেন।”
তালা উপজেলা প্রকৌশলী রথিন্দ্র নাথ হালদার বলেন, ‘এ সময় আমি অফিসের কাজে বাইরে ছিলাম।
অফিসে ফিরে শুনি আমার অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়েছে।’ তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল বলেন, ‘একজন সাংবাদিক আমার একজন কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন, এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত শ্রমিকদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে ঘটনার সত্যতা পাই। এ জন্য অভিযুক্তকে ১৭৬ ধারায় ১০ দিনের সাজা প্রদান করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় তালা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম এম হাকিম, সাধারণ সম্পাদক জোয়ার্দ্দার ফারুক হোসেনসহ তালার কর্তব্যরত সাংবাদিকরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে তালায় আজ বুধবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, তালা উপজেলা শাখা।
তালা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম এম হাকিম বলেন, ‘এ ধরনের সাজা দেওয়ার ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ। দুর্নীতির সংবাদ তৈরির জন্য সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহ করতে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁকে উল্টো কেন সাজা দেওয়া হবে?’
একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জোয়ার্দ্দার ফারুক হোসেন বলেন, কর্মরত সব সাংবাদিক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিকসহ তালার সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেছেন, দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় কালের কণ্ঠের সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে এই সাজা প্রদান করা হয়েছে। তাই তাঁরা প্রতিবাদ করবেন।
Post Views: 86