নতুন নামে ডাকো আমায়, এই তো ছিল কামনা

Uncategorized ইতিহাস ঐতিহ্য বিশেষ প্রতিবেদন সাহিত্য

আখতারুজ্জামান আজাদ :  পাকিস্তানের আধ্যাত্মিক জনক ও জাতীয় কবি মুহাম্মদ ইকবালের সপ্তাশীতি মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ২১ এপ্রিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে এ-উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় ‘বিপ্লবী ছাত্রপরিষদ’ দাবি করেছে ইকবালের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চৌদ্দ বছর ধরে ইকবালের নামে হল ছিল— ১৯৫৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত। ঊনসত্তরে সার্জেন্ট জহুরুল হক পাকিস্তানি সৈন্যের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ছাত্ররা ইকবাল হলকে আর ‘ইকবাল হল’ বলে সম্বোধন করেননি, সম্বোধন করেছেন ‘জহুরুল হক হল’ বলে। পাকিস্তানের সাথে সম্পৃক্ত কারো নাম তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখতে চাননি। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ইকবাল হলের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জহুরুল হক হল’ রাখা হয়। ‘বিপ্লবী ছাত্রপরিষদ’ এখন চাইলে জহুরুল হক হলের নামফলক উপড়ে ফেলতে পারে, সাঁটিয়ে দিতে পারে ‘আল্লামা ইকবাল হল’ লেখা নামফলক। এতে কেউ কোনো ধরনের বাধা দেবে না। সবকিছু এখন বাধার ঊর্ধ্বে। তবে, পাকিস্তানপন্থি দাবিদাওয়া উত্থাপনকারী সংগঠনগুলোর উদ্দেশে একটা অনুরোধ থাকবে। সেটা হলো— এত-এত সংগঠন তৈরি না-করে তারা যেন মাদার অর্গানাইজেশনের নামেই সব দাবিদাওয়া উত্থাপন করে। একেক সময়ে একেক সংগঠন বানিয়ে কর্মসূচি দিলে নাম মনে রাখতে ঝামেলা হয়। বিপ্লবী ছাত্রপরিষদ, ইনকিলাব মঞ্চ, স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন, এবি পার্টি, জাতীয় নাগরিক কমিটি, জাতীয় নাগরিক পার্টি— ইত্যাকার সবকিছুর গোড়া যেহেতু একটাই, সেহেতু এত-এত নাম ব্যবহার না-করে খোদ মাদার অর্গানাইজেশনের নামে যাবতীয় দাবিদাওয়া উত্থাপন করলেই ভালো হয়, বুঝতে সুবিধা হয়।


বিজ্ঞাপন

মুহাম্মদ ইকবালের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই হল হতে হবে। ১৯৭১ পর্যন্ত তার নামে হল যেহেতু ছিলই; এখন সেহেতু জহুরুল হক হলের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আল্লামা ইকবাল হল’ করে দিলেই লেঠা চুকে যায়, আর কোনো তকলিফ পোহাতে হয় না, ইকবালের জন্য নতুন হলও নির্মাণ করতে হয় না। যা হোক, এই হলের মুখ-বরাবর আরো দুটো হল আছে। একটার নাম হাজি মুহম্মদ মুহসিন হল। হুগলির এই দানশীল ভদ্রলোকের বাড়ি এখন ভারতের অন্তর্ভুক্ত। তাই, তার নামে আর হল রাখা সমীচীন হবে না। তা ছাড়া, মুহসিন জুলাই স্পিরিটও ধারণ করেন না। এমতাবস্থায় ‘হাজি’র সাথে মিলিয়ে কোনো ‘গাজি’র নামে এই হলের নাম রাখা যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ‘গাজি’ হলেন গাজি সালাউদ্দিন তানভির। এই গাজি নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম-সদস্যসচিব। তার বিরুদ্ধে তদবিরবাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জেলাপ্রশাসক নিয়োগে প্রভাববিস্তারের অভিযোগ আছে, আছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কেনাকাটায় কমিশনবাণিজ্যের অভিযোগ। এর প্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতি দেওয়া হলেও তার ভেতর যেহেতু পর্যাপ্ত জুলাই স্পিরিট আছে, সেহেতু হাজি মুহম্মদ মুহসিন হলের নতুন নাম ‘গাজি সালাউদ্দিন তানভির হল’ রাখার ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকার কথা না।


বিজ্ঞাপন

জহুরুল হক হলের সম্মুখস্থ আরেক হলের নাম এএফ রহমানের নামে। নাইটহুড খেতাবপ্রাপ্ত এই ভদ্রলোকের পুরো নাম আহমেদ ফজলুর রহমান, ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙালি উপাচার্য। কিন্তু বাধ সেধেছে অন্যত্র। জন্ম তার জলপাইগুড়িতে। হুগলির মতো জলপাইগুড়িও এখন ভারতে পড়েছে। ফলে, এই হলের নামও পালটে ফেলা আবশ্যক। আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় থাকলে নামটা সালমান এফ রহমানের নামে রাখলেই হতো। সালমান এফ রহমানের ‘এফ’ মানেও ফজলুর। ‘আহমেদ ফজলুর রহমান’-এর নাম কেটে ‘সালমান ফজলুর রহমান’ বসালে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত না। যে-ভারত আওয়ামি লিগের হাজার-হাজার পলাতক নেতাকে কোলে-পিঠে করে পেলেপুষে বুকে আগলে রাখছে, সেই ভারত মহান ভারত। মহান ভারত এবং মহাভারত কখনও অশুদ্ধ হতে পারে না। আওয়ামি লিগ এখন যেহেতু ক্ষমতায় নেই, সেহেতু স্যার এএফ রহমান হলের নাম এখন হতে পারে ‘স্যার ডিএস রহমান হল’। এই ‘ডিএস রহমান’ হলেন জামায়াতে ইসলামির চুম্বনপটিয়সী আমির— ডা. শফিকুর রহমান। উল্লিখিত সব ক’টা হলই নীলক্ষেত এলাকায় অবস্থিত। ‘নীলক্ষেত’ নামটিও এখন পরিবর্তনের দাবি রাখে। নতুন নাম হতে পারে ‘লালক্ষেত’, যেহেতু দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে লাল প্রোফাইল পিকচারের অপরিসীম ভূমিকা ছিল। নীলক্ষেতেই অবস্থিত ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীদের যদি আপত্তি না-থাকে, তা হলে এই কলেজের নাম হতে পারে ‘বাইডেন মহিলা কলেজ’। জুলাইয়ে জো বাইডেন ইউএসএর রাষ্ট্রপতি থাকায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন সহজ হয়েছে। তখন ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি থাকলে দেশ পরাধীনই থাকত।


বিজ্ঞাপন

নীলক্ষেত থেকে সামান্য দূরে নিউ মার্কেটে আছে ‘শহিদ শাহ্‌ নেওয়াজ ছাত্রাবাস’, এখানে চারুকলা অনুষদের ছেলেপুলেরা থাকে। এই ছাত্রাবাসের নাম ‘শাহ্‌ আজিজ ছাত্রাবাস’ রাখা যেতেই পারে। শাহ্‌ আজিজুর রহমান বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেরও বিরোধিতা করেছিলেন, জেল খেটেছিলেন বাহাত্তরের দালাল আইনে, পেয়েছিলেন তিয়াত্তরের সাধারণ ক্ষমা। পেয়ে আবারও বাংলাদেশবিরোধিতায় নেমেছিলেন, হয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের প্রধানমন্ত্রী, উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের। পক্ষান্তরে, চারুকলার ছাত্র শাহ্‌ নেওয়াজ নিহত হয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। চব্বিশের মুক্তিযুদ্ধ যেহেতু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিস্থাপন করে ফেলেছে এবং শাহ্‌ আজিজুর রহমানরা যেহেতু চব্বিশের সমন্বয়কদের অন্যতম প্রাণপুরুষ, সেহেতু ‘শাহ্‌ নেওয়াজ ছাত্রাবাস’ এখন থেকে অবিসংবাদিতভাবেই ‘শাহ্‌ আজিজ ছাত্রাবাস’। নিউ মার্কেটে মেয়েদের হল আছে দুটো— ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ আর ‘বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল’। ৫ আগস্টের পর মৈত্রীর ধরন পালটে গেছে। নতুন মৈত্রী অনুযায়ী এখন হলের নতুন নাম হতে পারে ‘ঢাকা-ইসলামাবাদ মৈত্রী হল’। এই নাম পছন্দ না-হলে ‘ঢাকা-করাচি মৈত্রী হল’, ‘ঢাকা-লাহোর মৈত্রী হল’ কিংবা ‘ঢাকা-পেশাওয়ার মৈত্রী হল’ নামও বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। ৫ আগস্টের পর বঙ্গমাতাও বদলে গেছে। এখন ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’-এর নাম ‘বঙ্গমাতা নুসরাত ইমরোজ তিশা হল’ হলেই দ্বিতীয় স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। তিশা শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিকে ফজিলাতুন্নেছা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তা ছাড়া তিনি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ত্রীও। তিশার নামে হল হ’লে তিশার পাশাপাশি ফারুকীও একটা স্বীকৃতি পান, ব্যাপারটা ইনক্লুসিভ হয়।

আর বেগম রোকেয়া হলের নাম হতে হবে ‘বেগম সামান্থা শারমিন হল’। জাতীয় নাগরিক পার্টির এই নেত্রী নতুন বাংলাদেশের নারীজাগরণের অবিশ্বাস্য অগ্রদূত। রোকেয়া হলে যে ‘৭ই মার্চ ভবন’ ভবন আছে, সেটার নাম ‘১০ শতাংশ ভবন’ রাখা যেতেই পারে— বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি সম্মান জানিয়ে। মেয়েদের আরেক হল যার নামে; সেই সুফিয়া কামাল ছিলেন শাহবাগি, পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিতকরণে পালন করেছেন সাংস্কৃতিক ভূমিকা, বিরানব্বইয়ে অংশ নিয়েছেন গণআদালতে। ফলে, ‘সুফিয়া কামাল’ নামটা জুলাই স্পিরিটের সাথে সংগতিপূর্ণ না। এই হলের নাম হতে হবে ‘পরিবেশকুমারী রিজওয়ানা হাসান হল’ অথবা ‘জুলাই-জায়া নুসরাত তাবাসসুম হল’। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ’-এর নতুন নাম হবে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় বেলার মাঠ’। কারণ, উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের এনজিওর নাম ‘বেলা’। এই সূত্রে ফুলার রোডের নামও রাখা যায় বেলা’র রোড। ওদিকে শামসুন নাহার হলের নাম হতে হবে ‘ফরিদা-ফরহাদ হল’। কবি ফরহাদ মজহার হেফাজতে ইসলামের তাত্ত্বিক গুরু, আবার জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়কদেরও আধ্যাত্মিক নেতা। তার স্ত্রী ফরিদা আখতার ওদিকে আবার অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য উপদেষ্টা। এই দম্পতির নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ছাত্রাবাস থাকা বাঞ্ছনীয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ার অন্যতম সদস্য ‘কবি জসীমউদ্‌দীন হল’। জসীমের সাথে ছন্দে মেলে ‘অসীম’। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতার নাম নাসিরউদ্দিন অসীম। আইনজীবী। এই সূত্রে এই হল এখন থেকে ‘অসীমউদ্‌দীন হল’ও হতে পারে। এই হলের নাম অপরিবর্তিতও রাখা যেতে পারে। কারণ, জসীমউদ্‌দীন ছিলেন বিএনপির প্রয়াত আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদের শ্বশুর। শ্বশুর কোটায় তাকে মাফ করে দেওয়া যায়। অবশ্য, সমন্বয়করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিকে সাইড দিতে না-চাইলে কবি জসীমউদ্‌দীন হলের নাম ‘পাটোয়ারি নাসিরউদ্দিন হল’ও রাখতে পারে। নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রধান অংশীদার জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন শীর্ষনেতা। পার্শ্ববর্তী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পালটে যেকোনো কিছু রাখা যেতে পারে। এ-ব্যাপারে কোনো মন্তব্যই নেই। এই হলের নাম এখনও কেন অপরিবর্তিত রয়েছে, সেটাই বোধগম্য না। বঙ্গবন্ধু হলের নাম ‘মেজর শরিফুল হক ডালিম হল’ রাখলে চব্বিশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সর্বাঙ্গসুন্দর হয়। এই সূর্যসন্তান নিজেই বলেছেন চব্বিশের স্বাধীনতা তাদের পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের বিপ্লবেরই ধারাবাহিকতা। এই সূত্রে ‘বিজয় একাত্তর হল’-এর নামও হতে হবে নিঃসন্দেহে ‘বিজয় পঁচাত্তর হল’। কারণ, এই সূর্যসন্তানদের ভাষ্যমতে— বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা একাত্তরে নিশ্চিত হয়নি, নিশ্চিত হয়েছে পঁচাত্তরে। বঙ্গবন্ধু হল আর বিজয় একাত্তর হলের মধ্যবর্তী হলটি হলো ‘মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল’। নামপরিবর্তনসংক্রান্ত আলোচনায় জিয়া হলের নাম মাঝখান দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার কারণ হলো— জিয়া হলই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র হল, নতুন বাংলাদেশে যে-হলের নামপরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। অন্য সব মুক্তিযোদ্ধা খারাপ হলেও জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের একমাত্র ভালো মুক্তিযোদ্ধা। বিজয় একাত্তর-সংলগ্ন মাস্টারদা সূর্যসেন হলের নাম হতে হবে ‘দাদাভাই পিনাকী ভট্টাচার্য হল’— এ-ব্যাপারে যারা দ্বিমত পোষণ করবে, ছাত্রজনতার উচিত হবে পিটিয়ে তাদের পাছার চামড়া জয় বাংলা করে দেওয়া এবং তাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া। অন্য সব অমুসলমান খারাপ হলেও বাংলাদেশের একমাত্র ভালো অমুসলমান পিনাকী ভট্টাচার্য।

ওদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুসলমান ছাত্রদের একমাত্র হল ‘জগন্নাথ হল’। মানিকগঞ্জের জমিদার কিশোরীলাল রায়চৌধুরীর বাবা জগন্নাথ রায়চৌধুরীর নামে এই হল। এই একই জগন্নাথের নামে পুরান ঢাকার সদরঘাটে এমনিতেই একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। চব্বিশের হাত ধরে সময় এসেছে পরিবর্তনের। জগন্নাথ রায়চৌধুরীর নামে যে-হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে, নতুন বাংলাদেশে সেই হলের নাম হতে হবে অন্য এক ‘রায়চৌধুরী’র নামে— নিপুণ রায়চৌধুরী। জগন্নাথ মানিকগঞ্জের, নিপুণ কেরানিগঞ্জের। ভদ্রমহিলা ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ২০২৩-এ তিনি বিএনপির সদরদপ্তরের সামনে স্লোগান দিয়েছিলেন— ‘খালেদা জিয়ার চামচারা, হুঁশিয়ার সাবধান’। তিনি আসলে শেখ হাসিনার চামচাদেরকে সাবধান করতে চেয়েছিলেন, ভুলক্রমে খালেদা জিয়ার চামচাদেরকেই হুঁশিয়ার করে ফেলেছেন। আত্মঘাতী স্লোগান দিয়ে ঘরে-বাইরে বিপদে পড়ে ফেসবুকে এসে তিনি এর ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন, বলতে চেয়েছিলেন— মানুষের ‘স্লিপ অব টাং’ হতেই পারে। কিন্তু ‘স্লিপ অব টাং’-কে তিনি বলে ফেলেছিলেন ‘টাং অব স্লিপ’। অর্থাৎ নিপুণ মুখ খুললেই বিপদ। নিপুণ যখন চোখে কাজল, গায়ে সোনালি-পাড় কালো শাড়ি, সোনালি-কালো ব্লাউজ, কপালে কালো ফিতে পরে, চুল ফুলিয়ে, ছোট্ট লাঠির শীর্ষে দলীয় পতাকা বেঁধে হাঁটেন বা বিএনপির ব্যানার নিয়ে মিছিলের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দেন; তখন তাকে ভালো লাগে। ধানীরঙা শাড়ি পরে বিদ্যুৎবিভ্রাটের প্রতিবাদে যখন রাজপথে প্লাস্টিকের হারিকেন নিয়ে রুহুল কবীর রিজভির পাশে দাঁড়িয়ে নিপুণ ছবি তোলেন বা মশাল নিয়ে হাঁটেন; এলইডি বাতির তীব্র ঝলকানিতে তখন তাকে ভালো লাগে, তখন এলইডির ফ্ল্যাশলাইটকেও নিপুণের নিয়ন আলোর কাছে ম্লান মনে হয়, মশালের আলোকেও মনে হয় ম্রিয়মাণ। নিপুণ আপন আলোয় উদ্ভাসিত, আপন কণ্ঠে বিপর্যস্ত। নিপুণ ততক্ষণ পর্যন্তই সুন্দর, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিজের মুখটা বন্ধ রাখেন। নিপুণ মুখ খুললেই সব শেষ। কবি সেজুল হোসেন বলেছেন— ‘মুখ দেখে যায় না চেনা না-ঘাঁটিলে মনেরই অন্তর; বন্ধু, তুমি ছবিতেই সুন্দর’। যা হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ রায়চৌধুরী হল এখন থেকে ‘নিপুণ রায়চৌধুরী হল’। ওদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘গয়েশ্বর বিশ্ববিদ্যালয়’ রাখার পূর্ণ সুযোগ আছে। উল্লেখ্য, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিপুণ রায়চৌধুরীর শ্বশুর এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনিও একজন মোটামুটি পর্যায়ের ভালো অমুসলমান।

জগন্নাথ হলের পাশেই আছে এসএম হল। এসএম হলের নতুন নাম ‘এসএ হল’ না-হয়ে পারেই না। এসএম হল মানে ‘সলিমুল্লাহ্‌ মুসলিম হল’, সলিমুল্লাহ্‌ ছিলেন ঢাকার চতুর্থ নবাব। পক্ষান্তরে ‘এসএ হল’ মানে ‘সারজিস আলম হল’, সারজিস হলেন পঞ্চগড়ের তৃতীয় নবাব। সারজিসের দাদা ছিলেন পঞ্চগড়ের প্রথম নবাব, বাবা দ্বিতীয়। পঞ্চগড় সালতানাতের এই জবরদস্ত জমিদার পারিবারিক খরচে বিমানে যাতায়াত করেন, দেড় শতাধিক মোটরগাড়ি নিয়ে রাজনৈতিক প্রদর্শনী করেন, যাপন করেন সুলতানি জীবন; ছিলেন জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক, বর্তমানে নাগরিক পার্টির উজির-এ-উত্তরবঙ্গ। চানখাঁরপুলের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আছে তিনটা— অমর একুশে হল, ফজলুল হক হল আর শহীদুল্লাহ্ হল। একুশে হলের নাম রাখতে হবে ‘অধ্যাপক গোলাম আজম হল’, যেহেতু তিনিই দেশের একমাত্র ব্যক্তি— যিনি নিজেকে ভাষাসৈনিকও দাবি করেন, আবার মুক্তিযুদ্ধের কিছুদিন আগে বলেছিলেন ভাষা-আন্দোলন করিয়া ভুল করিয়াছি। আর, ফজলুল হক হলের নাম ‘বজলুল হুদা হল’ রাখাই বাঞ্ছনীয়। সেনাবাহিনীর এই সূর্যসন্তান পঁচাত্তরে ‘পনেরোই আগস্ট’ ঘটিয়ে চব্বিশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার পথ সুগম করেছিলেন। আর ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল’ নামটা এখন সেকেলে। খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মামুনুল হক ২০২১ সালে জনৈক ‘শহিদুল ভাইয়ের ওয়াইফ’কে নিয়ে রয়েল রিসোর্টে গিয়েছিলেন এবং এ নিয়ে তাকে পোহাতে হয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ও পারিবারিক বিড়ম্বনা। ফলে, ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল’-এর নাম ‘ড. মুহম্মদ মামুনুল হক হল’ রাখার যথেষ্ট অবকাশ আছে। তবে, এ-ক্ষেত্রে এই হলের ৫০১ নাম্বার কক্ষটি সবসময় খালি রাখতে হবে— মামুনুল হকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের নাম হোক ‘পালন চত্বর’— তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের প্রিয় ‘পালনবাদ’ অনুসারে। হাকিম চত্বরের নাম হতে পারে ‘কাশিম চত্বর’— ইসলামি ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম শাখার মুক্তিযুদ্ধকালীন সভাপতি মির কাশিম আলীর নামানুসারে। ভিসি বাংলোর নতুন নাম ‘কিসি বাংলো’ হবে মানানসই— জামায়াত আমিরের কিসপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে। জিমনেশিয়ামের নাম হতে পারে ‘নিমনেশিয়াম’— নাগরিক পার্টির নেত্রী তাসনিম জারার নামানুসারে। টিএসসির নাম হতে পারে ‘পিএসসি’; যেহেতু সরকারি চাকরিতে কোটা না-রাখার দাবিতেই জুলাই আন্দোলন হয়েছিল এবং যেহেতু সবচেয়ে লোভনীয় সরকারি চাকরিগুলো পিএসসিই দিয়ে থাকে। ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্যের নতুন নাম কোনো সন্দেহ ছাড়া ‘অপরাজেয় উর্দু’। বাংলাদেশের শিখধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম উপাসনালয় ‘গুরুদুয়ারা নানকশাহি’, যেটা অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে। ওদিকে, জুলাই আন্দোলনের অধিকাংশ সমন্বয়কই এককালে গণঅধিকার পরিষদ করত; যেটার প্রধান নেতা নুরুল হক নুর। আবার, সমন্বয়কদের বর্তমান নেতা নাহিদ ইসলাম। সমন্বয়কদের দুই রাজনৈতিক গুরুর প্রতি সম্মান রেখে গুরুদুয়ারা নানকশাহির নতুন নাম ‘নুরুদুয়ারা নাহিদশাহি’ রাখলে ব্যাপারটা যথেষ্ট ইনক্লুসিভ হয়। টিএসসিতে স্থাপিত একটা ভাস্কর্যের নাম ‘শান্তির পায়রা’। এই ভাস্কর্যের নাম ‘ইউনুসের পায়রা’ রাখা যেতে পারে, যেহেতু তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়ে এসেছেন। সত্যিকার অর্থে, ভাস্কর্যটার নাম শুধু ‘ইউনুস’ রাখলেও চলে; কারণ, তিনি নিজেই এখন শান্তির পায়রা। ড. ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে অনেকেই ডাকে ‘গণশত্রু’ বলে। শফিকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ’-এর নতুন নাম ‘গণশত্রু ও সাংবাদিকতা বিভাগ’ রাখা এখন সময়ের দাবি। আইইআর-এর পূর্ণরূপ ‘ইনস্টিটিউট অব এজুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর পরিবর্তে লেখা যায় ‘ইনস্টিটিউট অব ইলিয়াস অ্যান্ড রিসার্চ’। আর, সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারকভাস্কর্য’ এখন থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী হাসনাত আবদুল্লাহ্‌ ভাস্কর্য’। রাজু আর মীনা যেমন সহোদর, রাজু আর হাসনাতও তা-ই। এই শের-এ-কুমিল্লা জুলাই বিপ্লবের অন্যতম শীর্ষকারিগর, এখন নাগরিক পার্টির উজির-এ-দক্ষিণবঙ্গ।

ফিরিয়ে আনা যেতে পারে সোহ্‌রাওয়ার্দি উদ্যানের পুরোনো নাম ‘রেসকোর্স ময়দান’। যেহেতু বিপ্লবীরা এখানে গঞ্জিকা সেবন করতে-করতে ন্যারেটিভ, কাউন্টার ন্যারেটিভ, গ্র‍্যান্ড ন্যারেটিভ, হেজেমনি ও ডিসকোর্স নিয়ে আলাপ দেন; সেহেতু এরপর এই রেসকোর্স ময়দানের নতুন নাম রাখা যেতে পারে ‘ডিসকোর্স ময়দান’। কলাভবনের সম্মুখস্থ বটতলার নাম রাখা উচিত ‘চটতলা’, যেহেতু শেখ হাসিনা বলেছেন তিনি যেকোনো সময়ে চট করে দেশে ঢুকে যাবেন। চানখাঁরপুল-সংলগ্ন কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের নাম রাখা যেতে পারে আরেক কাজীর নামে— কাজী মুহম্মদ ইব্রাহিম। দুই হাজার কুড়ি খ্রিষ্টাব্দে এই মুফতি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন— ‘ওয়ান ডট কিউ সেভেন, প্লাস সিক্স, ইকুয়াল টু থার্টিন’। উল্লেখ্য, জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন এবং ইংরেজ বিজ্ঞানী ইসহাক নিউটন ছিলেন মুফতি ইব্রাহিমেরই সুযোগ্য ছাত্র। আরেক দিকে, যেহেতু কলাভবনে প্রচুর ছাত্রী ক্লাস করে এবং যেহেতু ছাত্রীদেরকে দেখামাত্র ছাত্র ও শিক্ষকদের লালা ঝরে বলে কোনো-কোনো প্রয়াত ধর্মগুরু মত দিয়ে গেছেন; সেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের নাম ‘লালাভবন’ রাখার অবকাশ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন’। এটার নতুন নামও রাখতে হবে অনিবার্যভাবে ‘নবাব সারজিস আলম চৌধুরী সিনেট ভবন’। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই ব্যক্তির নামে একাধিক স্থাপনা থাকা যদিও সামান্য দৃষ্টিকটু, তবুও সারজিস আলমের ব্যাপারে ব্যতিক্রম ঘটানো যেতে পারে। কারণ, সারজিসই দুই বাংলার একমাত্র জীবিত নবাব। সারজিসের মাতামহের দান করে যাওয়া জমিতেই গড়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু ছাত্রাবাস ও অ্যাকাডেমিক ভবন।

ওদিকে, ‘কার্জন হল’ নির্মাণ করেছিলেন ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল ‘জর্জ নাথানিয়েল কার্জন’—একশো একুশ বছর আগে, ১৯০৪ সালে (কার্জন ছিলেন সারজিস আলমের প্রপিতামহ ইদ্রিস আলমের বাল্যবন্ধু)। ভবনটা নির্মিত হয়েছিল টাউন হল হিশেবে অথবা ঢাকা কলেজের লাইব্রেরি হিশেবে। কার্জন হলে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ক্লাস হয়। এদিকে, বাংলাদেশে অত্যন্ত স্বনামধন্য ও গুরুত্বপূর্ণ চারজন ‘আসিফ’ আছেন— ১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, ২) জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়ক ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, ৩) ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অতিথি শিক্ষক— পাঠ্যপুস্তক ছিঁড়ে আলোচিত হওয়া দার্শনিক আসিফ মাহতাব উৎস এবং ৪) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ অর্ণব। উল্লেখ্য, এই শেষোক্ত আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই ওড়না ইশুতে হেনস্তা করে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। শাহবাগ থানা থেকে মুক্ত করে তৌহিদি জনতা এই আসিফের মাথায় পাগড়ি পরিয়ে গলায় ফুলের মালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল, হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল ধর্মগ্রন্থ। নিজের কৃতকর্মের সাফাই হিশেবে এই আসিফ থানায় বসে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন— ‘আমি তো বলি নাই যে, আপনার দুধটা বড়-বড়; এমনভাবে গালিগালাজ করে বলি নাই।’ এই চার কৃতী আসিফের নামে কার্জন হলের নাম হোক ‘চারজন হল’।

ক্লান্ত লাগছে বেশ। লেখাটা লিখতে শুরু করেছি ইতোমধ্যেই নিরবচ্ছিন্ন আট ঘণ্টা হয়ে গেছে। ইত্যবসরে মনে পড়ল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর কথা। ভদ্রলোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন, ছিলেন ছাত্রদলের সভাপতি, কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদকও। বেশ সুবক্তা তিনি, টেলিভিশন টকশোয় তার আলোকোজ্জ্বল উপস্থিতি নিয়মিত চোখে পড়ে। কলামের শেষপ্রান্তে এসে ইচ্ছে করছে এই মানুষটার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা-কিছুর নাম রাখতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনব্যবসায়ী মধুসূদন দে নিহত হয়েছেন যেহেতু মুক্তিযুদ্ধে— মুক্তিযুদ্ধের একদম প্রথম প্রহরে, ২৬ মার্চ— এবং যেহেতু তার ক্যান্টিনটা ব্যবহৃত হতো মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মিলনস্থল হিশেবে, সেহেতু মধুসূদন দে জুলাই স্পিরিটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। জুলাই স্পিরিটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না মধুর ক্যান্টিনও। মধুর ক্যান্টিনের নাম শামসুজ্জামান দুদুর নামানুসারে ‘দুদুর ক্যান্টিন’ রাখলে জুলাই আন্দোলনে বিএনপির অবদানের একটা ন্যূনতম স্বীকৃতি নিশ্চিত হয়। সবচেয়ে ভালো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ইনকিলাব বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘ইউনিভার্সিটি অব জুলাই স্পিরিট’ কিংবা ‘ইউনিভার্সিটি অব মেটিকিউলাস ডিজাইন’ রাখলে।

পুনশ্চ :  ১৯৬৯ সালে মুক্তি পেয়েছিল মমতাজ আলী পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘নতুন নামে ডাকো’। গীতিকার আহমেদ জামান চৌধুরী সেই চলচ্চিত্রের জন্য একটা গান লিখেছিলেন। সুর করেছিলেন আলী হোসেন, গেয়েছিলেন পাকিস্তানি গায়িকা নাহিদ নিয়াজি, অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশী নায়িকা সুচন্দা। গানটার কিয়দংশ এই—

‘নতুন নামে ডাকো আমায়, এই তো ছিল কামনা;
রঙের পরশে রাঙিয়ে দিলে মনের যত বাসনা।
কে তুমি, বলো না;
নতুন নামে ডাকো আমায়, এই তো ছিল কামনা।
প্রজাপতি-মনে আমার, কেন যে বাজে শুধু বীণা;
আকাশ-গীতালি কেন বলে কেঁদো না তুমি, কেঁদো না;
এত যে সুখ সইতে গিয়ে সইবে কি, জানি না;
নতুন নামে ডাকো আমায়, এই তো ছিল কামনা।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *