প্রবাসীদের সাথে বিরূপ আচরণ আদৌ ঠিক না

অন্যান্য জীবন-যাপন

এইচ এম মেহেদী হাসান

প্রবাসীরাও আমাদের সমাজের, আমাদের রাষ্ট্রের মানুষ। আমাদের কারও সন্তান, কারও পিতা, কারও ভাই, কারও আত্মার বন্ধন। জীবনের চাকা ঘুড়াতে কিংবা রাষ্ট্রের চাকা সচল করতে নিজের রক্তের বন্ধন দূরে ঠেলে দিয়ে প্রবাসে শত কষ্ঠের মাঝে, নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কষ্টার্জিত উপার্জন নিজের দেশে পাঠাচ্ছে। অথচ দেশের মাটিতে-ই আজ তারা প্রবাসী।
করোনাভাইরাস(কোভিড-১৯) এর কারণে সারা পৃথিবী আজ একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এটা বৈশ্বিক সংকট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী মহামারী। এতে কারও প্রশ্ন নেই,বা থাকার কথাও না। সমস্যা অন্য জায়গায়। সমস্যাটা সচেতনতার অভাবে। সমস্যা হয়েছে সোস্যাল মিডিয়ার অপপ্রচারের কারণে। আজ তারা নিজ দেশে প্রবাসীর চাইতেও বড় প্রবাসীর জীবন যাপন করে করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদেরকে বাঘের চাইতেও বেশি ভয়ানক মনে করছে সমাজের কিছু মানুষ। কোভিড-১৯ সম্পর্কে যাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নাই। একসময় আপনজন আত্মীয় স্বজন পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতো। অথচ আজ তারা-ই সেই প্রবাসীদের সাথে খারাপ আচরণ করছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা চরম হতাশার ও দুঃখজনকও বটে। অনেক ক্ষেত্রে নিজের রক্তের বন্ধন দূরে ঠিলে দিয়েছে অথচ দুইদিন আগেও যাঁরা মাথায় তুলে রাখতো কিছু আর্থিক বা অন্যান্য সুযোগসুবিধা পাওয়ার আশায়। ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এমনভাবে প্রচার করো হলো যে,বিদেশ থেকে যিনি এসেছেন তিনি-ই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। সুতরাং তাঁদের থেকে দূরে থাকো, এতে করে তাঁদের প্রতি সমাজে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষ খুবই দ্রুত গ্রহণ করে প্রবাসীদের বাঘের চাইতেও বেশি ভয়ানক ভাবতে শুরু করে। কিন্তু একবারও তাদের মনে হয়নি এই প্রবাসীরা আমাদের দেশের অর্থনীতির বহুলাংশে বাব মা। যাঁদের ঘাম ঝড়ানো রেমিটেন্সে আজ বাংলাদেশ অনেকটা-ই স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।
তবে এখানে অনেকেই বলে থাকেন প্রবাসীরাও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেননি। সেটাও যেমন সত্য, আবার এটাও মনে করা উচিত নয় যে, সব প্রবাসীরা দায়িত্বশীল ছিলেন না। বেশির ভাগ প্রবাসী-ই আইইডিসিআরের নির্দেশ মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেছেন। আবার কেউ আইইডিসিআরের তত্বাবধানে কোয়ারেন্টাইনে থেকেছেন। তবে এখানে যতি কোনো গ্যাপ থেকে থাকে সেটা আমাদের দেশের ব্যবস্থাপনার ছিল। এর দায় দায়িত্বতো রেমিটেন্স যোদ্ধারা নিতে পাড়ে না। সুতরাং যা হয়েছে তা আদৌ উচিত হয়নি। তবে কিছু প্রবাসী অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে, সেটাও কাম্য নয়। তবে আগেই উচিত ছিল প্রবাসীরা দেশে আসলে তাঁদের কিভাবে হ্যান্ডেলিক করা যায়, সেই বিষয়ে পরিকল্পনা করা এবং সেই মোতাবেক কাজ করলে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সাথে এমন হওয়ার সম্ভবনার কোনো কারণ হতো না। হয়তো করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ কে পরাজিত করে বিশ্ব এগিয়ে যাবে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশও সংকট কাটিয়ে আবার সবকিছু ঠিকঠাক করে এগিয়ে যাবে বীরদর্পে। যেহেতু করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ মারাত্মকভাবে ছোঁয়াচে একটি ভাইরাস। সেই ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন শতভাগ নিশ্চিত করে যদি প্রবাসীরাও একটু এগিয়ে আসতো, সেই ক্ষেত্রে মনে হয় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। যা হোক প্রবাসীদের নিয়ে এই ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ভবিষ্যতে অভিজ্ঞতা হিসেবে বেশি কাজে দেবে। একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র আহবানে সাড়া দিয়ে বেশির ভাগ প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থ পাঠাচ্ছে দেশে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ঘোষণা দিয়েছেন যারা বৈধ পথে অর্থ পাঠাবে সরকার তাদের দুই শতাংশ প্রণোদনা দিবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা সময় সবাই নিজের সম্পদ বিক্রি করে বিদেশ গিয়ে ব্যর্থ হয়ে সর্বশান্ত হয়ে ফিরে আসতো। তাই অভিবাসীদের সহযোগিতার জন্য অভিবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জোড়ালোভাবে বলেন, বিদেশগামী কেউ প্রতারণার শিকার হলে রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সেই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সাথে করোনার নামে যাচ্ছে তা আচরণ দেশের অধিকাংশ মানুষই মেনে নেয়নি। সুতরাং কিছু মানুষের দেওয়া কাঁটার আঘাত আপনারা একটু সহ্য করে নেন। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা আপনাদের জন্য ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আপনাদের কষ্টে তিনিও মর্মাহত। দেশের এই ক্রান্তিকালে আপনারাও দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আপনাদের ঋণের কথা দেশের মানুষ কখনও ভুলে যায়নি।মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও প্রবাসীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। জাতি আজও তা স্মরণ করে শ্রদ্ধার সাথে। কিছু নেতিবাচক প্রচার প্রচারণা আমাদের রক্তের সম্পর্ককে আলাদা করতে পাড়বে না। বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি, আমাদের মা, আমরা তাঁর সন্তান। সুতরাং সন্তানকে কখনও মা ভুলে থাকতে পাড়ে না। আর সন্তানও মাকে ভুলে থাকতে পাড়ে না। ক্ষণিকের জন্যে মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকলেও মা ঠিকই সন্তানের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকে। সুতরাং এই সংকটকালে প্রবাসীদের পাশে আছেন আমাদের মাতৃতুল্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । পুরো দেশ আপনাদের পাশে রয়েছে। যেহেতু কোভিড-১৯ সামাজিক দূরত্বের কারণ। কিন্তু হৃদয়ের বন্ধন ঠিকই আছে। আত্মার বন্ধন ঠিকই আছে। শুধুমাত্র বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমরা দূরত্ব বজায় রেখেছি, আমাদের স্বার্থে, আমাদের মাতৃভূমির স্বার্থে। আমাদের মাকে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে, আপনার আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে কোভিড-১৯ থেকে বাঁচাতে আমাদের এই সামাজিক দূরত্ব ক্ষণিকের জন্যে। পুরো বিশ্ব আজ একই নিয়মে চলছে, নেই কোনো আলাদা নিয়ম, নেই কোনো ধনী গরীব রাষ্ট্রের আলাদা নিয়ম। নেই কোনো বৈষম্য। শুধুই সৃষ্টিকর্তার পানে সবার একটাই চাওয়া, মুক্ত করো আমাদের এই অভিশাপ থেকে, মুক্ত করো আমাদের এই দূরত্বের বৈষম্যের হাত থেকে। নেই কোনো প্রতিষেধক, নেইকোনো প্রতিকার।
শুধুমাত্র সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা। প্রকৃতির পছন্দমত একাকীত্ব থাকা। বারবার সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোঁয়া, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, সচেতন থাকা। সবই একই নিয়মে চলছে পুরো বিশ্ব। ক্ষণিকের জন্যে হলেও প্রকৃতি আমাদের সবাইকে একই নিয়মে চলতে বাধ্য করেছে। সুতরাং এখানে কেউ আর প্রবাসী নয়, সবাই যেনো নিজ দেশে পরবাসীর জীবনযাপন করছে।
অনেক সময় দেখা যায় প্রবাসীরা শুধু কোভিড-১৯ এর কারণেই হেনস্তা হয়েছেন, তা কিন্ত নয়। অনেক সময় দেশে আসলে এয়ারপোর্টে হয়রানির শিকার হতে হয়। অবশ্য সেটা এখন প্রায় শূন্যের কাছাছি আছে। বর্তমান সরকার প্রবাসী বান্ধব সরকার। প্রায় এক কোটি চল্লিশ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছেন। নিজেদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। গত দশ বছরে প্রবাসীদের কাছ থেকে ১৫৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। একটি সময়ের দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি তৈরি পোষাক শিল্পকে পাশ কাটিয়ে দেশের বর্তমান মূল চালিকা শক্তি বৈদেশিক কর্মসংস্থান। গত কয়েক বছর ধরে তৈরি পোষাক শিল্পের কর্মকর্তারা এই খাতকে চল্লিশ লক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত আছে বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের ১৭৩ টি দেশের ১ কোটি ৪০ লক্ষের অধিক প্রবাসী বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে রেমিটেন্স প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা স্বচ্ছল করতে শক্তি যোগান দিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে। সুতরাং প্রবাসীদের সাথে আমাদের সম্পর্কটাও আত্মার। তাঁদের সাথে যা ইচ্ছে তা-ই করা আমাদের পায়ে কুড়াল মারার সমতুল্য। ঘরের লক্ষীকে পায়ে ঠেলে দেওয়ার মতো। প্রবাসীদের জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো নেতিবাচক সংবাদ বা নেতিবাচক সমাজের মনোভাব যেনো আমাদের এই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের দেশের প্রতি বিমুখ না করে। সেই বিষয়গুলোও খেয়াল করা জরুরী। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরে বিদেশে এক কোটি আঠাশ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির ঘোষণার কথা ছিল, তা এখন বাস্তবায়ন হয়েছে শতভাগ এবং কি টার্গেটের চাইতেও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রবাসে। এই পরিকল্পনার আওতায় প্রতি বছর গড়ে প্রতি উপজেলা থেকে এক হাজার দক্ষ জনশক্তি বিদেশে প্রেরণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও ইশতেহারে বলা হয়েছিল। আর তার ধারাবাহিকতায় আজ দক্ষ জনশক্তি বিদেশে প্রেরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই দক্ষ জনশক্তির অভাবে অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে পড়ছে। সেসব দেশ অন্য দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে তাদের অর্থনীতিকে স্বচ্ছল করছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ১৯৭৫ সাল থেকে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু করেছে বাংলাদেশ।
অনেকে হয়তো মনে করতে পাড়েন, ধান ভানতে সিঁদুরের গীতের মতো আমি বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছি। আমরা বাঙালি জাতি, নগদে বিশ্বাসী, অল্পতেই আবার ভুলে যাই। তাই একটু মনে করিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টামাত্র।
অথচ গ্রামে প্রবাসী দেখলেই অনেকেই এখনো শঙ্কিত হচ্ছেন, তাঁদের আড় চোখে দেখছেন, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করছেন। এমনও দিন ছিল প্রবাসীরা আসলে সবাই দেখার জন্য বা আত্মীয় স্বজন চলে আসতো, আজ সেই তারা-ই অন্যরকম। এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও অন্যরকম থাকা দোষের নয় কিন্তু ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশটা যেনো নিষ্ঠুর না হয়। এখানে আরেকটি কথা বলা বাহুল্য এই কোভিড-১৯ এর কারণে কিংবা এই বৈশ্বিক সংকটের সময় প্রবাসীদের দেশে আসার সুযোগ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত কতোটুকু সঠিক ছিল সেটারও এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে প্রবাসীদের যদি সরকার দেশে আসতে নিষেধাজ্ঞা দিতো, তবে সেটাও তাঁদের সাথে অন্যায় হতো। প্রবাসীরা অনেক দিন পর তাঁর পরিবারের সাথে মিলিত হয়ে থাকেন। প্রবাসীরা তো যখন তখন দেশে আসতেও পাড়েন না। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে উভয় সংকট। তবে সব সংকটেরই উত্তরণ আছে।
অনেকের অভিযোগ দেশে আসার পর তাঁদের সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনের নামে যা কিছু করা হয়েছে সেটাও কাম্যনয়। আমিও মনে করি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। আবার অনেকেই বলেন, প্রবাসীরাও নিয়ম মানছেননা। এটা হয়তো ঠিক,কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সাথে যাচ্ছে তা-ই আচরণ করবেন। রেমিটেন্স যোদ্ধা বাদ দেন প্রবাসীরা তো আমাদের দেশেরই সন্তান। তাঁদের ভালো মন্দের ভাগ আমরাই তো ভাগাভাগি করে নেবো।
যেহেতু তাঁদের দেশে আসার ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা ছিলোনা, অনেকের মন্তব্য এয়ারপোর্টে আসামাত্র তাঁদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা সরকারের করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে আমরা তাঁদের সাথে খারাপ আচরণ করেছি।
আবার এই প্রশ্ন থেকেই যায়, বাংলাদেশের মতো দেশের-ই বা এতো সংখ্যক প্রবাসীদের কোয়ারেন্টািইনে রাখার সক্ষমতা কতোটুকু ছিল ঐ মুহূর্তে। বিপুল সংখ্যক প্রবাসীরাও কিন্তু পাঁচ তারকা মানের হোটেল ছাড়া কোয়ারেন্টাইনে থাকতে রাজি ছিল না। তাই সরকারের হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে।
সবকিছু বিবেচনা করে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এখনও নিচ্ছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। আইইডিসিআরের ভূমিকাও প্রশংসা রাখে। এ কথা বলতেই হয় যুদ্ধের শুরু ভালো মানে অর্ধেক বিজয়। এই কথার রেশ ধরে বলতে হয় বাংলাদেশ সঠিক পথেই হাটছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা’র সরাসরি তদারকির কারণে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পাড়েনি বাংলাদেশে। বিশ্বের উন্নত দেশের দিকে তাকালেই সেই পার্থক্য দেখতে পাই।
আমাদের দেশের সন্তান অর্থাৎ ঘরে সন্তান ঘরে এসেছেন, আপনারা এখন প্রবাসী নন। আপনারা আপনার দেশে এসেছেন।
কোভিড-১৯ যদি ইতালি, স্পেন, চীনের মতো মারাত্মক আকার ধারণ করে, তাতে আমাদের সবার-ই জীবননাশের আশঙ্কা থাকবে। সুতরাং আমরা কখনও এটা চাইতে পাড়ি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র মনোভাব আপনারা অবশ্যই বুঝতে পেড়েছেন, তিনি আপনাদের জন্য তাঁর সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রিয় মাতৃভূমিকে কোভিড-১৯ থেকে হেফাজত করতে। সুতরাং প্রবাসীদের প্রতি কেউ যাতে অযথা খারাপ আচরণ না করেন, সেই বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় শতর্ক রয়েছেন। আর আমাদের উচিত মানবিক মানুষ হওয়া। বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু।
মানুষ প্রকৃত বন্ধু চিনতে পারে যখন, সে কোন বিপদের মুখে পথিত হয়। বিপদে না পড়লে আসল বন্ধু চেনা যায়না। সুসময়ে বন্ধু বটে অনেকের হায়, অসময়ে হায় কেউ কারোনয়।
প্রবাসীদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব যেনো শুধু সু সময়ের বন্ধুত্ব না হয়, তাঁদের সাথে যেনো আমাদের অসময়ের বন্ধুত্বও হয়। আর না হয় আমাদেরকে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে কলঙ্কের ভাগীদার হতে হবে। সুতরাং আমি মনে করি এই বৈশ্বিক সংকটের সময় যদি আমরা একে অপরের প্রতি সহিষ্ণুতা দেখাতে পাড়ি তবেই আমরা সাকসেস হবো। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। আমাদের ভালোবাসা শুধুমাত্র লোক দেখানো নয়, সেটার প্রমাণ দেওয়ার জন্য পৃথিবীতে এখনই মোক্ষম সময়। সুতরাং এই পৃথিবী ভালোবাসায় গদ্যময়। বাংলাদেশের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় যাঁরা-ই প্রবাসী ভাই বোনেরা এসেছেন, তাঁদের সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমরা আমাদের সত্যিকারের ভালোবাসা প্রকাশ করবো। কোনো ঘৃণা নয়, কোনো অবজ্ঞা নয়, সবকিছু-ই ভালোবাসার বন্ধনে, তবেই তো আমরা সত্যিকারের মানুষ। ইতিমধ্যেই সরকারের সব পদক্ষেপে বাংলাদেশ অনেকটাই কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার পথে আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও প্রশংসনীয়। ডাক্তার, নার্সদের অবদান জাতি কোনোদিন ভুলতে পাড়বে না। সাংবাদিকদের ইতিবাচক সংবাদ প্রবাসীদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখছে। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করছে এবং প্রতিনিয়ত করোনার আপডেট পৌঁছে দিচ্ছে সকল নাগরিকের কাছে। আমাদের দেশটা ছোট্র কিন্তু জনসংখ্যা অধিক। আমাদের সম্পদের সীমাবন্ধতা থাকতে পাড়ে কিন্তু আমাদের ভালোবাসা, আমাদের আন্তরিকতার যেনো কোন মাপকাঠি না থাকে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি দিয়ে আজকের লেখার ইতি টানছি –
গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমন একটি বিশেষ জাতের মানুষ।
লেখক : কলামিষ্ট ও সাবেক সহ সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *