করোনা শনাক্তকরণ অ্যাপ তৈরি

জাতীয় স্বাস্থ্য

দাবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : আপনার করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কতটা রয়েছে-তা বলে দেবে অ্যাপ। শনাক্তকরণের এই অ্যাপটি তৈরি করেছে ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদ। স্মার্টফোনে এই অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই কিছু শারীরিক উপসর্গবিষয়ক প্রশ্নের হ্যাঁ-না উত্তরে ক্লিক করে যে কেউ করোনার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা নিতে পারবেন। এজন্য কম্পিউটার কিংবা মোবাইল চালনার ক্ষেত্রে এক্সপার্ট হওয়ার দরকার পড়বে না।
প্রাথমিক শনাক্তকরণের সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরামর্শও দেয়া হচ্ছে এই অ্যাপে। যদি সমস্যা কম বা মাঝারি আকারে হয় তবে দুইদিন পর আবার একই প্রকার টেস্ট করতে বলা হচ্ছে এবং বিশ্রামে থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। আর যদি মারাত্মক হয় তখন আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে। এই অ্যাপটি সবাইকে হাসপাতালে ভিড় জমাতে নিরুৎসাহিত করছে। শুধুমাত্র প্রকৃত করোনা উপসর্গধারী রোগীদের হাসপাতালে যেতে বলা হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই জনসচেতনতা ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদ। করোনা বাংলাদেশে হানা দেয়ায় একাধিক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে সংগঠনটি।
প্রথম দিক থেকেই করোনা সম্পর্কে সচেতনতা ও সতর্কীকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। দ্বিতীয় ধাপে তারা মাস্ক ও বিভিন্ন প্রকার সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করে। সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ ও বস্তিবাসীর জন্য। এসবের সঙ্গে বর্তমানে অব্যাহত আছে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকদের পিপিই, সামাজিক সংগঠন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে তারা।
রাজধানীর কলাবাগান, কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডি, হাজারিবাগ, ডেমরা, মতিঝিল, বংশালসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদের।
করোনাভাইরাস পরীক্ষার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও স্বীকৃত পদ্ধতি হচ্ছে আরটি-পিসিআর (জঞ-চঈজ), যাতে আরএনএ (জঘঅ) শনাক্ত করার মাধ্যমে সংগৃহীত নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়। নমুনা হিসেবে গলা থেকে সংগৃহীত লালা, নাসোফেফেরেঞ্জিয়াল সোয়াব (সর্দি) বা ক্ষেত্রবিশেষে কফ ব্যবহার করা হয়। এই টেস্ট না করেই কীভাবে শুধুমাত্র অ্যাপের মাধ্যমে করোনা টেস্ট সম্ভব-সংগঠনের আহ্বায়ক সরদার মাহমুদ হাসান রুবেলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উচ্চমাত্রার সংক্রামক নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশে এখনও মহামারি আকারে ছড়িয়ে না পড়লেও মানুষের আক্রান্ত বৃদ্ধিতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যারা নিজের অজান্তে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রয়েছেন বা ইতোমধ্যে যাদের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হচ্ছে, তারা পরীক্ষা করার জন্য সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানেই শরণাপন্ন হচ্ছেন। যাদের মধ্যে অনেকের সাধারণ জ্বরের লক্ষণ থাকলেও তারা করোনায় আক্রান্ত নয়। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ার কারণে অনেক আক্রান্ত ব্যক্তিরও চিকিৎসা দেরিতে শুরু করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত বিশেষজ্ঞরাও সংক্রমণ রোধে পরীক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন। তাই চাহিদার তুলনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমিত সক্ষমতার কারণেই আমরা এই অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছি। যেকোনো ব্যক্তি সাধারণ উপসর্গ বিশ্লেষণের মাধমে বাসায় বসে করোনার প্রাথমিক পরীক্ষা করতে পারবেন।
চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি আপ্লিকেশন মারাত্মক ডিটেক্ট করে এবং কোনো চিকিৎসক চিকিৎসা করাতে রাজি না হন, তাহলে আমরা ফোনেই রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এই সেবা দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, আপাতত এটিই আমাদের কাছে মুজিব জন্মশতবর্ষের প্রধান কার্যক্রম।’
এ কাজে কারো সাহায্য পাচ্ছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কারো কাছে সাহায্য চাইনি। তবে আমাদের কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. এস এ মালেক শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রকার সুরক্ষাসামগ্রী দিয়ে আমাদের সাহায্য করে চলেছেন এবং সবসময় আমাদের মনিটরিং করছেন।
‘যে সকল কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে খাদ্য সমস্যায় আছেন, সেসব কর্মহীন লোক (যেমন- ভিক্ষুক, ভবঘুরে, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যান গাড়িচালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার) যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে সংসার চালান, তাদেরকে আর্থিক/খাদ্য সহায়তা করার জন্য সংঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আর সমাজের যে শ্রেণির মানুষ রাস্তায় নেমে সাহায্য চাইতে পারে না কিন্তু সত্যিই অসুবিধার মধ্যে আছেস, সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছি।’
অ্যাপটির ডেভেলপমেন্টের কাজ কারা করছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অ্যাপটি নগর কমিটির আইসিটি বিভাগের দ্বায়িত্বে থাকা সদস্য মনোয়ার-উল-ইসলাম সজীবের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া দায়িত্বে ছিলেন লুৎফর রহমান পলাশ, এম মনসুর আলী, আনিস আহমেদ, নাফিস হোসেন দ্বীপ, পারভেজ নামির, ভূঁইয়া মো. শরীফ।’
বাংলা ভাষায় এই অ্যাপ থেকে সেবা পাওয়া যাচ্ছে। কাজটি মহানগর নেতৃবৃন্দের হলেও দেশের যে কোনো প্রান্তে এই অ্যাপটি ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
সংগঠনের আহ্বায়ক সরদার মাহমুদ হাসান রুবেল বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সংকটের সময়ে দেশের যুব শক্তির এগিয়ে এসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি আদর্শ উদাহরণ। সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্র, ডিজিটাল টেকনোলজি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং দেশের যুবসমাজের এক যৌথ ফসল এই অ্যাপটি। যা ভবিষ্যতে দেশকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে সাহায্য করবে।’


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *