অবরুদ্ধ অবস্থায় দায়িত্ব পালন নিরাপত্তারক্ষীদের

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : এই কয়দিনে আপনিই আসলেন খোঁজ নিতে, আর কেউ আসে নাই। আমরা কীভাবে আছি, কেউ জানেন না, এভাবেই অসহায়ের মতো কথাগুলো প্রতিবেদকের কাছে বলছিলেন কাওরানবাজার এলাকার একটি ভবনের নিরাপত্তারক্ষী আব্দুল গনি। সিলেটে পরিবার রেখে ঢাকায় দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। অবরুদ্ধ শহরে থাকার সমস্যা না হলেও খাবারের প্রচ- সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ভবনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তালা লাগানো গেটের ভেতর অবরুদ্ধ তারা। দায়িত্বস্থল থেকে কোথাও যাওয়ারও উপায় নেই তাদের। যারা কোম্পানির অধীনে শিফটের ডিউটি করেন, তাদের স্থান পরিবর্তন হলেও অনেকেই ২৪ ঘণ্টাই একই ভবনে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।
এদের কারও নিজের ভবনে রান্নার ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ নিরাপত্তারক্ষীর সেই ব্যবস্থা নেই। তাদের একমাত্র খাবারের উৎস ছিল হোটেল কিংবা দোকান। করোনা সংক্রমণরোধে সব হোটেল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। কারও কারও মালিক খাবার পাঠালেও, তা আনতে যেতে হচ্ছে কর্মস্থল থেকে অনেক দূরে।
নিরাপত্তারক্ষী আব্দুল গনি বলেন, ‘স্যার এই কয়দিনে শুধু আপনারেই দেখলাম আমাদের খোঁজ নিতে আসতে, এর আগে কেউ জিজ্ঞেস করে নাই। আমরা কোনও সাহায্যও পাই নাই। গ্লাভস-মাস্ক কিচ্ছু নাই। সকালে চিড়া খাই, আর মালিক খাওয়া পাঠাইলে তা খাই। অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। আজ আপনে জিজ্ঞেস করছেন, এই কয়দিনে কেউ তা করে নাই। ২৬ তারিখ থেকে আমাদের বিল্ডিং বন্ধ। এই কয়দিন কষ্ট করছি স্যার। পানি খাইয়া, চিড়া খাইয়াও থাকছি।
এসময় পাশেই থাকা অপর এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, মালিকরা তো বড়লোক, তারা কি আর ঘর থেইক্কা বাইর হয়। আমাদের বাড়িতে বউ বাচ্চা আছে। তাও আমাদের এখানে ডিউটি করতে হইতাছে।
নিউমার্কেট এলাকার একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষী রমজান আলী জানান, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে খাবারে প্রচ- সমস্যা শুরু হয়েছে। আশপাশের সব দোকান বন্ধ। কয়েকদিন শুধু চিড়া আর পানি খেয়েই থেকেছেন তিনি।
পান্থপথের একটি ভবনের নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, তারা খাবারের কষ্ট করছেন। মেস বন্ধ থাকায়, কেউ ঠিকমতো খেতে পারছেন না। সুরক্ষার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস আর মাস্ক আছে। এর বাইরে আর কিছু নেই তাদের কাছে।
পান্থপথ এলাকায় অপর এক ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এলিট ফোর্স সিকিউরিটির সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের এখানে গ্লাভস আছে, স্প্রে আছে। আর আমাদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ এখানেই রান্নার ব্যবস্থা আছে। এখানেই থাকার ব্যবস্থা আছে, তাই খুব একটা সমস্যা হয় না। অন্যান্য ভবনের থেকে আমাদের ভালো সুবিধা আছে। তবে সব ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদেরই অন্তত খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য মালিক ও কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *