ত্রাণসামগ্রীতে যুক্ত হলো মিল্কভিটার গুঁড়োদুধ

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে কর্মঝুঁকিতে থাকা দুস্থ মানুষের জন্য সরকারি ত্রাণ সামগ্রীর তালিকায় যুক্ত হলো মিল্কভিটার গুঁড়োদুধ। এখন থেকে ত্রাণ হিসেবে অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর সঙ্গে মিল্কভিটার গুঁড়োদুধও দেওয়া হবে। গত ৬ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে ৬৪ জেলার প্রশাসকদের ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে শিশু খাদ্য হিসেবে মিল্কভিটার গুঁড়োদুধ অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি জেলা এবং মহানগরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, জি টু জি পদ্ধতিতে কিনে মিল্কভিটার উৎপাদিত গুঁড়োদুঘ চলমান ত্রাণ কাজে ত্রাণসামগ্রী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না।
এর আগে চলমান সংকটের মধ্যে খামারিদের বাঁচাতে এবং জনগণের পুষ্টির চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্কভিটা) পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। পরে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব রেজাউল আহসানের মাধ্যমেও বিষয়টি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হয়।
সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলেছে, মিল্কভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপুও বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন। তিনি করোনার কারণে চলমান লকডাউনে খামারিদের দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরেন। এই পরিস্থিতিতে খামারিদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে মিল্কভিটার গুঁড়োদুধ ত্রাণসামগ্রীতে যুক্ত করার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, মিল্কভিটার এই পণ্যটির পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এটি ত্রাণে অন্তর্ভুক্ত করা হলে কারখানায় উৎপাদন সচল রাখা যাবে। তাই খামারিদের থেকে দুধ কেনাও অব্যাহত থাকবে। এতে খামারিদের পানির দরে দুধ বিক্রি করতে হবে না।
খামারিদের কথা বিবেচনা করে এবং শিশুদের পুষ্টির চাহিদাপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণে গুঁড়োদুধ অন্তর্ভুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক নির্দেশনা দেন বলে সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
ত্রাণে শিশুখাদ্য হিসেবে গুঁড়োদুধ যুক্ত করায় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মিল্কভিটাসহ এর সঙ্গে যুক্ত সারাদেশের খামারিরা। তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের দুগ্ধ শিল্প যে সংকটে পড়েছিল, তা দূর হবে। খামারিরা দুধের ন্যায্যমূল্য পাবে। জনগণের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে।
মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্মসচিব) অমর চান বণিক বলেন, আমরা খামারিদের কথা চিন্তা করে মিল্কভিটার দুধ ত্রাণসামগ্রীতে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা মিলেছে। এটি খামারিদের জন্য অনেক বড় সুসংবাদ। এটি না হলে খামারিরা পথে বসে যেতো। এরই মধ্যে তাদের অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারি আদেশে ৬৪ জেলার অনুকূলে এক কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিশু খাদ্যের জন্য। আমরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। জি টু জি পদ্ধতিতে তারা মিল্কভিটার নির্ধারিত মূল্যে গুঁড়োদুধ কিনতে পারবে। পরবর্তী বরাদ্দেও বিষয়টি যুক্ত থাকবে বলে আশা করছি। এই চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি।
করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সারাদেশে সরকারি সাধারণ ছুটি চলছে। এতে কার্যত লকডাউন হয়ে পড়েছে দেশ। এতে বিপাকে পড়েছেন দুগ্ধ খামারিরা। যে পরিমাণ দুধ তারা গরু বা মহিষ থেকে পাচ্ছেন তা বিক্রি করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ প্রতি লিটার দুধ ১০ টাকারও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ তাদের প্রতি কেজি দুধ উৎপাদনে ব্যয় এর তিন থেকে চার গুণ। আবার বিপুল পরিমাণ দুধও অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। যা ফেলে দিতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে খামারিদের কথা চিন্তা করে সাধারণ ছুটির মধ্যেও ঢাকা ডেইরি, বাঘাবাড়ি ও টেকেরহাটের উৎপাদন কারখানা সচল রেখেছে মিল্কভিটা। পণ্যের বিপণন সচল রাখতে অনলাইনে অর্ডারের ভিত্তিতে রাজধানীতে মিল্কভিটার পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়াও মিলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মিল্কভিটার অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তোফায়েল আহম্মদ বলেন, মিল্কভিটা একটি সমবায় ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এখানে আমরা খামারিদের বিনাসুদে গাভি কিনে দিয়ে থাকি। তারা এই গাভি লালন পালন করে তা থেকে প্রাপ্ত দুধের মূল থেকে গাভির মূল্য পরিশোধ করে। কিন্তু এই দুর্যোগে তাদের অনেকে বিপাকে পড়েছিলেন। ত্রাণসামগ্রীতে গুঁড়োদুধ যুক্ত করার ফলে তারা দুধের ন্যায্যমূল্য পাবেন। আমরা তাদের পর্যাপ্ত দুধ কিনতে পারবো।
মিল্কভিটা সূত্রে জানা গেছে, চলমান পরিস্থিতিতে দেশের অন্যান্য দ্গ্ধুজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে প্রতি লিটার দুধ কিনছে। অথচ মিল্কভিটা দুধ কেনার দাম না কমিয়ে বরং লিটার প্রতি দুই বেশি দিচ্ছে খামারিদের।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ত্রাণে গুঁড়োদুধ যুক্ত করা খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। তবে খামারি পর্যায়ে এই সুফল পেতে হলে মিল্কভিটার দুধ সংগ্রহ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।
যেসব পণ্য উৎপাদন করে মিল্কভিটা : বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা) উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে তরল দুধ, টোনড মিল্ক, ফ্লেভার্ড মিল্ক, লাবাং, মাঠা, মাখন, ঘি, ননীযুক্ত গুঁড়াদুধ, ননী বিহীন গুঁড়াদুধ, ক্যান্ডি চকলেট, আইসক্রিম, চকোবার, ললিজ, রসমালাই, মিষ্টি দই, টক দই, রসগোল্লা, কাঁচা সন্দেশ, প্যারা সন্দেশ, মোজারেলা চিজ।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *