ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী ৩ মে পর্যন্ত লক ডাউন সময়সীমা বাড়ালো ভারত। শুধু তাই নয়, আগামী এক সপ্তাহ অর্থাৎ, ২০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন আরো কঠোরভাবে পালনের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এই তথ্য জানান।

গত শনিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোট ১৩ জন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চার ঘণ্টার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ভারতের চলতি লকডাউনের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হবে।

তিনি এ দিন বলেন, ভারতবাসী প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদের মত করোনার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। কিন্তু চলমান এই বাস্তবতায় ভারতবাসীকে আরো ধৈর্য ধরতে হবে। যদিও তিনি এটাও বলেন, এক থেকে দেড় মাস আগে যেখানে অনেক দেশ ভারতের মত গ্রাফ ছিল সেই সমস্ত উন্নত দেশগুলোতে এখন ভারতের থেকে ত্রিশ কিংবা ৩৫ গুণ বেশি করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। তাই লক ডাউন এর বিকল্প কিছু নেই।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা ঠিক যে লঙ্ঘনের ফলে অর্থনীতিতে একটি সংকট তৈরি হয়েছে কিন্তু ভারতবাসীর জীবন এর থেকে অনেক বেশি মূল্যবান। সে কারণেই করোনার বিরুদ্ধে লড়তে সরকারকে এরকম সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে নিজস্বভাবে লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়েছে। এমনকি রাজ্যগুলো সর্বতোভাবে চেষ্টা করছে করনা মোকাবেলায়। কেন্দ্রীয় সরকার করোনার বিরুদ্ধে যেভাবে লড়ছে তার কিছু তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই ভারতে এক লাখেরও বেশি বেড রয়েছে, রয়েছে ৬০০ এর বেশি করোনা হাসপাতাল; কাজ করছে ২২০টি ল্যাব।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা শুরুতেই বলেন, যখন ভারতে ৫৫০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছে ঠিক তখনই আমরা ২১ দিনের লন্ডন ঘোষণা করেছি। সময়মত ওই পদক্ষেপ না নিলে বড় ক্ষতি হয়ে যেত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিনও বলেন, এবার আপনাদের কাছে সাতটি অনুরোধ করবো। সেটি হচ্ছে বাড়িতে যদি প্রবীণ এবং কোনো অসুস্থ ব্যক্তি থাকে তার দিকে খেয়াল রাখুন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। বাড়িতে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করুন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভারতের আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চলুন। এবং করোনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেয়া এবং নেয়ার জন্য সেতু নামের সরকারি অ্যাপ ইন্সটল করুন এবং অন্যকেও ইন্সটল করতে উৎসাহিত করুন। যতটা সম্ভব গরীব দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ান; তাদের অন্য বস্ত্র অর্থ দিয়ে সাহায্য করুন। এবং কোনো প্রতিষ্ঠান মালিক এবং দোকানের মালিক যাদের সঙ্গে অনেক কর্মী কাজ করেন তাদের এই সময় ছাটাই করবেন না এবং তাদের বকেয়া মিটয়ে দিন এবং সব শেষ তিনি বলেন দেশের যারা করোনা যোদ্ধা চিকিৎসক, মেডিকেল স্টাফ, সাফাই কর্মী, পুলিশ যারা এই মুহূর্তে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছেন তাদের সম্মান করুন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ভাষণের মধ্যভাগে বলেন এই চলমান লকডাউন এর মধ্যে আগামী এক সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার চূড়ান্তভাবে দেখতে চায়। তার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেইমতো প্রশাসনকেও অবহিত করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জানান।
এদিকে, ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ৩৩১ জনের। এতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৯ হাজার ২৪০ জনে।
দেশের মধ্যে যে রাজ্যগুলোতে সবচেয়ে বেশি করোনার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে সেগুলো হল, মহারাষ্ট্র (১,৯৮৫), দিল্লি (১,১৫৪), তামিলনাড়ু (১,০৭৫), রাজস্থান (৮০৪), মধ্যপ্রদেশ (৫৩২) এবং গুজরাট (৫১৬)।
গত রোববার দিল্লিতে আরও দশটি নতুন করোনাভাইরাস হটস্পটের ঘোষণা করা হয়েছে, এর ফলে দেশের রাজধানীতে মোট হটস্পটের সংখ্যা এখন ৪৩।