দ্বিগুণ পেঁয়াজের দাম

অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয়

কাচা মরিচ ২০ টাকা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে সংকট নেই তারপরও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত এক সপ্তাহে নিত্যপণ্যটির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে এখন কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে দাম। অন্যদিকে বাজারে কাচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে।
তাই অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে এখনই পাইকারি বাজারে অভিযানের চান সাধারণ ভোক্তারা।
জানা গেছে, করোনাভাইরাস আতঙ্ককে পুঁজি করে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে কারসাজির কারণে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ টাকার পেঁয়াজ বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। পরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মোবাইল টিম ও র্যাবসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এক যোগে পেঁয়াজের আড়ৎ-পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান চালায়। দাম কারসাজির অপরাধে জেল-জরিমানাসহ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। যার ফলে দাম নিয়েন্ত্রণে আসে।
কেজিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় নেমে আসে পেঁয়াজের দাম। এরপর আবারও গত সপ্তাহ থেকে অস্থির হতে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। ধাপে ধাপে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা।
মুগদার খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মিজান জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আজকে আড়তেই পাইকারি কেনা পড়েছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। গাড়িভাড়া খরচ মিলিয়ে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা পড়ে গেছে। তাই ৬০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তিনি।
পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অভিযোগ করে খুচরা এ বিক্রেতা বলেন, আড়তে দাম কম থাকলে আমরাও কম দামে বিক্রি করি। গত সপ্তাহে ৩৫ টাকাও বিক্রি করেছি। এখন কেনা বেশি তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।
দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মেসার্স আলী ট্রেডার্সের পরিচালক মো. সামসুর রহমান জানান, ভারতের পেঁয়াজ সরবারহ কম। দেশি পেঁয়াজ দিয়েই চাহিদা পূরণ হচ্ছে। কিন্তু করোনাবাইরাসের কারণে বিভিন্ন জেলায় প্রশাসন ঠিক মতো হাট বাজার বসতে দিচ্ছে না। ফলে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবারহ কম। এছাড়া পরিবহন ভাড়াও আগের চেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে দাম বেশি।
এদিকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আবু সাইদ নামের এক ক্রেতা বলেন, এখন পেঁয়াজের মৌসুম। বাজারে পেঁয়াজের কোনো অভাব নেই। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা দিয়ে কিনেছি, আজকে ৬০ টাকা। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ২০ টাকা বেশি দামে কিনতে হলো। কারণ কী? সুযোগ পেলেই তারা (ব্যবসায়ীরা) দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই সরকারের উচিত এখনই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া। তা না হলে আবারও সুযোগ নেবেন অসৎ ব্যবসায়ীরা।
অভিযানের বিষয়ে ভোক্তা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার ম-ল বলেন, অধিদফতরের ডিজির নির্দেশনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, সরবারহ নিশ্চিত ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতনতায় প্রতিদিনই বিশেষ অভিযান চলছে। আজকেও রাজধানীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি মোবাইল টিমসহ মোট ৯টি টিম বাজার অভিযান করছে। হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। আমরা আজকে পাইকারি পেঁয়াজের বাজার বিশেষ অভিযান করবো। কেউ অযৌক্তিক দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির এ বিশেষ সময়ে ভোক্তা অধিদফতরের কর্মীদের সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাই সরকারের আদেশ ও অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশনায় প্রতিদিন অভিযান করছি। পণ্য বা সেবা ক্রয়ে ভোক্তারা কোনো ধরনের হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হলে আমাদের ভোক্তা অধিদফতরের হটলাইন -১৬১২১ নাম্বারে কল করে জানান। সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত রফতানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে অস্বাভাবিক বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। রেকর্ড ২৫০ টাকায় পৌঁছে যায় পেঁয়াজের কেজি। পরে জরুরি আমদানি ও সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ এবং নতুন পেঁয়াজ বাজারে ওঠায় প্রায় ৫ মাস পর নিয়ন্ত্রণে আসে পেঁয়াজের বাজার। সামনে প্রবিত্র রমজান মাস। প্রতিবছরই রমজান মাসকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের দাম বাড়ে। তাই এখন যদি সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আবার অস্থির হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
মরিচের কেজি ২০ টাকা : ‘আধা কেজি ১০, এক কেজি ২০ টাকা। পানির দামে লইয়া যান মরিচ।’ এভাবেই হাঁক ডেকে রাস্তার পাশে অস্থায়ী ভ্যানে করে মরিচ বিক্রি করছেন রহিম মোল্লা নামের এক বিক্রেতা। মরিচের সঙ্গে করলা আর বেগুন বিক্রি করছেন তিনি।
রাজধানীর মুগদা এলাকায় এ সবজি বিক্রেতা বলেন, ভাইরাসের (করোনাভাইরাস) কারণে রাস্তায় লোক কম। মাল আছে ক্রেতা নাই। তাই দামও কম। কাঁচামরিচ ২০ টাকা। করলা ২০ টাকা আর বেগুন ১৫ টাকা। এর চেয়ে আর কত কম দাম চায় মানুষ?’
মানুষ কম বিক্রিও কম জানিয়ে এ সবজি বিক্রেতা জানান, ভোরে গিয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে মাল (সবজি) নিয়ে আসি। এরপর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে বিক্রি করতে হয়। কারণ ১টার পর থেকেই রাস্তা খালি হতে থাকে। ২টার পর পুলিশ আর রাস্তায় থাকতে দেয় না। এ সময়ের মধ্যে সব মাল বিক্রি করতে হয়।
তিনি বলেন, কাঁচামাল ঘরে রাখা যায় না, রাখলে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তাড়াতাড়ি বিক্রির জন্য কম মাল আনি। তারপরও বিক্রি হয় না বলে জানান এ বিক্রেতা।
করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। চলছে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটি। খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। ফলে বাজারগুলোতে আগের তুলনায় ক্রেতাদের আনাগোনা কম। তাই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির দাম কম বলছেন বিক্রেতারা।
শুধু কাঁচামরিচ, করলা বা বেগুন নয়, কমেছে সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম। তবে আগের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু। কয়েক দফা বেড়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। রাজধানীর মতিঝিল, খিলগাঁও, মুগদা, মানিকনগর, ফকিরাপুলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বুধবার বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ও শিম ২০ টাকা, টমেটো ১৫ থেকে ২০ টাকা, মুলা ১০ থেকে ১৫ টাকা, পটল ২০ টাকা, শসা ও খিরা ১৫-২০ টাকা, ধুন্দল, ঝিঙে ২০, পেঁপে ২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার পিস ১৫-২০ টাকা, বরবটি ২৪ থেকে ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ১৫-২০ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০-৪০ টাক। তবে আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু। প্রতি হালি মানভেদে লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা।
প্রতি আঁটি লাউ শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, লাল শাক, পালং শাক, পুঁই শাক ১০ টাকা আর ডাটা শাক ১০ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে গত কয়েকদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, আজকের বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।
খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মিজান জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আজকে আড়তেই কেনা পড়েছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। গাড়িভাড়া খরচ মিলিয়ে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা পড়ে গেছে। কেজি ৬০ টাকা বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, আড়তে দাম কম থাকলে আমরাও কম দামে বিক্রি করি। গত সপ্তাহে ৩৫ টাকাও বিক্রি করেছি। এখন কেনা বেশি তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।
ক্রেতা কম থাকায় বাজারে সব ধরনের মাছের দাম আগের চেয়ে কম। কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে বলে দাবি করছেন মাছ বিক্রেতারা।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি রুই আকারভেদে ২৫০-৩৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০-১৬০, আইড় ৩৫০-৪০০ টাকা, মেনি মাছ ৩৫০- ৪০০, বাইলা মাছ প্রকারভেদে ৩৬০-৫০০ টাকা, টেংরা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, বাইন মাছ ৪০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৫০০-৬০০ টাকা, পুঁটি ১৮০-২০০ টাকা, পোয়া ৩৬০-৪০০ টাকা, পাবদা ৩০০-৪০০ টাকা, বোয়াল, শিং, দেশি মাগুর ৪০০-৫০০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, পাঙ্গাশ ১২০-১৫০ টাকা, চাষের কৈ ১৮০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। আর এক কেজি ওজনের বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়।
গরুর মাংস কেজি ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা, ছাগল ও ভেড়ার মাংস ৬৫০ এবং খাসির মাংস ৭০০ টাকা। এছাড়া ব্রয়লার মুরগির ১১০ থেকে ১২০ টাকা, কক মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি আর ফার্মের লাল ডিম প্রতি হালি ২৪-২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আবু সাইদ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘ভাইরাসের কারণে বাইরে বের হই না। কিন্তু খাবার তো খেতে হয়। মাছ-সবজি কিনতে এসেছি। সবজির দাম কম। তবে মাছের দাম তেমন কমেনি।’
পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ক্রেতা বলেন, এক সপ্তাহে ব্যবধানে আবারও ২০ টাকা বেশি দামে কিনতে হলো। কারণ কী? সুযোগ পেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। সরকারকে বিষয়টি এখনই দেখা উচিত বলেন এ ক্রেতা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *