নিলয় ধর, যশোর সংবাদদাতা: মণিরামপুরবাসীর ভালবাসায় অভিভূত হলেন এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। শুক্রবার দুপুরে মণিরামপুর উপজেলা সম্প্রসারণ কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন শেষে এক সুধী সমাবেশে তিনি এ ভালবাসার অনুভূতি প্রকাশ করেন। গাড়িবহর নিয়ে যশোর থেকে সড়ক পথে উদ্বোধনী স্থলে আসার পথে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ও পৌর শহরে মন্ত্রীকে বরণ করতে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান। এসময় ব্যবসায়ীমহলসহ মন্ত্রীর গাড়ি বহরে সর্বস্তরের জনতা পুষ্প বৃষ্টি ছিটিয়ে ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করেন।
ভবন উদ্বোধন শেষে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যাখান করেছেন। আগামীতেও প্রত্যাখানের মধ্যে দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের যাত্রা অব্যাহত থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে উন্নত দেশ গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহের সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসানের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া সমাবেশে প্রধান অতিথি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু দুঃখ, দুর্দশাগ্রস্ত বাংলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার একক নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিলো। এমনি এক ক্লান্তিকালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করেছেন। দীর্ঘ ২১ বছর মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের পর ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ৪৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন। ১১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে বাড়িয়ে ১৬শ’ মেগাওয়াটে উন্নিত করেছিলেন।
সহকারী কমিশনার ভূমি সাইয়েমা হাসানের পরিচালনায় প্রধান অতিথি বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের (১৯৯১-৯৬) ও ২০০১-০৬) কথা তুলে ধরে বলেন, সারের জন্য ১৪ জন কৃষককে সেদিন গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো। কানসার্টসহ সারাদেশে বিদ্যুতের জন্য মানুষ রাস্তায় নেমেছিলো। মানুষের নায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এসএম কিবরিয়া, মমতাজ উদ্দীনের মত জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রাণ দিতে হয়েছে। ওই জোট সেদিন ক্ষমতায় এসে দেশকে লুটের সিন্ডিকেট করেছিলো।
তাই ২০০৮ সালে ফের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সার, বীজ, কীটনাশক কৃষকের দৌর গড়ায় পৌঁছে দেয়। দেশ আবার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। দেশেকে উন্নত করতে শিল্পায়নের বিকল্প নেই। এমন ধারণা নিয়েই বিদ্যুৎ, গ্যাস উৎপাদনে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এ সরকার। দেশে এখন ২২ হাজার বিদ্যুত উৎপাদনের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিল্পায়নের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি গঠনে সব শ্রেণির মানুষের সন্তানদের শতভাগ শিক্ষিত করতে বিনামূল্যে বই ও ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়েকে জাতীয়করণ করেছেন এবং তারা নূন্যতম ২৫ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির কথা তুলে দলে বলেন, আগামীতে আরো বেতন বৃদ্ধি হবে। এক সময় গার্মেন্টস কর্মীরা নাম মাত্র মজুরি পেতেন। আজ তারা ন্যুনতম ৮হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি মণিরামপুর পৌরসভাকে ‘খ’ শ্রেণি থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নতি করার ঘোষণা দেন। এর আগে বক্তব্যের শুরুতে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রম হারানো কথা স্মরণ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় আন্দোলনে সংগ্রামে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আত্মত্যাগের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করেন।
উপজেলা চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন একই মন্ত্রালয়ের প্রতিমন্ত্রী মণিরামপুরের সন্তান স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি। বক্তব্য রাখেন এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় সরকার যশোরের উপ-পরিচালক নুরু-ই এলাহী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দীন শিকদার, জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান, একান্ত সচিব জাহিদ হোসেন চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন, প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব কবির খান প্রমুখ।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2024/05/WhatsApp-Image-2024-05-31-at-21.07.07_c7f123fd.jpg)