করোনা সংক্রমণের ৭ মাস

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী সারাদেশ স্বাস্থ্য

আহমেদ হৃদয় : করোনাভাইরাস বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মহামারীর আকার ধারন করেছে; যা বর্তমানে পুরো বিশ্বকে গ্রাস করে নিয়েছে। করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ নামক এই রোগটি বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে এটি বৈশ্বিক মহামারীর রূপ নিয়েছে। এই ভাইরাসটি পথম উৎপত্তি হয় চীনে। তারপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। চলতি বছরের গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত করা হয়। এবং এই ভাইরাসে বাংলাদেশে প্রথম মৃত্যু ঘটে তার ঠিক দশ দিন পর অর্থাৎ ১৮ মার্চ। এদিকে মার্চ মাসের ৮ তারিখ থেকে এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত করা হয় ২১৮ জন। এর এক মাস পর মে মাসের ৮ তারিখে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ১৩৪ জনে। পরবর্তী জুন মাসের ৮ তারিখে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮ হাজার ৫০৪ জনে। পরের মাসের জুলাইয়ের ৮ তারিখ পর্যন্ত শনাক্ত করা হয় ১ লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জনকে। আগস্টের ৮ তারিখ পর্যন্ত শনাক্ত হয় প্রায় দিগুণ, অর্থাৎ ২ লাখ ৫৫ হাজার ১১৩ জন। সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫১ জন। এবং গতকাল ৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে সর্বমোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ১৫১ জন। আর শুরু থেকে গতকাল ৭ অক্টোবর পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২৬ হাজার ৮০৮টি।
এদিকে মার্চের ৮ তারিখ থেকে এপ্রিলের ৮ তারিখ পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্যা ছিল ২০ জন। এক মাস পরেই সেই মৃত্যু সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২০৬ জনে। পরবর্তী এক মাসেই মৃত্যুর সংখ্যা এক লাফে বেড়ে যায় চার গুণ। অর্থাৎ জুন মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্যা ৯৩০ জনে চলে যায়। জুলাই মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত সেই মৃত্যু সংখ্যা দিগুণ হয়ে যায়; সুতরাং মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৯৭ জনে। পরের মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্যা ৩ হাজার ৩৬৫ জনে চলে যায়। সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখ পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৫২ জন। আর গতকাল ৭ অক্টোবর পর্যন্ত মহামারি করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে মোট মৃতের মধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ২০০ (৭৭ দশমিক ২১ শতাংশ) ও নারী ১ হাজার ২৪০ জন (২২ দশমিক ৭৯ শতাংশ)। তবে বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে সুস্থতার হারও। এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত সুস্থতার সংখ্যা ৩৩ জন হলেও তার পরের মাসেই সুস্থতার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১০১ জনে। পরবর্তী মাসগুলোতে যথাক্রমে সুস্থতার সংখ্যা ১৪ হাজার ৫৬০, ৮০ হাজার ৮৩৮, ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৪, ২ লাখ ২৯ হাজার ২৫১ জন। এবং গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট সুস্থতার সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩১ জন।
এদিকে বাংলাদেশে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মহামারী পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিল এবং জুন মাসে সংক্রমণটি তীব্র আকার ধারণ করেছিল। আগস্ট মাস থেকে নতুন রোগীর সংখ্যা কমতে দেখা গিয়েছিল এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও জনগণের মধ্যে শৈথিল্য দেখা গিয়েছিল। ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ‘কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’ জানিয়েছে যে, তারা এই রোগের সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। ১৯ আগস্ট পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিসংখ্যান অনুসারে কোভিড-১৯ রোগে বাংলাদেশে সর্বোমোট মৃত্যু হয়েছে ৩,৭৮১ জনের যার মধ্যে পুরুষ ২,৯৮৭ জন (৭৯ %) এবং নারী ৭৯৪ জন (২১ %)। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহ বিভাগে মৃত্যুসংখ্যা যথাক্রমে: ১,৮১২ (৪৭.৯২ %); ৮৫০ (২২.৪৮ %); ২৫০ (৬.৬১ %); ৩০৯ (৮.১৭ %); ১৪৭ (৩.৮৯ %); ১৭৪ (৪.৬০ %); ১৫৭ (৪. ১৫ %); ৮২ (২.১৭ %)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২৩ জুলাই-এর তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে সুস্থ হওয়ার হার ৫৫.১৬%, মৃত্যুর হার ১.৩% এবং আইসোলেশনে (রোগ-অন্তরণ) আছে ৪৩.৫৪%। ওয়ার্ল্ডোমিটারের ২৩ জুলাই-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ১০ লাখে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬,৫৪৮ জনের।
৬ জুন প্রকাশিত দ্য ইকোনমিস্ট এর একটি প্রতিবেদনে, বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক জন ক্লেমেনস দাবি করেছেন যে, শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই তখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭.৫ লাখের’ও বেশি ব্যক্তি। কম সংখ্যক পরীক্ষা করতে পারার কারণে, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সরকারি পরিসংখ্যানে যা বলা হয়েছে; করোনাভাইরাস রোগে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যাটি তার চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় রোগটির বিস্তার মোটামুটি শ্লথ করতে পেরেছে এই দেশগুলো কিন্তু থামাতে পারেনি, যা লকডাউন প্রত্যাহারের পর আবারও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এদিকে কোভিড-১৯ বিষয়ে, বাংলাদেশ বেশ বড় রকমের একটি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছ; যেহেতু এটি পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। বহুসংখ্যক বাংলাদেশি ইতালিতে বসবাস করতেন যা কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ঘনসন্নিবিষ্ট ক্যাম্পে রাখার কারনে মহামারী ঠেকানো বাংলাদেশের জন্য কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে কম পরীক্ষা করাতে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কম পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশ হিসেবে যথেষ্ট পরিমাণ পরীক্ষা বাংলাদেশে করা হয়নি। সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর লক্ষণসহ অনেকসংখ্যক রোগীর মৃত্যুসংবাদ এসেছে যার মধ্যে কিছুসংখ্যক ভুয়া এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বলে প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অজানা কোন কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এমন রোগীদের কথা জানায়। ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করেছিল যে, করোনাভাইরাস চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের জনগণের মধ্যে গুচ্ছ আকারে শ্বাসকষ্ট সম্পর্কিত রোগের সৃষ্টি করছে। ৩০ জানুয়ারী’তে এই রোগের প্রাদুর্ভাবকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১১ই মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ রোগের সেই প্রাদুর্ভাবটিকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছিল।


বিজ্ঞাপন