দশ টাকার পুরাতন নোটের ঐতিহাসিক আতিয়া মসজিদ

অর্থনীতি

টাঙ্গাইলের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি আতিয়া জামে মসজিদ। বাংলার সুলতানি এবং মোগল স্থাপত্যশৈলী ও বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে এটি নির্মিত। আতিয়া মসজিদ যুগসন্ধিলগ্নের মসজিদ-স্থাপত্য ও নিদর্শনরূপে পরিচিত। বাংলাদেশে যে সকল ঐতিহ্যবাহী মুসলিম স্থাপত্য রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এ মসজিদটি অন্যতম।


বিজ্ঞাপন

আতিয়া মসজিদ টাঙ্গাইল শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত। বছরজুড়ে প্রচুর দর্শনার্থী আগমন করেন মসজিদটি দেখতে।

মসজিদের নামকরণ ও অন্যান্য
‘আতিয়া’ শব্দটি আরবি ‘আতা’ শব্দ থেকে উৎপত্তি, অর্থ হলো ‘দান’। পঞ্চদশ শতকে এ অঞ্চলে আদম শাহ্ বাবা কাশ্মিরী নামে বিখ্যাত এক সূফি ধর্মপ্রচারক আগমন করেন। ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন।

দশ টাকার পুরাতন নোটের ঐতিহাসিক আতিয়া মসজিদ
জাতীয় ইতিহাস-তথ্যের বরাতে জানা যায়, এই পুণ্যবান ব্যক্তির কবরও এখানেই অবস্থিত। তিনি বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হুসায়েন শাহ কর্তৃক আতিয়ার জায়গিরদার নিযুক্ত (১৫৯৮ সালে) হয়েছিলেন। ওই সময় ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয়ভার বহনের জন্য কররানি শাসক সোলাইমান কররানির কাছ থেকে বিশাল একটি এলাকা ‘ওয়াকফ্’ হিসাবে পান। এলাকাটি তাকে দান করা হলে, পরবর্তীতে এ দান বা ‘আতা’ থেকে এ পরগণার নাম ‘আতিয়া’ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠাতা ও সময়কাল
শাহ্ কাশ্মিরীর শেষ বয়সে তার পরামর্শে অনুরক্ত সাঈদ খান পন্নীকে মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীর আতিয়া পরগণার শাসন কর্তা নিয়োগ করেন। সাঈদ খান পন্নীই করটিয়ার বিখ্যাত জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন।

স্থপতি ও সংস্কার
এটি দেলদুয়ার উপজেলা তথা টাঙ্গাইল জেলার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। সুলতানি ও মোগল আমলের স্থাপত্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে নির্মিত এ মসজিদের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে নিযুক্ত ছিলেন প্রখ্যাত স্থপতি মুহাম্মদ খাঁ। মসজিদটি নির্মাণের পর ১৮৩৭ সালে রওশন খাতুন চৌধুরী ও ১৯০৯ সালে আবুল আহমেদ খান গজনবি সংস্কার করেন।

অবকাঠামো ও স্থাপত্যশৈলী
বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন সূত্রে জানা যায়, মসজিদটির কিবলাকোটা ও বারান্দাসহ সার্বিক পরিমাণ ১৭.৭০ মিঃ ১২ মিটার। মসজিদের দেয়াল ২.২২ মিটার প্রশস্ত। বারান্দা ৩.৮২ ৭.৫ মিটার। সুলতানি ও মোগল আমলের স্থাপত্যরীতির সুষম সমন্বয় এ মসজিদে দেখা যায় চারকোণে ৪টি বিরাট অষ্টকোণা আকৃতির মিনার রয়েছে। মিনারগুলো ছাদের অনেক উপরে উঠে ছোট গম্বুজে শেষ হয়েছে।

বাংলার স্থাপত্য-কীর্তিগুলো মূলত ইটের তৈরি। তাই বাংলার স্থাপত্য এবং তার অলংকরণ সবই বিকশিত হয়েছে ইটের মাধ্যমেই। আতিয়া মসজিদও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এ মসজিদে সুলতানি স্থাপত্য-বৈশিষ্ট্যে রয়েছে দারুণভাবে। বক্রাকার কার্নিশে, দ্বিকেন্দ্রিক সুচালো খিলান, গম্বুজ নির্মাণে বাংলা পান্দানতিভ ব্যবহার এবং উল্লেখযোগ্যভাবে পোড়ামাটির টেরাকোটা নক্শালংকারে চমৎকারিত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

আতিয়া মসজিদের গম্বুজের নির্মাণশৈলীতে দেখা যায় কিবলা কক্ষের উপর বড় গম্বুজটি খিলানভিত্তিক নির্মাণ পদ্ধতিতে (স্কুইঞ্জ পদ্ধতি) এবং বারান্দার ওপর ছোট তিনটি গম্বুজ ‘বাংলা পান্দান্তিভ’ পদ্ধতিতে নির্মিত। পরবর্তীতে সংস্কারের সময় গম্বুজগুলো পলেস্তরা দিয়ে সমান করে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু মসজিদ নির্মাণের সময় এমন ছিলো না। আদিতে গম্বুজগুলো পলকাটা বা ঢেউতোলা ছিল। মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে সুড়ঙ্গপথ সম্বলিত ভূগর্ভস্থ কবর নিয়ে নানা এলাকায় নানান ধরনের মতামত রয়েছে।


টাঙ্গাইল অঞ্চলে প্রাপ্ত মূল শিলালিপিগুলোর মধ্যে আতিয়া জামে মসজিদে প্রাপ্ত একটি আরবি একটি ফারসি শিলালিপি রয়েছে। এসবের মাধ্যমে মসজিদের নির্মাতা, সময়কাল ও পূর্বের কিছু অসংতির সমাধান পাওয়া যায়। বিদায়ী সুলতানি আর নবাগত মোগল উভয় রীতির সংমিশ্রণে অপূর্ব এক মুসলিম স্থাপত্য, যা দৃষ্টিনন্দন এবং এ অঞ্চলে বিরল।

দশ টাকার পুরাতন নোটে
পুরাতন দশ টাকার নোটের ডানদিকে আতিয়া মসজিদের ছবি রয়েছে। তবে আজকাল দশ টাকার পুরাতন নোটটি তেমন দেখা যায় না। কারো কাছে সংগৃহীত থাকলে মাঝে-মধ্যে দেখা যায়।

যেভাবে যাতায়াত
টাঙ্গাইল শহর থেকে সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহন যোগে সহজে আতিয়া মসজিদ যাওয়া যায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *