বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী ঘোষণা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন

জিয়া-এরশাদ-খালেদা সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নে কখনো উদ্যোগ নেয়নি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নে কখনো উদ্যোগ নেননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বিজিবি এয়ার উইংয়ের জন্য ক্রয়কৃত দুটি এমআই-৭১ই হেলিকপ্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। এয়ার উইং উদ্বোধনকালে বিজিবিকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিমান দুটি উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করেন সীমান্ত সুরক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনীকে। রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বিজিবি এয়ার উইং-এর দুটি অত্যাধুনিক এমআই ১৭১-ই হেলিকপ্টার ‘বীর শ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ’ এবং ‘বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ’-এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিবি এখন অন্যান্য বাহিনীর মতো ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত হয়েছে। আজকে থেকে বিজিবি ত্রিমাত্রিক বাহিনী। বিজিবিতে হেলিকপ্টার সংযোজনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজিবি এয়ার উইংয়ের এই যাত্রা বিজিবির সার্বিক কর্মকা-কে আরও গতিশীল করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
বিজিবি-এর জনবল বাড়াতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাহিনীতে তিনটি ধাপে আরও ১৫ হাজার জনবল বৃদ্ধির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপে চার হাজার ২৮২ জন জনবলের সমন্বয়ে একটি রিজিয়ন সদর দফতর, একটি সেক্টর সদর দফতর এবং চারটি ব্যাটালিয়ন, একটি কে-নাইন ইউনিট, একটি রিজিয়ন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, একটি স্টেশন সদর দফতর, একটি গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সৃজনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা ২০২২ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
আর দ্বিতীয় ধাপে মোট পাঁচ হাজার ৭৮২ জন জনবলের সমন্বয়ে একটি সেক্টর, পাঁচটি ব্যাটালিয়ন, একটি রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন, একটি কে-নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং পাঁচটি বর্ডার গার্ড হাসপাতালের জনবল বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে।’এছাড়া, বিজিবির প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ায় বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরেকটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করার পরিকল্পনার কথা জানান শেখ হাসিনা। সীমান্ত এলাকা নিয়ে সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকা নির্বাচন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩২৮ কিলোমিটার সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরাসরি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল মোবাইল রেডিও (ডিএমআর) নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে বিজিবি সদর দফতর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বিওপি এবং বিওপি পরিচালিত টহলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে বিজিবি-এর অপারেশনাল সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। যেকোনও সময় যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।’ তাছাড়া, চারাচালান প্রতিরোধে টহল কার্যক্রমে গতিশীল করতে ইতোমধ্যে ১২০টি অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল ক্রয় এবং সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি’র সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১২টি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) এবং ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল ক্রয় করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
মাদক কারবারিদের ধরতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিবি-এর বহরে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি হাইস্পিড বোট এবং দুইটি পন্টুন সংযুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া বিজিবি’র জন্য অত্যাধুনিক দুইটি ফাস্ট ক্রাফট, সমুদ্রগামী সাতটি অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোট, দুইটি মেরিনা এবং দুইটি ট্রেইলার ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবন সংলগ্ন জলসীমায় কার্যকরী টহল পরিচালনার পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে এসব উন্নত নৌযান মোতায়েন করে নাফনদী ও সাগর উপকূলে ইয়াবা পাচার ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি অধিক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
আর সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার জন্য বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত অতি পুরাতন ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রের পরিবর্তে আধুনিক, যুগোপযোগী ও কার্যকরী ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল ক্রয় করা হচ্ছে।’ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় নতুন ৬২টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৪০১ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমান্ত ইতোমধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় আরও বিওপি স্থাপন করা হবে বলে জানান সরকার প্রধান।
অনুষ্ঠানে পিলখানায় বিজিবি সদর দফতর প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।


বিজ্ঞাপন